Home ইসলাম দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

একজন শ্রমিকের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন হলো তার মজুরী। সে কেবলমাত্র খেয়ে পরে বাঁচার তাকিদেই সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত শরীরের রক্ত পানি করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে।

মানুষের মৌলিক প্রয়োজন হলো অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান। আর তা লোকভেদে বিভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। একজন ডাক্তার, প্রকৌশলী বা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মৌলিক প্রয়োজন প্রায় সমান। তবে এদের এমন কিছু প্রয়োজন রয়েছে, যা সাধারণ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। কাজেই প্রয়োজন বোধে ইসলাম তার সেই প্রয়োজন মেটাতে কার্পণ্য করেনা। অর্থাৎ শ্রমিকের যোগ্যতা এবং মৌলিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে ইনসাফপূর্ণ মজুরী দেয়। এমন কি একজন শ্রমিকের পোষ্যের উপর দৃষ্টি রেখেও তার বেতন নির্ধারণ করা হয়।

ইসলামের সোনালী যুগে শ্রমিকের পারিশ্রমিক তার কাজের ধরণ ও সময়ের উপর নির্ধারণ করা হতো। তাদেরকে পারিশ্রমিক এমন দেয়া হতো, যেন তা দ্বারা প্রয়োজন পুরণের পর বিপদ-আপদ ও জরুরী প্রয়োজন মোকাবেলা করতে পারে এবং বৈধ আমোদ-প্রমোদ তথা চিত্ত বিনোদনও করতে পারে। ইসলামের সোনালী দিনে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রে বেতন ভাতার তেমন একটা পার্থক্য ছিল না। যোগ্যতার পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণিমতের মাল মুজাহিদদের মধ্যে সমহারে বন্টন করা হতো।

ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রাযি.) এবং দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাযি.) সাধারণ নাগরিকের সমান ভাতা গ্রহণ করতেন। হযরত উমর (রাযি.) খলীফা হয়ে এক ভাষণে বলেন, “আমি যদি স্বচ্ছল হই তবে কোনই পারিশ্রমিক নেব না। আর যদি অস্বচ্ছল হই তাহলে ন্যায্য পারিশ্রমিক নেব।” তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রাযি.) ধনী ছিলেন বিধায় তিনি কোন ভাতা গ্রহণ করতেন না। চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাযি.) সাধারণ ভাতা গ্রহণ করতেন।

ইসলাম হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ, ইনসাফ-বেইনসাফ, অধিকার-অনধিকার প্রভৃতির দিকে দৃষ্টি রাখে, আর তাই শ্রমিকের ন্যায়-অন্যায়, অধিকার, স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষা, দায়িত্ব কর্তব্য পালন ও নিরাপত্তা প্রদান করে।

ইসলাম শ্রমিক মালিক ভাই ভাই ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি অধিকার দিতে চায়। বলা হয়েছে-“তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে, তোমরা যে কাপড় পরিধান করবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে ও পরিধান করাবে। যা তাদের জন্য কষ্টকর তা করাবে না।” (বুখারী শরীফ)।

আরো বলা হয়েছে- “শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।”

ইসলামী সরকার বেকার, পঙ্গু, অসহায়, আশ্রয়হীন, বিধবা, রোগী, চাকুরীচ্যুতদের খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, বাসস্থান, বিয়ে শাদী ও লেখা পড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলাম শ্রমিকদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশ দিতে চায়। হাদীস শরীফে এসেছে “শ্রমিককে তার শ্রমের উৎপাদিত পণ্যের অংশ দাও। কেননা, আল্লাহ্ তায়ালা শ্রমিককে কোন অবস্থাতেই বঞ্চিত করতে চান না।”

উল্লেখ্য, পুঁজিবাদী শ্রমনীতিতে লভ্যাংশ মালিকের আর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লভ্যাংশ কমরেডদের। আর ইসলামী শ্রমনীতিতে মালিক শ্রমিক উভয়েরই। ইসলাম শ্রমিককে লভ্যাংশ প্রদান করে বিধায় শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠান বা কারখানাকে অন্যের মনে করে না বরং আপন মনে করে। কেননা, সে জানে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি অবনতির সাথে তার স্বার্থ জড়িত আছে। আর তাই সে মনে প্রাণে উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট হয়।

বর্তমানে আমাদের দেশ ও ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শ্রমিকদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার পুঁজিবাদী শ্রমনীতির হাতে বন্দী। স্মর্তব্য পুঁজিবাদী মালিকেরা শ্রমিকদেরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলেও খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রতি ন্যায্য দৃষ্টি রাখে না অর্থাৎ তাদের ন্যায্য বেতন তো দেয় না। এমনকি তাদের সুখ-সুবিধার দিকেও নজর রাখে না।

সঙ্গত কারণে কম বেতনভুক্ত শ্রমিক কর্মচারিরা রাতদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও অনাহারে, অর্ধাহারে ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। ছেলে মেয়েদেরকে পেটপুরে খেতে দিতে পারে না। তাদের সখ-আহ্লাদ পুরণ করতে পারে না। উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে না। অর্থাভাবে সন্তানদের সৎপাত্রে বিয়ে শাদীর ব্যবস্থা করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে মালিকের প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ, অসন্তোষ অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক অশান্তির কারণে শ্রমিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের নির্ধারিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে না। আর তাই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন তথা আয়ও বৃদ্ধি পায় না। আর যেটুকুই আয় হয় তার সিংহভাগই মালিকের পকেটে চলে যায়।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল গরীব দেশ। এখানে সম্পদের স্বল্পতা, জাতীয় আদর্শ হীনতা, সুষ্ঠূ পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভাব। সর্বোপরি কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রের কারণে এবং রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যা দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, অথচ কৃষকদেরকে প্রয়োজন মত উপযুক্ত বীজ, সার, কৃষি সরঞ্জাম, কীটনাশক, প্রয়োজনানুপাতে সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দেয়া হয় না। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। এদিকে সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে দেশে একের পর পর কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কাজেই এ মুহূর্তে দেশের সার্বিক উন্নতি চাইলে ইসলামী শ্রমনীতি চালু করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।