Home লাইফ স্টাইল জীবনকে সাফল্যের চূড়ায় নিতে হলে যা এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই

জীবনকে সাফল্যের চূড়ায় নিতে হলে যা এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই

।। কাজী হামদুল্লাহ ।।

‘লক্ষ্যহীন মানুষ দিগভ্রান্ত হয়’; কেন ও কীভাবে সেটা আমরা সবাই বুঝি। তাই আমি মনে করি আমাদের সর্বপ্রথম লক্ষ্য ঠিক করে নেয়া উচিত যে, আমরা ‘এতদূর’ যাব বা ‘ওই স্থানে’ যাব। লক্ষ্য ঠিক করলে পথচলা সহজ ও সুন্দর হয়। ক্লান্তিতে অতটা ভূগতে হয় না।

আমরা যারা তরুণ-যুবক, আমাদের এই বয়সটি অনেক মূল্যবান। আমরা চাইলে এই বয়সে অনেক কিছুই করতে পারি। আমাদের মাঝে রয়েছে সম্ভাবনার এক মুক্তদিগন্ত। যদি একে খালি মাঠ মনে করে বসে থাকি বা নিজেকে এর সাথে ফিট না করি, তাহলে একসময় মাঠ ঠিকই পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি-আপনি থাকব না সেই সফলতার উদ্বেলিত ময়দানে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই কোন না কোন প্রতিভা রয়েছে। সর্বপ্রথম কাজ হবে আমাদের সেই সুপ্ত প্রতিভাটি খুঁজে বের করা। সকল মানুষের মাঝে একরকম প্রতিভা থাকে না। প্রত্যেকের কিছু নিজস্ব আলাদা চিন্তা, লক্ষ্য ও রুচিবোধ আছে। সেটা আগে বের করতে হবে। এরপর সেই প্রতিভাকে কাজে লাগানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিজের মধ্যে যেই প্রতিভা নেই, তা নিয়ে খামাখা পড়ে থাকার কোন অর্থ হয় না। যারা এভাবে পড়ে থাকেন, তারা অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন না। ব্যর্থতা তাদেরকে গ্রাস করে নেয়।

মনে রাখা চাই, আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ বিচারক আপনি নিজেই। তাই আপনার কোন কাজে কেউ প্রশংসা করলে আগে আপনি শিওর হয়ে নিন যে, সেটা আসলেই প্রশংসার যোগ্য কিনা। যদি প্রশংসার যোগ্য মনে হয়, তাহলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘জাযাকাল্লাহ’ বলে শুকরিয়া আদায় করুন। সাথে সাথে এটাও মাথায় রাখুন যে, এই ক্ষুদ্র প্রশংসায় পরিতৃপ্ত হওয়া যাবে না। বরং প্রশংসার পরে নিজেকে আরো গুছিয়ে নিন। চেষ্টা করুন, আগামীতে আরো বড় কারো প্রশংসা নিতে হবে। আরো বড় কোন জায়গার প্রশংসা নিতে হবে। কিন্তু যদি পরিতৃপ্ত হয়ে গা এলিয়ে দেন, তাহলে জেনে রাখুন, আপনার নিম্নমুখী যাত্রা এখান থেকেই শুরু, যার শেষ হবে ব্যর্থতা ও হতাশায় গিয়ে।

কাজেই, যে কোন কিছুতে হুটহাট আত্মতৃপ্তি নয়, বরং আত্মচেষ্টায় সুস্থির লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে চলুন। অহংকার ও আত্মগরিমাকে অনেক দূরে ছুঁড়ে ফেলুন। এটা সবসময়ই মাথায় রাখুন যে, কেউ কেউ আপনার-আমার চেয়েও বড় এবং বিস্তৃত পরিসরে আমাদের কাজগুলোই করছে। আমি এই সামান্য কাজ করে অহংকার করার কিছুই নেই। যারা আমার চেয়েও বড় হয়েছে তাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। নিজেকে আনতে হবে চয়নকৃত কাজের সর্বোচ্চ চূড়ায়।

আরেকটা বিষয়, সবসময় শেখার মানসিকতা যার নেই, সে কোনদিন সফল হতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় সে আটকে থাকে। সামনে এগোতে পারে না। যারা সামনে এগিয়ে যায়, তারা প্রতিমুহূর্তে কিছু না কিছু শেখে। চাই সেটা যে কারো কাছ থেকেই হোক। কিতাবে তো রয়েছে যে, আকাবিররা একটা কুকুর থেকেও সবক হাসিল করতেন। তাহলে আমরা কেন শেখার ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়রের হিসেব করব? কেন অযথা নিজেই নিজের শেখার পথকে রুদ্ধ করব?

সবসময় কাজ করতে হবে কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। একজন সফল ব্যক্তি প্রতিমুহূর্তই কোন না কোন কাজ করে। কখনো সে বসে থাকে না। কোন কাজ না থাকলে সে কাজ বানিয়ে নেয়। কেননা কর্মহীন মানুষের ব্রেন অলস হয়ে পড়ে। আর অলস ব্রেন নিয়ে কখনো সফলতা অর্জন করা যায় না। সুতরাং ব্রেনকে সবসময় চঞ্চল ও উদ্যমী রাখতে হবে। এখানকার ভুক্তভোগীরা কখনোই কর্মহীন থাকে না।

নিজে যা জানেন, অন্যকে তা জানান। এতে করে আপনার জানাটা সদৃঢ় হবে। ভবিষ্যতের জন্য কাজে আসবে। অনেকসময় নিজের জানাটা ভুলও থাকতে পারে। অন্যকে জানাতে গেলে সেটা শোধরানোর সুযোগ আসতে পারে শতকরা ৮০ ভাগ। পাশাপাশি এতে বাড়তি কিছু জানা তো হয়েই যায়।

নিজের পারসোনালিটি নির্দিষ্ট করুন। আপনি শিল্পী, কবি, গীতিকার নাকি সুরকার? আপনি লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ, না উদ্যোক্তা? আপনি আবৃত্তিকার নাকি আবৃত্তি নির্মাতা; আপনার ব্যক্তিত্ব আগে যাচাই করুন এবং স্থির করুন। এরপর আপনি যেটাই হোন না কেন, সেটার মৌলিক জায়গা থেকে শেখা শুরু করুন। ধাপে ধাপে উপরে উঠতে থাকুন।

মাথায় রাখতে হবে, একবারেই সবকিছু হজম হবে না। বরং ‘বক্ষ-উদ্গিরণ’ তথা বমন রোগে আক্রান্ত নিশ্চিত হবে। যে গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে তা দ্রুতই মরে যায়। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা বটবৃক্ষ হতে চেষ্টা করুন। ধাক্কা দিয়েও কেউ ফেলতে পারবে না। প্রতিটি জিনিস সিরিয়াসলি শিখুন। হাস্যরসে শেখা জিনিস স্থায়ী হয় না। আপনাকে যদি জাতীয় সংসদে কিংবা লক্ষ-কোটি জনতার সামনে কোন একটি জিনিস উপস্থানের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে আপনি সেটা কতটা সিরিয়াসভাবে শিখবেন এবং তার চর্চা বা রিহার্সাল করবেন? এরকম সিরিয়াসভাবেই প্রতিটি জিনিস শিখুন।

বই পড়ুন। শেখার জন্য অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বই। প্রতিদিন একটি পৃষ্ঠা হলেও বই পড়ুন। বই পড়া ছাড়া সৃষ্টিশীল মানুষের আবির্ভাব ঘটে না। যতবেশি বই পড়বেন, নিজেকে ততটাই জানতে পারবেন, নিজের দুনিয়াকে জানতে পারবেন। আত্মবিশ্বাসের বয়ান আমি করব না। কারণ আপনারা সকলেই জানেন যে, আত্মবিশ্বাসই সফলতার মৌলিক উপাদান।

তাই আসুন, নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস রাখি, সময়ের চাহিদা অনুধাবন করে সময়ের সামনে চলি। সফলতা আমাদের আসবেই আসবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক: সম্পাদক, প্রবচন।

আরও পড়ুন- সন্ত্রাস দমনে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর তাৎপর্যময় ভূমিকা