Home রাজনীতি বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানালেন আল্লামা কাসেমী

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানালেন আল্লামা কাসেমী

উম্মাহ রিপোর্ট: বন্যাদূর্গত বগুড়া, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ি, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ অঞ্চলের দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে যার যার সাধ্যমত সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতার্কর্মীসহ সক্ষম সর্বস্তরের জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

আজ (২০ জুলাই) পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর জমিয়তের নতুন কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়ত মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুতিউর রহমান গাজীপুরীর পরিচালনায় দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন জমিয়তর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আবদুল গাফফার ছয়ঘরী, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মুফতী মকবুল হোসাইন, মুফতী তাজুল ইসলাম আশরাফী, মাওলানা অনোয়ার হোসাইন ঢাকুবী, মুফতী বশীরুল হাসান হাসান খাদিমানী, মুফতী মাহবুবুল আলম, মুফতী নুর মুহাম্মদ, মুফতী ইমরানুল বারী সিরাজী, মুফতী গোলাম মাওলা, মুফতী শরীফুল ইসলাম কাসেমী, মুফতী জাবের কাসেমী, মুফতী নুরুল আলম ইসহাকী, মুফতী সাইফুদ্দীন ইউসুফ ফাহীম ও মুহাম্মদুল্লাহ কাসেমী প্রমুখ।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে জমিয়ত মহাসচিব আরো বলেন, ইসলাম সাম্য, সহমর্মিতা, মানবতা ও ইনসাফের শিক্ষা দেয়। ইসলামে মনবিকতাবোধের জায়গায় ধর্ম, বর্ণ ও ভাষাগত কোন তারতম্য করে না। সুতরাং দল-মতের ঊর্ধ্বে সকল মানুষকে সমান বিবেচনা করে অসহায় আর্তমানবতার পাশে সহযোগিতা নিয়ে স্বচ্ছল জনসাধারণকে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব। ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত উদ্যোগে যার যার এলাকায় ত্রাণসামগ্রী, নগদ অর্থ ও খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে হাওর এলাকায় বিলি-বণ্টনের উদ্যোগ নিন। জমিয়তের নেতা-কর্মীরা নিজেরাও ত্রাণ ও সেবা কাজে শরীক হোন এবং অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করুন।

আল্লামা কাসেমী বলেন, ইতিমধ্যেই পত্রপত্রিকায় বন্যা দুর্গত এলাকার যেসব চিত্র ও খবর আসছে, তাতে এসব এলাকার মানুষ যে অত্যন্ত করুণ ও মানবেতর জীবন যাপন করছে সহজেই বুঝা যায়। উপদ্রুত এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে উল্লেখযোগ্য ত্রাণ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য, সাধারণ জনতার প্রতি কোন নজর নেই। তাই দুর্গত মানুষের সংকট লাঘবে সরকারের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সেবা সংস্থা এবং অন্যান্যরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ করে দুর্গত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। মানবতাবোধ ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা হওয়া চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে কেরামের অবদান সবচাইতে বেশী। ঈমান-ইসলাম নিয়ে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এসব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে জমিয়তের কর্মীদের সচেতন, সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। সকল প্রকার হুমকি উপেক্ষা করে ঈমানী চেতনায় উজ্জিবীত হয়ে ময়দানে কাজ করতে হবে।

তিনি বর্তমান নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিকে গলাটিপে হত্যার নামান্তর উল্লেখ করে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় নুরানী মাদ্রাসা গড়ে তোলার আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম স্বাধীন, সার্বভৌম ও মর্যাদাশীল শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামাজিকভাবে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইনসাফ, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করে থাকে। এছাড়াও জমিয়ত সবসময় শোষিত, বঞ্চিত কৃষক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার থাকে।

তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল দেশে জুলুম, লুটপাট ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ভোটাধিকারসহ নাগরিকদের ন্যায্য সকল অধিকার তো হরণ করেছেই, এমনকি কথা বলার স্বাধীনতাটুকুও এখন আর নেই।

মাওলানা আফেন্দী আরো বলেন, দেশের কেন্দ্রস্থল রাজধানী। রাজধানীর কর্মকাণ্ডকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ অনুকরণ করে। এ কারণে ঢাকা মহানগর জমিয়তের দায়-দায়িত্ব অন্যান্য সকল শাখা কমিটি থেকে অনেক বেশি গুরুত্ববহ। তাই রাষ্ট্রে, সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে মহানগর কমিটির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সোচ্চার থাকতে হবে। আমরা আশাবাদি, আমাদের পূর্বসুরি হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী রাজনীতিবিদগণের আদর্শ থেকে প্রেরণা নিয়ে এবং জমিয়তের কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে অনুসরণ করে মহানগর জমিয়ত আগামী দিনে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক শক্তিশালী বাংলাদেশ ও আদর্শ সমাজ গড়ার আন্দোলনে সারা দেশের জন্য অনন্য নজির স্থাপন করতে সক্ষম হবে।

অনুষ্ঠানে ৩ বছর মেয়াদী নতুন সেশনের ১১২ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর জমিয়তের নতুন কমিটির সদস্যদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান জমিয়ত কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর জমিয়তের কাউন্সিলে আগামী ৩ বছর মেয়াদের জন্য মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দীকে সভাপতি ও মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১২ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা মহানগর জমিয়তের কমিটি ঘোষণা করা হয়।