Home লাইফ স্টাইল বউ-শাশুড়ি সমাচার

বউ-শাশুড়ি সমাচার

- প্রতিকী ছবি।

।। মারুফ আল-মাহমূদ ।।

বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক অনেকটা চিরন্তনই বলা চলে। প্রত্যেক মেয়েকেই একদিন বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুড় বাড়ি যেতে হয়, যেখানে শুরু হয় তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়। সব মেয়ের মনেই তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে, সেই সাথে থাকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ভয় আর উত্তেজনা। তবে কয়টা মেয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়? এখনো এমন অনেক নারীই আছেন যারা তাদের শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনের শিকার। মাঝে মধ্যেই আমরা টিভিতে দেখি কিংবা খবরের কাগজে পড়ি এমন সব ঘটনার কথা। এমনকি প্রাণনাশের খবরও পাওয়া যায়।

বউ-শাশুড়ির যে সম্পর্ক এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণের সাথে জড়িত। যার কারণে কেউ কাউকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অধিকাংশ শাশুড়ি যারা নিজেরা নতুন অবস্থায় তাদের শ্বাশুড়ি কর্তৃক অত্যাচারিত হয়েছেন, কোন অধিকার পাননি, তারা নিজের বউকেও সে অধিকার সহজভাবে দিতে চান না। অবচেতন মনে করে তার পুরনো অত্যাচারের কাহিনী নিজের আচরণে এসে সাইক্লিক অর্ডারে পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকে।

এমতাবস্থায় শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে পিজিটিভ ধারণা রাখা যে কোনো মেয়ের পক্ষেই খানিকটা কঠিন বৈকি। শ্বশুর বাড়িতে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয় শাশুড়ির সাথেই। তাই তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা সবচেয়ে জরুরী। অনেক সময় শ্বাশুড়িরা ভুলে যান যে তারাও এক সময় বউ হয়ে এসেছিলেন। তখন তাদের মনের অবস্থা যেমন ছিল, আজকের এই মেয়েটিরও ঠিক একই হাল। তবে অনেক শাশুড়িই তা মানতে ও ভাবতে নারাজ।

অনেকেই আছেন যারা নিজের সময়ে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার দরুণ ছেলের বউ এর সাথেও তেমনই আচরণ করে থাকেন- যা কখনোই কাম্য নয়। এমনকি বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রে নির্যাতনের সিংহভাগই এসে থাকে শাশুড়ি থেকে, অর্থাৎ অপর এক নারীর নিকট হতে। যা একজন নারীর জন্য খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি

এখনো দেখা যায় শ্বশুর বাড়িতে একজন বউকে কেবল বউই মনে করা হয়। হাতে গোনা কিছু পরিবার ছাড়া সকলেই নিজের কন্যাকে বউদের চেয়ে আলাদা চোখেই দেখেন। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু পরিবারে তো বউদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যেন তারা মানুষই না। সময়ের ব্যবধানে আমরা দিন দিন কত উন্নত ও অগ্রসরমান চিন্তার মানুষ হচ্ছি। কিন্তু আজও কমেনি এই পর্যায়ে বৈষম্য, এখনো আসেনি সচেতনতার সুবাতাস। আজও মেয়েরা নির্যাতিত, উৎপীড়িত তাদের শ্বশুর বাড়িতে। এখনো প্রায় অনেক শিক্ষিত মেয়ে তাদের পড়াশোনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ সংসারের চিন্তা করতে গিয়ে। শ্বশুর-শাশুড়ির মন রক্ষার্থে এবং মোটকথা বউ হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। তাতেও তারা কখনো কন্যা রূপে জায়গা করে নিতে পারে না তাদের শ্বশুর-শাশুড়ির মনে, বউ হয়েই থেকে যায়।

প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত, বউ হয়ে যে মেয়েটি এসেছে সে তো কারো না কারো কন্যা, অনেক আদরে লালিত সন্তান। যাকে তার বাবা-মা পরম আদরে আগলে রেখেছেন এতটা দিন, এতটা বছর ধরে। যেমনটি তারা তাদের ছেলের ক্ষেত্রে করেছেন, ঠিক একই ভাবে। একটি মেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবেশে, তার পুরনো সব সম্পর্ক পেছনে ফেলে চলে আসে তার শ্বশুর বাড়িতে।

শ্বশুর-শ্বাশুড়ির উচিত তাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দেয়া, যাতে করে সে নতুন পরিবেশে ঘাবড়ে না যায়। তার যেন এমন না মনে হয় যে এ বাড়িটি তার আপন নয়। এতে বঊ তথা বাড়িতে নতুন মেয়েটির চোখে আপনাদের সম্মান অনেকাংশে বেড়ে যায়। অন্যথায় শুরু থেকেই তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতেও সবার সাথে সহজ হয়ে উঠতে পারে না।

অশিক্ষা ও পরিবেশগত কারণে অনেক ছেলের উপর ষোল আনা কর্তৃত্বের ভাগীদার হিসাবে বউকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করেন, যে কারণেও নিজের মেয়ের ব্যাপারে যা সহজভাবে গ্রহণ করেন তা ছেলের বউ এর ব্যাপারে অনেক শাশুড়ি একটুও সহ্য করতে চান না।

স্বামীর সাথে বউ এর ভালো সম্পর্ক, হাসাহাসি, আরাম-আয়াশে, খাবার দাবার সবকিছুই তার কাছে অসহ্য মনে হয়। সুতরাং দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত করা যায়, সেই চেষ্টায় নিয়োজিত হয়ে যায়। সুক্ষ্ম কারসাজিতে দাম্পত্য সম্পর্ককে উত্তপ্ত করে তুলেন। আর যদি ছেলে পিতা-মাতার অনুগত হন তাহলে সেক্ষেত্রে বউটির ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।

সুতরাং কী আধুনিক কি প্রাচীন এ সমস্যা অতীতেও ছিলো এখনো আছে। সুতরাং এ পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে শিক্ষিত সমাজকে ভাবতে হবে। আধুনিক যুগ বস্তু ও ভাগবাদী যুগ হওয়ার কারণে কেউই প্রবীণ পিতা-মাতার দ্বায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন নন। তদুপরি এই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য যে ধৈর্য, সহনশীলতা, ত্যাগ আমাদের দরকার সেটিও অনুপস্থিত। সুতরাং আধুনিক সমাজ প্রবীণ হাউসকে বা বৃদ্ধ নিবাসকে শেষ বয়সের সমাধান মনে করছেন। কিন্তু না এগুলো কোনটিই সুস্থ সমাজ কাঠামোর পরিচয় বহন করে না; বরং আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত। একটি সুখি-সুন্দর সমৃদ্ধশালী পরিবার গঠনের জন্য নবীন প্রবীণদের মাঝে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

বৃটেনের ব্রাডফোর্ডে ২৪ তম আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত