Home সোশ্যাল মিডিয়া এবার ‘ফিরোজ শাহ কোটলা’ স্টেডিয়ামের নাম পাল্টালো ভারত

এবার ‘ফিরোজ শাহ কোটলা’ স্টেডিয়ামের নাম পাল্টালো ভারত

দিল্লীর ‘ফিরোজ শাহ কোটলা’ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ইনসেটে- এখানকার মূল স্থাপনা ফিরোজ শাহ দূর্গ।

আলতাফ পারভেজ: জাতিবাদী এবং অসহিঞ্চু মনস্তত্ত্বের প্রধান এক আক্রমণস্থল হলো ইতিহাস। সত্য-মিথ্যার মিশেলে যেভাবেই হোক নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে প্রয়োজন ইতিহাস থেকে ‘অপর’কে মুছে দেয়া। ইতিহাসকে নতুন করে সাজানো।

এক্ষেত্রে হামেশা কিছুকিছু দৃষ্টান্ত মিলছে। সময়টি বড় নির্লজ্জ। সর্বশেষ ঘটলো দিল্লীর ‘ফিরোজ শাহ কোটলা’ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের নাম পরিবর্তনের ঘটনা।

এখানকার মূল স্থাপনাটি নির্মাণ করেছিলেন দিল্লীর শাসক ফিরোজ শাহ ১৩৫৪ সালে। এটা ছিল একটা দূর্গ। তাই বলা হতো- ফিরোজ শাহের ‘কোটলা’। কোটলা মানে দূর্গ। শব্দটি তুর্কি ভাষার সূত্রে পাওয়া।

ফিরোজ শাহ দিল্লীর সুলতান ছিলেন তিন দশকেরও বেশি সময়। তাঁর দূর্গের অবশেষকে পরিবর্তন করেই এই ক্রিকেট গ্রাউন্ড তৈরি হয় ১৮৮৩ সালে।

মোদি সরকার আগামী ১২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্টেডিয়ামটির নাম বদলের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিজেপির প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির নামে এই স্থাপনাটির নামকরণ করা হবে। হয়তো এটাও কাকতালীয় নয় যে, ফিরোজ শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী এই সেপ্টেম্বরে বলেই পুরো আয়োজনটিও হচ্ছে এ মাসেই।

জাতিবিদ্বেষ অনেক ক্রুদ্ধ জিনিস বটে। আনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তনের আগেই আজ দেখলাম উকিপিডিয়াতে এটা ‘অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম’ হিসেবে উল্লিখিত হচ্ছে।

যে ভারত চাঁদে যান প্রেরণের গর্বে উদ্বেল, তারা চাইলে নিশ্চয়ই অরুণ জেটলির নাম অমর করে রাখতে নতুন একটা স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে পারতো। কিন্তু তাতে তো দিল্লীর বুক থেকে অপর ধর্মের স্মারকচিহ্ন মোছা যেত না- এটাই হয়তো পুরো উদ্যোগের মূল প্রণোদনা। কিন্তু এই ভারতই চাইছে বহুভাষী, বহুজাতিক, বহু সংস্কৃতির দক্ষিণ এশিয়ার মুরুব্বি হতে। এই মন নিয়ে সেটা কী সম্ভব?

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস থেকে এভাবেই বহুত্ববাদের চিহ্নহগুলো মুছে দেয়া হবে মানছি। তবুও চাই না, অন্যান্য দেশগুলো এই কাতারে শামিল হোক।

হয়তো এটাও এখন ইতিহাস থেকে মুছে যাবে যে, “ফিরোজ শাহ তুগলকের মাতা ছিলেন একজন হিন্দু নারী”।
[ফেসবুক পোস্ট থেকে

– আলতাফ পারভেজ, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক।
altafparvez@yahoo.com

আরও পড়ুন- ‘খাদ্য নিয়ে রাজনীতি ও ভোটে জেতা’