Home রাজনীতি সিলেট যুব জমিয়ত সম্মেলনে যা বলেছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

সিলেট যুব জমিয়ত সম্মেলনে যা বলেছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

ফয়েজ উদ্দীন: গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা যুব জমিয়তের উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও অন্যতম নীতিনির্ধারক শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। সম্মেলনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সিলেট জেলা জমিয়তের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শরীক ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক যে বক্তব্য রেখেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব উপলব্ধি করে হুবহু তা নিম্নে পত্রস্থ করা হল। [সংকলক]

“হামদ ও সালাতের পর, সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত জেলা জমিয়তের সভাপতি হযরত মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন (হাফি.)সহ নেতৃবৃন্দ! আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বিশ্বায়নের প্রোগ্রামের রোষাণলে গোটা পৃথিবীর মুসলিম আজ বিপর্যস্ত।

আজকের শিক্ষাকে এভাবে সাজানো হয়েছে যে, ১৩ইং সালে আওয়ামীলীগ এমন শিক্ষানীতি চালু করলো, যে শিক্ষানীতি বৃটিশ আমল থেকে চলে আসা শিক্ষানীতির বিরোধী।

এ কে ফজলুল হকের মতো লোক, ডা. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শেখ মুজিব, সোহরাওয়ার্দী, জিয়াউর রাহমান ও এরশাদের মতো লোক যে শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষিত ছিলেন। তাদের কেন এতো মাথা ব্যাথা শুরু হল যে এই শিক্ষানীতি পাল্টিয়ে নতুন শিক্ষানীতি করতে হবে? শুধু এই জন্য যে শিক্ষাঙ্গনে যেন ইসলামের কোন লেস মাত্র না থাকে!

শিক্ষানীতির সব বিভাগ আজ হিন্দুদের হাতে। ২০১৩ইং সনেই একদিকে নতুন শিক্ষানীতি চালু হল অন্যদিকে নিচের ক্লাস গুলোতে হযরত আবুবকর রাযি. উমর রাযি. আব্দুল কাদির জিলানী সহ আরো অনেক পাঠ ছিলো তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হল। আর এর স্থলে দেব-দেবিদের পাঠকে সংযুক্ত করা হলো। তার সাথে ৮ম শ্রেণি থেকে এম এ ক্লাস পর্যন্ত ডারইউনের বিবর্তনবাদের মতাদর্শ সংযোজন করা হল।

এই বিবর্তনবাদিরা বলে, বিবর্তনবাদের মাধ্যমে এমনি এমনিই সমগ্র বিশ্বব্রাহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোন আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার হাত নেই। মানুষ পশু-পাখি, গাছ-পালা এমনি এমনিই হয়েছে। কয়েক কোটি বছর আগে বুঝি একদিন হঠাৎ করে সূর্য ভেঙ্গে পড়েছিলো, এরপরে তারই একটুকরা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনে বর্তমান পৃথিবীর আকার ধারণ করেছে!

২০১৩ সালে শিক্ষানীতি প্রনয়নের সময় প্রথমে আমি বলেছিলাম যে দশজন আলেমকে যদি ক্বাতল(হত্যা) করা হতো আর এই শিক্ষানীতি যদি সরকার না করতো তাহলে অনেক ভালো হতো। এই শিক্ষানীতির মাধ্যমে পুরা জাতিসত্বার অস্তিত্ব বিলিন করে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামীলীগ হঠাৎ করে কোনো পথে চলে না। একটি স্কিমের উপর চলে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সংসদের স্পিকার সহ ৫/৭জন মন্ত্রী মহিলা। সেখানে আবার নারী উন্নয়ন নীতি মালার কি প্রয়োজন হলো? শুধু এই কারণে যে, বিয়েশাদির প্রথা যেন শেষ হয়ে যায়। নারীরা যেন উন্মুক্ত হয়। যে কোন ছেলে যে কোন মহিলাকে করায়ত্ব করতে যেন কষ্ট না হয়।

পশ্চিমা দেশের মতো হারামযাদাদের দেশ যেন হয়। আজকে পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন যায়গায় পিতার সাথে মাতার নামও লাগাতে হয়। আল্লাহ না করুক যেভাবে দেশ চলছে সেভাবে চললে আরো কয়েক বছর পরে মায়ে সাথে পিতার নাম লাগাতে হবেনা! তার কারন হল, বাপের পরিচয় থাকবেনা। এই শিক্ষা ব্যবস্থাই আমাদেরকে নাস্তিক আর কাফির বানানোর জন্য কাফি (যথেষ্ট)। আর এই শিক্ষাই এখন প্রচলিত!

আওয়ামীলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশ, র‍্যাব আর বিজিবির হেফাজতে ২০১৩ সালে শাহবাগ চত্ত্বরে প্রায় ৬০ দিন নাস্তিকতা, দুনিয়ার সকল ইসলাম বিদ্বেষী আর খারাপ কাজের প্রদর্শনী করেছে এই সরকার। যার ফলশ্রুতিতে হেফাজতের আন্দোলন।

৬ এপ্রিল শাপলা চত্তরে কি ঘটেছিল তা বিশ্ববাশী দেখেছে। হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি সাহেবসহ হুজুরদের উপর এক ডজন দুই ডজন মামালা এখনো রয়েছে। হুজুরদের পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। একটি মামলাও খারিজ করা হয়নাই। তার সাথেসাথে নানারকম প্রলোভন দেওয়া হয়েছে হুজুরদের কাবু করার জন্য। এই অফারে হজ্বেও যাচ্ছেন। আর সরকারের সাথে এমনভাবে লিয়াজু করে হজম হয়ে গেলেন যে তা অতীতে বৃটিশ আমলেও কখনো হয় নাই।

কিন্তু আফসোস! এই উম্মতের কোন গার্ডিয়ান নাই যে, এই উম্মতের হেফাজত করবে। বৃটিশ আমলে জুলুম ও ছিতম আরো বেশি ছিলো, কিন্তু এরা কওমের রাখাল ছিল। শায়খুল হিন্দ, শায়খুল ইসলাম, মুফতী কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা হিফজুর রাহমান, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী, মাওলানা মুহাম্মদ আলী এবং মাওলানা শওকত আলী গংরা রাখাল ছিলেন।

আজকে পুরা দেশ শোষণের বেলায় বৃটিশকেও অতিক্রম করে গেছে। বদ-দ্বীনির বেলায় বৃটিশ ফেল মেরেছে যেন, এমন ভয়াবহ অবস্থা। বৃটিশ আমলেও অনেক আন্দোলন প্রতিবাদ করা গেছে। আজকে প্রধানমন্ত্রীর অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার অধিকার নেই। পত্রিকার স্বাধীনতা নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই।

দেশের সম্পদ লাগাত লুটপাট চলছে, নিরন্তর সম্পদ দেশের বাহিরে পাচার হচ্ছে। সুইস ব্যাংকের ভাণ্ডারে বাংলাদেশের পাচারকৃত অর্থে ভরপুর। যে কারণে ফকিরের মতো দেশ চলছে। ব্যবসার জন্য ব্যাংকে টাকা পয়সা নাই। শুধু দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য কিছু টাকা রাখা হয়েছে। একেকটা প্রকল্পকে সামনে রেখে টাকা লুট করা হচ্ছে। প্রজেক্ট শেষ হচ্ছে না, শম্বুক গতিতে আগাচ্ছে আর বছর বছর বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে, সমানভাবে লুটপাটও চলছে। ইসলামী ব্যাংক সরকারী নিয়ন্ত্রনে যাওয়ার পর প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এখন শুধু এই ব্যাংকের সকল একাউন্ট হোল্ডারদের টাকা ফেরত দিতে হলে আরো ২৬ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ঋণ করতে হবে।

দেশ দেউলিয়া। দেশে কিছুই নেই। বিচার নেই৷ স্বাধীনতা নেই। ইসলাম নেই। আছে ধর্মনিরপেক্ষতা। খৃষ্টান ধর্মেও কোন আঘাত নেই। হিন্দু, বদ্ধ ধর্মেও কোন আঘাত নেই। আছে শুধু ইসলাম নিধনের অপচেষ্টা। সমান অধিকারের আইন পাশ করা হয়েছে এই কয়েকদিন আগে। উলামাদের নিয়ে আন্দোলন করবো। এই শক্তিকে ডিবাইড করা হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের অন্তর কুফর ও শিরিকের মহব্বতে ভরা৷ আল্লহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস নেই। ইসলাম তারা সহ্য করতে পারে না।

গত নির্বাচনে ১০টি সিটের অফার আসলো উপর মহল থেকে। সিট প্রতি এক কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমরা বলেছি, ফলানা! এটা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম! জমিয়তে অফার চলেনা। আমাদেরকে জোট থেকে যে কয়টি আসন দেওয়া হয়েছে, আমরা দেখিয়ে দিলাম বি এন পি ও অন্যান্য পার্টি থেকে আমাদের পজিশন ভালো। আমাদেরকে যদি বিশ সিটও দেওয়া হতো তাহলে ২০ সিটেই আমরা এভাবে দেখিয়ে দিতাম। আগামিতে সিলেটের অন্যান্য সিটও আমাদের দখলে আসবে ইনশাআল্লাহ।

১৯০ বছরের বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এক সমান হয়নি। কখনো ক্বাতলে আমের জামানা আসছে। কোন সময় ছিলো আম জেলের জামানা। কখনো কিছু শিথিল অবস্থা এসেছে। সব অবস্থায় আমাদের আকাবির হযরাতগন সময় উপযোগী প্রোগ্রাম করেছেন। কখনো নিরাশ হন নাই। কিন্তু অবাক লাগে অন্যান্যদের মতো জমিয়ত কর্মীরাও সরকারের এই রোষানলের মুকাবেলা করতে আসেন না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এই মাটিতে ফেরাউন থাকতে পারেনাই। নমরুদ থাকতে পারেনাই। আওয়ামীলীগ নিশ্চয় থাকতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

আপনি রাজনৈতিক ময়দানে নেতৃত্ব হাসিল করলেন, আর এরপর আপনি নিভু নিভু জিন্দেগি যাপব করবেন, তা হতে পারে না। আমরা এই স্বৈরসরকারকে অবশ্যই সরাবো। অবৈধ সকল আইন বাতিল করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয়তা ফিরিয়ে আনতে চাই। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনতে চাই।

আমার গুজারিশ, আপনারা যদি নিরবিচ্ছিন্ন প্রোগ্রাম চালাতে পারেন। জেনারেল শিক্ষিত, নওজোয়ান, ব্যবসায়ী, গ্রামের যুবকদের যদি সম্পৃক্ত করতে পারেন। তাহলে শক্তি সঞ্চয় হবে। ইলেকশন সহ যেকোন অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে শক্তির যোগান দেবে। আপনারাই এদেশের ভবিষ্যত। এদেশের ইসলামী আন্দোলনের চেতনাওয়ালা মানুষের আশা ভরসার স্থল হল একমাত্র জমিয়ত। ইনশাআল্লাহ এদেশে ইনকিলাব আসবে।

যুব জমিয়তের সকল কর্মী জমিয়তের সদস্য ফরম পুরন করবে। যারা ভোটার রয়েছেন সকলেই মূল জমিয়তের সদস্য হবেন। যুব জমিয়তে গায়রে আলিম যুবকদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখা গ্রাম্য যুবকদের নিয়ে করতে হবে। যুব জমিয়তের কাজ দেখে আমার দিল ভরে গেছে। আল্লাহ আপনাদের কাজে বরকত দান করুন। আমীন।”