Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ আসুন- ‘অংক দিয়ে ঈমান শিখি’

আসুন- ‘অংক দিয়ে ঈমান শিখি’

।। আলহাজ্ব সৈয়দ মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ।।

যখন কোন কিছুই বিদ্যমান ছিল না তখন শুধু আল্লাহ পাক ছিলেন। তারপর আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলেন কিছু সৃষ্টি করবেন। তাই ছয় দিনে তিনি আসমান যমীন সৃষ্টি করে আরসে সমাসীন হলেন। (সূরা হাদীদ)। সর্বশেষে আল্লাহ পাক মানুষ হিসাবে আদমকে সৃষ্টি করলেন। আদম (আ.)এর পৃষ্ঠদেশ থেকে তাঁর সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন। রূহের জগতে সবাইকে একত্রিত করে সর্বপ্রথম ঈমানের শিক্ষা দিলেন। সবাইকে প্রশ্ন করলেন, “আমি কি তোমাদের প্রভু নই”? সবাই একবাক্যে স্বীকার করলেন, “হ্যাঁ। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।” (সূরা আ’রাফ)।

তারপর আদম সন্তানদেরকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনসহ দুনিয়ায় পাঠালেন। দুনিয়াতে দ্বীনসহ সংক্ষিপ্ত জীবন যাপনের পর আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু ঘটাবেন। মৃত্যুর পরপরই শুরু হবে মানুষের অন্য একটা জীবন আলমে বরযখ বা কবরের জীবন। কবরে পৌঁছার সাথে সাথেই প্রথমে যে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে তা হল, ঈমানের পরীক্ষা। প্রথমেই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমার প্রভু কে? যে ঈমানের তা’লীম আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং আলমে আরওয়াহে দিয়ে ছিলেন এবং যা চর্চার জন্য দুনিয়াতে পাঠালেন, সে ঈমানের পরীক্ষা গ্রহণ করবেন পরকালের প্রথম মঞ্জিল কবরে।

ঈমানের প্রথম পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হবে, কবর-হাশর-মীযান ও পুলসিরাতের বাকী মঞ্জিলগুলো সহজভাবে অতিক্রম করে সে মঞ্জিলে মাকসাদ জান্নাতে পৌঁছতে পারবে। আর প্রথম পরীক্ষায় যে কেউ আটকিয়ে যাবে, বাকী সবগুলো মঞ্জিলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাই আশারায়ে মুবাশশারার জলীল-ক্বদর সাহাবী হযরত উসমান (রাযি.) কবরের কথা স্মরণ করে অশ্রুতে তাঁর দাড়ি মুবারক ভিজিয়ে ফেলতেন। ঈমানের কঠিন পরীক্ষার কথা স্মরণ করেই তিনি প্রায়ই কান্নায় ভেংগে পড়তেন।

এই জন্য সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.)গণ বলেছেন, আমরা কুরআন শিক্ষার পূর্বে ঈমান শিক্ষা করেছি। মুখে কালিমা উচ্চারণ করে আল্লাহ তায়ালার একত্বের সাক্ষ্য দেওয়াই শুধু ঈমান নয়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানকে জানা, বোঝা এবং সার্বক্ষণিক চর্চার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করাই হল ঈমান। সুতরাং এটা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।

আমরা জানি অংক শাস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন জটিল সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়। সুতরাং ঈমানের মত অদৃশ্য বিষয় জানা বোঝা এবং বাস্তবায়নের জন্য অংক শাস্ত্রের সাহায্য নিয়ে কিছু করা যায় কিনা সেটা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর কুরাইশ গোত্রের নিকট যে কালিমা পেশ করে ছিলেন, তা হল- “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্”। এ কালিমাই তিনি তাঁর প্রিয় চাচা আবু তালিবের মৃত্যু শয্যায় পেশ করেছিলেন। সুতরাং তাওহীদ রিসালাতের ঘোষণা সম্বলিত এ কালিমাকেই ঈমানের নির্যাস বলা যায়।

ঈমানের এ কালিমাগুলোকে যদি লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যায় এর ভিতর তিনটি অংশ বিদ্যমান। প্রথম অংশে “লা-ইলাহা”-এর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে “নেই কোন সত্তা বা উপাস্য” তথা বিশ্বচরাচরে যাকিছু দৃশ্যমান-বিদ্যমান, তাদের কোন কিছুরই কোন সত্তা বা শক্তি নেই। এ ঘোষণার দ্বারা সকল মাখলুকাতকে বাতিল ঘোষণা করে শূন্যে বিলীন করা হয়েছে। কালিমার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, “ইল্লাল্লাহ্” অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া”।

এ কথায় ঘোষণা করা হয়েছে যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নেই। তাওহীদের অর্থাৎ একত্ববাদের এক পূর্ণ ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে এ অংশে, যা ঈমান ও আক্বীদার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কালিমার প্রথম এবং দ্বিতীয় অংশের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার “তাওহীদ” আর তৃতীয় অংশে “রিসালাত” ঘোষণা করা হয়েছে। তাওহীদের সাথে রিসালাতকে যুক্ত করে ঈমানের পূর্ণতা প্রদান করা হয়েছে। তাওহীদ ও রিসালাতের এ ঘোষণাকে (মৌখিক ও আন্তরিক বিশ্বাসসহ) যদি ঈমান বলা হয় এবং তাকে ‘ই’ অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তাকে অংকে লিখা হলে অবস্থা দাঁড়ায় নিুরূপঃ

‘ই’= লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্। এ সমীকরণ বা সূত্রের কালিমার প্রথম অংশ “লা-ইলাহা” যার অর্থ “কোন কিছু উপাস্য নেই”, তাকে যদি শূন্য ধরা যায়, তাহলে উক্ত সূত্রে প্রথম অংশের বদলে শূন্য লিখা যায়। কালিমার দ্বিতীয় অংশ “ইল্লাল্লাহ্” যার অর্থ “আল্লাহ ব্যতীত” তাকে আল্লাহ তায়ালার “একক সত্তা” হিসেবে চিহ্নিত করা যায় যাকে ইংরেজীতে “ইউনিটি” বলা যায়। তৃতীয় অংশ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্”কে যদি এক্স হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তাহলে উক্ত সূত্রের অবস্থা দাঁড়ায় নিুরূপ, যাকে ঈমানের ফর্মূলা বা সূত্র হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ই=০+ইউনিটি এক্স।

উপরোক্ত ফর্মূলা বা সূত্র দ্বারা একজন ঈমানদার ব্যক্তির ঈমান মূল্যায়ন করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। আমরা জানি কুরআন কারীমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর একক সত্তাকে এক বলে অভিহিত করেছেন। (সূরা ইখলাছ)।

সুতরাং তাওহীদ ঘোষণাকারীর জন্য উপরোক্ত সূত্রে “ইউনিটি”-এর মান ‘এক’ লিখা যায়। তাহলে সূত্রটির অবস্থা দাঁড়ায় নিুরূপঃ ই=০+১এক্স

এখন উপরোক্ত সূত্রটি যাচাই করলে দেখা যায় ‘ই’ এর মান নির্ভর করে সরাসরি ‘এক্স’-এর মানের উপর অর্থাৎ ঈমানদার ব্যক্তির ঈমান ‘ই’ নির্ভর করে সুন্নাত ‘এক্স’-এর উপর। সূত্রে ‘এক্স’-এর মান যদি ‘১’ ধরা যায় অর্থাৎ শতকরা ১০০% সুন্নাতের পাবন্দি করে তবে ‘ই’ অর্থাৎ তার ঈমানের মান পরিপূর্ণ ‘১’, সে পূর্ণ ঈমানদার। অপর দিকে ‘এক্স’-এর মান যদি ‘০’ হয় অর্থাৎ যার মধ্যে সুন্নাতের কোন নামগন্ধ নেই তবে ই=০ অর্থাৎ তার মধ্যে ঈমান অবশিষ্ট নেই।

তাওহীদ ঘোষণা দিয়ে ঈমান গ্রহণ করলেও রিসালাত বা সুন্নাত পরিত্যাগের কারণে তার মধ্যে ঈমান লোপ পেয়ে গেছে। ফলে সে আর ঈমানদার নেই। সুতরাং দেখা যায় উক্ত সূত্রে ‘এক্স’-এর মান শূন্য থেকে এক পর্যন্ত পরিবর্তিত হলে ‘ই’-এর মান শূন্য থেকে এক পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। সুতরাং রাসূলের প্রতি বিশ্বাস এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণের উপর নির্ভর করে ঈমানের পরিপূর্ণতা। বাস্তবে দেখা যায় তাই।

তৎকালীন আরবের ইহুদী ও খ্রীস্টান সম্প্রদায় তাওহীদ বিশ্বাস করলেও শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বিশ্বাস স্থাপন না করায় তারা কাফির হয়ে যায়। হাদীসে আছে কোন কথা গ্রহণযোগ্য নয়। যতক্ষণ না তা কাজে পরিণত করা হয় এবং কোন কাজ গ্রহণযোগ্য হয় না যতক্ষণ না তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত মুতাবেক হয়। অতএব উপরোক্ত সূত্র থেকে ঈমান ও তা রক্ষা কল্পে সুন্নাতের গুরুত্ব বোঝা গেল। আরও স্পষ্ট বোঝা গেল ঈমানের হ্রাস/বৃদ্ধি সুন্নাতের আমল হ্রাস/বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল।

এখানে উক্ত সূত্রটির অংকগুলো পুনঃপরীক্ষা করে তার অবস্থা কি দাঁড়ায় তা দেখা যেতে পারে। সূত্রে হাতের ডান দিকে শূন্য, এক এবং এক্স এ তিনটি অংক চিহ্ন আছে। আমরা জানি অংক সূত্রে শূন্য এবং এক বাদ দিলেও তার মান পরিবর্তন হয় না। তাই এক্ষেত্রে উক্ত সূত্র থেকে যদি শূন্য এবং এক বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সূত্রটির অবস্থা দাঁড়ায় নিুরূপঃ ই=এক্স।

অর্থাৎ ঈমান হয়ে যায় রিসালাতের সমান যা ঠিক নয়। কেননা, তাওহীদ ঈমানের অবিচ্ছেদ্য প্রধান অংশ। অবশ্য পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসরণের মধ্যেও তাওহীদ রয়েছে। সে অর্থে সূত্রটি ঠিক। কিন্তু অংকশাস্ত্র অনুযায়ী এখন এ সূত্রে ই=এক্স এ তাওহীদ অনুপস্থিত। এক্ষেত্রে সমাধান এভাবে করা যায় যে, উক্ত সূত্র থেকে শূন্য এবং এক বাদ দেওয়া যাবে না। কেননা, এর মধ্যেই তাওহীদেরই ইংগিত বিদ্যমান।

সূত্রটি বিশ্লেষণ করলে আরোও কিছু দিক নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। সূত্রের ডান দিকে শূন্য রয়েছে তা একটি গূঢ় ইংগিত বহন করে। তার আগে কোন প্রেক্ষিতে কালিমা নাযিল হয়েছে তা জানা দরকার। বাবা আদম ও মা হাওয়া (আ.)কে তৈরী করে আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁদেরকে বেহেশ্তে বসবাসের অনুমতি দিলেন, তখন তাঁদের প্রতি এ কালিমা নাযিল হয়নি। বেহেশ্তে বসবাস কালে গন্ধম বৃক্ষের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া তাদের নিকট আর কোন শরীয়ত নির্ধারিত ছিলনা। কিন্তু আদম ও হাওয়া (আ.) যখন বেহেশ্ত থেকে বহিস্কৃত হয়ে দুনিয়াতে বসবাস করতে শুরু করলেন, তখন তাদের প্রতি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আদামু শফীউল্লাহ্” এ কালিমা নাযিল হল এবং এর বিধিনিষেধ জারী হল।

আদম (আ.) যতদিন দুনিয়াতে ছিলেন তাঁর প্রতি ততদিন এ কালিমার শরীয়ত জারী ছিল। পরবর্তীতে নূহ (আ.) থেকে শুরু করে আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত এ কালিমার সিলসিলা জারী আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। দুনিয়া ফানা হয়ে গেলে এ কালিমার আর কোন প্রয়োজন বা প্রভাব থাকবে না। সুতরাং দেখা গেল দুনিয়াকে উদ্দেশ্য করে এ কালেমা নাযিল হয়েছে। কাজেই এ কালিমার প্রতিটি কথা বা শব্দের অর্থ ও উদ্দেশ্য দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে অনুধাবন করতে হবে।

এখন কালিমার উল্লিখিত সূত্রটির বিশ্লেষণে যাওয়া যেতে পারে। প্রথমেই শূন্য কি এবং কি অর্থে তা ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখা যেতে পারে। কালিমার প্রথম অংশ অর্থাৎ “লা-ইলাহা’কে শূন্য দ্বারা বোঝান হয়েছে। এখানে দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে “লা-ইলাহা”র অর্থ হল দুনিয়াতে দৃশ্যতঃ কোন শক্তিই প্রকৃত শক্তি নয়। যা কিছু দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান কোন কিছুর শক্তি নেই। সুতরাং তারা উপাস্য নয়। আসমান-যমীনের বিশালতা কোন শক্তির পরিচায়ক নয়। অগ্নি, বায়ু বা পানির ধ্বংস করার শক্তিও কোন প্রকৃত শক্তি নয়। যমীনের শষ্য উৎপাদন কোন কৃতিত্ব নয়।

এসব কিছুর পশ্চাতে যে শক্তি কাজ করছে সে একক সত্তার ইংগিতেই দৃশ্যমান এ শক্তিগুলোকে শূন্যে বিলিন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়া এবং দুনিয়ার অভ্যন্তরে সকল সম্পদকে মূল্যহীন করা হয়েছে। হাদীসে আছে দুনিয়াকে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা একবারও তার দিকে তাকিয়ে দেখেন নি। আরোও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দুনিয়াকে আল্লাহ তায়ালা যদি একটি মশা বা মাছির পাখার মত নগণ্য মূল্য মনে করতেন, তবে কোন কাফির মুশরিককে তিনি বিনামূল্যে পানি পান করাতেন না। মোটকথা আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া এবং দুনিয়ার সম্পদ এতই নগণ্য যে, তা শূন্যের সমতুল্য।

তাই সূত্রে উল্লিখিত শূন্য দ্বারা দুনিয়াকে বোঝান হয়েছে এবং কালিমায় দুনিয়াকে পরিত্যাগের ইংগিত প্রদান করা হয়েছে। দুনিয়া ঐটুকু শুধু গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছে, যা শূন্যের জন্য অংকিত বৃত্তের অভ্যন্তরে আয়তন থেকে বোঝান হয়েছে। অর্থাৎ বৃত্তের অভ্যন্তরের আয়তনকে ক্ষেত্র বোঝান হয়েছে। দুনিয়ার এ ক্ষেত্রটুকু শুধু উপযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য।

হাদীসে আছে, দুনিয়া আখিরাতের ক্ষেত্র স্বরূপ। অর্থাৎ দুনিয়া এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আখিরাতের ফসল উৎপন্ন হয়। সুতরাং দুনিয়াকে ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ কর এবং তাতে আখিরাতের জন্য ফসল উৎপন্ন কর। কাজেই সূত্রে উল্লিখিত শূন্য দ্বারা বোঝান হয়েছে যে, মূল্য হিসেবে দুনিয়া শূন্য কিন্তু উক্ত শূন্য অভ্যন্তরে নামমাত্র ক্ষেত্র আয়তনের মত দুনিয়ার কিছু গ্রহণ কর এবং তাতে আখিরাতের সম্বল অন্বেষণ কর। এটাই “লা-ইলাহার” সারমর্ম।

কালিমায় “লা-ইলাহা”র পর ওয়াক্ফ করা নিষেধ। কেননা, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” একটি পরিপূর্ণ বাক্য যার একটি বিশেষ অর্থ ও উদ্দেশ্য রয়েছে। ভাংগাভাবে ওয়াকফ দিয়ে উচ্চারণ করলে তার অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই সূত্রে “লা-ইলাহা” ও “ইল্লাল্লাহ্”-এর মধ্যে ‘যোগ’ চিহ্ন বসিয়ে এ সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। ‘০’ এর পর ‘+’ চিহ্ন তাই এক অর্থবোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

সূত্রের ডান দিকে দ্বিতীয় সংখ্যা ‘১’। এটা আল্লাহ তায়ালার একক অবস্থানকে ইংগিত করে। ঈমান গ্রহণকারী যখন “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” বলে তাওহীদের ঘোষণা প্রদান করে তখন যাবতীয় সত্তাকে বাতিল ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালার একক সত্তাকে গ্রহণ করে।

সুতরাং আল্লাহ তায়ালার এক এবং অদ্বিতীয় সত্তাকে ‘১’ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। সুতরাং সূত্রে উল্লিখিত ‘১’ সংখ্যাটি জরুরী অর্থবোধক এবং অপরিত্যাজ্য। এখানে আরোও উল্লেখ্য যে, কেউ যদি ঈমান আনার পর “ইল্লাল্লাহ্”কে অস্বীকার করে বা তার আচার-আচরণ থেকে আল্লাহর অস্বীকৃতি (নাঊযুবিল্লাহ্) প্রকাশ পায়, তাহলে ‘১’ এর মান ‘০’ দাঁড়ায় তখন সূত্র অনুযায়ী তার ঈমান ই=০ অর্থাৎ সে ঈমান হারা হয়ে কাফির হয়ে যায়।

এখানে আরোও লক্ষ্য করা যায় যে “ইল্লাল্লাহ্”-এর মান ‘১’ অথবা ‘০’ হবে। এর মাঝামাঝি কোন অবস্থান হবে না। অর্থাৎ ঈমান এবং কুফ্রীর মাঝামাঝি কোন অবস্থা নেই। ঈমানদার হলে তাকে কুফরী সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে এবং কুফরীর মধ্যে ঈমানের লেশমাত্রও বিদ্যমান থাকবে না। অতএব ঈমানদার হয়ে কুফরী কোন কাজ বা কথা বলে ফেল্লে তৎক্ষণাত তাওবা না করলে ঈমান লোপ পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

এখন বাকী থাকল সূত্রে উল্লিখিত রিসালাতের সাংকেতিক চিহ্ন ‘এক্স’। এ বিষয়ে পূর্বেও কিছু আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে আরোও লক্ষ্যণীয় যে, দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে কালিমার শেষ অংশ অর্থাৎ “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্” হল কালিমার আসল হাক্বিক্বত। অর্থাৎ দুনিয়াতে কিভাবে কালিমা বাস্তবায়িত করতে হবে, তার প্রকৃত পন্থা বলা হয়েছে এ অংশে। সুতরাং ‘এক্স’ হল কালিমার বাস্তব রূপ।

যে ঈমানকে আল্লাহ তায়ালা আলমে আরওয়াহ্-এ মানব মন্ডলীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দুনিয়াতে পাঠালেন, সে ঈমান গ্রহণ করতঃ দুনিয়ার যিন্দেগীর প্রতিটি মুহূর্ত ঈমানসহ কাটানোর পর ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করার সফলতা একমাত্র তখনই লাভ করা যাবে, যখন কালিমার ‘এক্স’ অংশ বাস্তবায়িত করা হবে। অর্থাৎ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত অনুসরণ তথা সুন্নাতের পাবন্দীর মধ্যেই প্রকৃত সফলতা নিহিত।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন যে, “কেউ আল্লাহ্কে রব হিসেবে গ্রহণ করল অর্থাৎ ঈমান আমল এবং তার উপর দৃঢ়ভাবে মজবুত থাকল, মৃত্যুর সময় তার নিকট ফেরেশ্তার দল নাযিল হয় এবং বেহেশ্তের সুসংবাদ প্রদান করে”। (সূরা হা-মী-ম সিজদা)।

ঈমানের এ মজবুতি তখনই লাভ করা যাবে যখন কালিমার এ শেষ অংশ বাস্তবায়িত হবে। কাজেই কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হয় না যদি না তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত তরীকায় হয়। আল্লাহ তায়ালা কালিমার হাক্বিক্বত বুঝে তার উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

আরও পড়ুন- ‘বিজ্ঞানের আলোকে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত