Home ইসলাম জার্মানীর চরম ইসলামবিদ্বেষী শীর্ষ রাজনীতিবিদ ওয়াগনারের ইসলাম গ্রহণ

জার্মানীর চরম ইসলামবিদ্বেষী শীর্ষ রাজনীতিবিদ ওয়াগনারের ইসলাম গ্রহণ

জার্মানির চরম ডানপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী দল অলটারনেটিভ ফুওর ডয়েচল্যান্ডের প্রথমসারির নেতা পবিত্র ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি একই সঙ্গে দলটিও ছেড়ে দিয়েছেন বলে দলটির একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন। জার্মানির এই দলটি চরম মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। ইসলামে ধর্মান্তরিত শীর্ষ ওই নেতার নাম আর্থার ওয়াগনার। তিনি জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় ব্রান্ডেনবার্গ শাখার একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য।

দলত্যাগের জন্য ব্যক্তিগত কারণের কথা বলা হলেও সম্প্রতি খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষাগ্রহণই যে এর কারণ, সেটি এখন অনেকটাই বোধগম্য। জার্মানির বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আর্থুরের দলত্যাগ ও নতুন ধর্ম গ্রহণ বেশ সাড়া ফেলেছে। নানাভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা চলছে, আর্থুর কেন ধর্ম পরিবর্তন করলেন। কিন্তু আর্থুর মুখে তালা মেরে আছেন। তিনি এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

তবে, বার্লিনের একটি দৈনিক সংবাদমাধ্যমকে নিজের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং গত ১১ জানুয়ারি তিনি তার দলের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন বলেও জানান।

দৈনিক পত্রিকা ‘ডের তাগেসপিজেল’কে আর্থার ওয়াগনার বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ ইসলামে ধর্মান্তরই তার দল ছেড়ে দেয়ার কারণ বলে তিনি জানান। দলটির একজন মুখপাত্র জানান, ওয়াগনারের ধর্মান্তরে তারা উদ্বিগ্ন নয় এবং দল ছেড়ে দেয়ার জন্য তার ওপর কোনো চাপ ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।

এএফডি’র ব্রান্ডেনবুর্গ শাখার একজন মুখপাত্র ড্যানিয়েল ফ্রেইজ বলেন, ‘তার ধর্মান্তরে দলের কোনো সমস্যা নেই। একজন মুসলিম হওয়ার কারণে দলটির সদস্য হওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।’ যদিও গত সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে দলটির প্রচারাভিযানের স্লোগান ছিল ‘জার্মানিতে ইসলামের কোনো স্থান নেই’ এবং ‘জার্মানির ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে এএফডি’।

জার্মানিতে বসবাসরত শত শত মুসলিম শরণার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। এব্যাপারে ফ্রেইজ বলেন, ‘মুসলিম, খ্রিস্টান এবং সমকামীদের জন্য এএফডি’র আগ্রহ রয়েছে।’ এর আগে ওয়াগনার ‘খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট’ দলের সঙ্গে ছিলেন এবং ২০১৫ সালে এএফডি দলে যোগদান করেন। তিনি জার্মান-রাশিয়ান সম্প্রদায়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং আঞ্চলিক রাশিয়ান-জার্মান কমিটির সহ-সভাপতি। তিনি চেচনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন।

দলটিতে যোগদান করার পর তিনিই ইসলামে ধর্মান্তরিত প্রথম এএফডি সদস্য হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। যদিও পার্টি মুখপাত্র জানিয়েছেন, তার দলে মুসলিমরাও ছিল।

গত সেপ্টেম্বরের ভোটে দলটি তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয়। একটি বৃহত্তম জোট সরকার গঠনের ব্যাপারে দলটি অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের রক্ষণশীল জোট এবং সোশাল ডেমোক্রাটদের সঙ্গে আলোচনায় সফল হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করছিলেন, প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসলে এএফডির সমর্থনের পালে আরও জোর হাওয়া লাগবে। চরম ডানপন্থীদের উত্থানে যখন অনেকেই নড়েচড়ে বসছেন, ঠিক তখনই চমকে দেওয়ার মতো একটা খবর এল; আর্থুর দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। একেবারে বিপরীত শিবিরের ধর্মে দীক্ষাও নিয়েছেন। নিতান্তই ব্যক্তিগত বলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এরপর তাঁকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখাও যায়নি। আর্থুর এএফডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গির্জা ও ধর্মীয় কমিউনিটির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নিজেও ইসলাম ধর্মবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। তবে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত এই এএফডি নেতার মধ্যে কিছুদিন ধরেই পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল। তিনি এএফডিতে খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি মুসলিমদের অধিকার ও আগ্রহ নিয়ে কথা বলে—এমন গোষ্ঠীগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর দলকে জাতিবিদ্বেষ থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শও দেন।

অনেকেই মনে করছেন, আর্থুরের ইসলাম গ্রহণ প্রকৃতপক্ষে কী নির্দেশ করে? মোটাদাগে বলা যায়, আর্থুরের ধর্মান্তর এবং সবার সেটি মেনে নেওয়া ইউরোপের সহনশীল ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আর্থুর হয়তোবা একজন ব্যক্তি। তিনি কোন ধর্মে গেলেন, সেটি বিবেচ্য নয়। কিন্তু আর্থুর আপাত জাতিবিদ্বেষ, জোনোফোবিয়াকে প্রত্যাখ্যান করলেন, এর মধ্যে নতুন এক ইউরোপের ইঙ্গিতও আছে। -আল জাজিরা অবলমম্বনে।