Home সোশ্যাল মিডিয়া হাসপাতালের বেডে যেসব ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে…

হাসপাতালের বেডে যেসব ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে…

।। শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী ।।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে দু’টি ব্যাথার কথা না লিখে পারছি না। উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা হবিগঞ্জী হুজুর ঢাকায় অপর একটি হাসপাতালের বেডে চিকিৎসকের নিবীড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি অসুস্থ হয়ে কাবু হয়ে পড়ার আগেরদিন অত্যন্ত ব্যাকুল ও উদ্বিগ্ন মনে হযরতকে দেখতে গিয়েও পেলাম ঘুমে। বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটে দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ করা কঠোরভাবে বারণ করা ছিল ডাক্তারদের। হতাশ মনে দায়িত্বরত নার্সকে অনুরোধ করলে বললেন, কোন কথা বলতে পারবেন না, কেবল দেখেই চলে আসবেন। গভীর অস্থিরতা হজম করে হলেও অন্তত: দুই চোখে তো শায়েখ তে প্রাণ ভরে দেখতে পেলাম। কিছুটা হলেও অস্থিরতা কমল মনের, যদিও হযরতের সুস্থতা ও হাসপাতালের কষ্টকর অবরুদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ যথারীতিই ছিল।

দ্বিতীয়টি হল, ১লা অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকাস্থ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় জমিয়ত নেতাদের পূর্ব নির্ধারিত এক বৈঠক ছিল। ফজরের নামাযের পর একটু ঘুমালাম এই নিয়্যাতে যে, সকাল ৮টায় জেগে রওয়ানা দিব। প্রথমে হাসপাতালে হবিগঞ্জী হুজুরের হাল-অবস্হা জেনে, সম্ভব হলে সাক্ষাৎ করব। পরে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় নির্ধারিত মিটিং এ যোগ দেব। কিন্তু খোদায়ী ফয়সালা ছিল ভিন্ন।

ঘুম থেকে জাগলাম ঠিকই, কিন্তু বাম হাত, বাম পা নড়ছে না। মানে নাড়াতে পারছি না। কাউকে ডাকতে গিয়ে বুঝলাম, মুখও আমার ব্রেণের চিন্তা শক্তির প্রতি সাড়া দিচ্ছে না। সে এক অসহায় অবস্থা, বুঝানো যাবে না।

যাই হোক, আল্লাহর ইচ্ছায় পরে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। এরই মধ্যে প্রায় ৪/৫ বার অবস্হার উন্নতি অবনতি হল। যাওয়া হল হাসপাতালে। সাথে মাদ্রাসার প্রাণপ্রিয় শিক্ষক-ছাত্ররা ছিলেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদেরই পরামর্শে আগারগাঁও নিউরোলজি সাইন্স হাসপাতালে আমাকে নেওয়া হল। এখানকার ডাক্তারের পরামর্শে সিটিস্ক্যান করা হল। অন্যান্য আনুষাঙ্গিক পরীক্ষার পর রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক বললেন, শেরে বাংলা নগর হৃদরোগ হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্ত ততক্ষণে সময় বিকাল হয়ে গেছে বলে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে মাদরাসায় চলে গেলাম।

পরদিন সকালে পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী প্রথমে নিউরো সাইন্সেই গেলাম। পরে হৃদরোগ হাসপাতালে আসলাম। তাঁরা আমাকে দেখেই অনেকটা আঁৎকে উঠলেন। জরুরী ভিত্তিতে ভর্তির অর্ডার দিলেন। চিকিৎসায় রোগি পক্ষের খামখেয়ালিপনা অবলোকনে কিছুটা রাগ-গোস্বাও হলেন।

পুনরায় শুরু হল পরীক্ষা-নিরিক্ষা, এখানে-ওখানে নেওয়া, ফোঁড়াফুড়ি, রক্ত নেওয়া। সে যাক, এভাবেই চিকিৎসা চলল।

এরই মধ্যে আজ মাগরিবের পূর্বক্ষণে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সংগ্রামী মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব হুইল চেয়ারে করে চার তলায় উপস্হিত। এটাই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বড় পীড়াদায়ক। যিনি নিজেই অসুস্হ-অচল, তাঁর পক্ষে এমন ঝুঁকিপূর্ণ সহমর্মিতা ভারি কষ্টদায়ক।

আল্লাহ তায়া’লা তাঁকে জাযায়ে খাইর দান করুন। এরই মধ্যে অনেকেই ফোন করে দেশ-বিদেশ থেকে ফোনে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ডাক্তারের কঠোর বারণ এবং অসুস্থতার দুর্বলতায় আমি তাঁদের সাথে কথা বলতে পারিনি। দোয়াও করেছেন অনেকেই। তাই তো এখন অনেকটা সুস্হবোধ করছি। যদিও ডাক্তার এখনই সুস্থ ভাবতে একদম রাজি নন। সকলের শুকরিয়া আদায় করছি এবং দোয়া কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ আপনাদের সকলের সহায় হোন।

[হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন থেকে নিজের এই অনুভূতিটা শেয়ার করেছেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সহসভাপতি এবং পরিচালক ও শায়খুল হাদীস- জামিয়া ইসলামীয়া শায়েখ জাকারিয়া (রাহ.), রামপুর, ঢাকা।]