।। মুফতি এনায়েতুল্লাহ ।।
বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে মসজিদ একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ইমাম ও খতিব শুধু নামাজ পরিচালনাই করেন না, বরং সমাজের নৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছেছে। সরকার পরিবর্তনের পর বহু স্থানে মসজিদ কমিটি বদলে দেওয়া হয় এবং নতুন কমিটি তাদের পছন্দসই ইমাম-খতিব নিয়োগ দেয়। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা বহু ইমাম-খতিব হঠাৎ করেই চাকরিচ্যুত হচ্ছেন।
অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ধরনের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। বরং অভিযোগ আসছে, মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ এখন নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবে ইমাম-খতিব পরিবর্তনকে ব্যবহার করছে। এতে করে মসজিদ, যা মূলত অরাজনৈতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, তা হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র।
অধিকাংশ ইমাম-খতিব কওমি শিক্ষাপ্রবাহ থেকে আসেন। তারা প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট না থাকায় তাদের চাকরিচ্যুতি বা হয়রানির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ গড়ে ওঠে না। ফলে কমিটির একতরফা সিদ্ধান্তে ইমাম-খতিবরা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
এই প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলামের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এসে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনটি যেহেতু মূলত কওমি আলেমসমাজের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই ইমাম-খতিবদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নে তাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এর একটি বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে একটি ‘বিশেষ সেল’ গঠন। এ সেলে ক্ষতিগ্রস্ত ইমাম-খতিবরা অভিযোগ জানাতে পারবেন, আর সেলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে তিনটি সুফল পাওয়া সম্ভব—
* ইমাম-খতিবদের প্রতি রাজনৈতিক হয়রানি কমবে।
* মসজিদে ধর্মীয় নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
* হেফাজতের প্রতি সাধারণ আলেমসমাজের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।
মসজিদ সমাজের ঐক্যের প্রতীক। সেখানে অযথা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ঢুকতে দিলে তা শুধু ইমাম-খতিবদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও ক্ষতিকর। তাই এখন সময় এসেছে হেফাজতে ইসলামকে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার—যাতে ইমাম-খতিবরা নিশ্চিন্তে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং মসজিদগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে প্রকৃতপক্ষে ইসলামের দাওয়াতি কেন্দ্র হিসেবে টিকে থাকে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ