Home সোশ্যাল মিডিয়া জোট-বিজোটের খেলা ও হেফাজত

জোট-বিজোটের খেলা ও হেফাজত

।। মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানী ইসলামাবাদী ।।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোট–বিজোটের হিসাব-নিকাশ ততই জমে উঠছে। কে কার সঙ্গে জোট করবে, কার সঙ্গে গোপন সমঝোতায় যাবে—এইসব কৌশল ঘিরেই নেতাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। বিষয়টি নতুন নয়, তবে এবারের আলোচনায় বিশেষভাবে এসেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অরাজনৈতিক বলে পরিচিত করলেও, নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে তাদের ভূমিকা নিয়ে এখন সরব আলোচনার জন্ম হয়েছে।

অতীতে হেফাজতকে ঘিরে এমন প্রশ্ন উঠলেও তা ছিল আড়ালেই। শোনা যায়, আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর সময়ে কিছু প্রার্থী সংসদীয় মনোনয়নের জন্য তাঁর সুপারিশ চাইতে গিয়েছিলেন। তবে বর্তমান আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী দা.বা. সরাসরি রাজনীতির মাঠে পা না রাখলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সৌজন্য সাক্ষাতে তাঁর দ্বারস্থ হচ্ছেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াত এবং সম্ভবত এনসিপি—তাঁর সঙ্গে নির্বাচনপূর্ব সাক্ষাৎ করেছেন।

আমীর হেফাজতের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য এরই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় এসেছে। তিনি নিজে কখনো নেতাদের ডাকেননি বা রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাননি; বরং নেতারাই তাঁর কাছে গেছেন দোয়া চাইতে। কিন্তু সাক্ষাতের এক পর্যায়ে জামায়াতের নেতা জনাব শাহজাহান চৌধুরীর উপস্থিতিতে মওদূদী মতবাদ নিয়ে আলোচনা হলে পরিস্থিতির ভিন্ন মোড় নেয়। বাবুনগরী দা.বা. স্পষ্টভাবে জানান, তিনি মওদূদীর ব্যক্তিত্বকে সম্মান করলেও তাঁর মতাদর্শকে সমর্থন করেন না। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে হাটহাজারী মাদরাসার উস্তাদদেরও অবহিত করা হয়, এবং হেফাজত প্রধান ফিরকায়ে বাতিলা সম্পর্কে স্পষ্ট অবস্থান নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

আরও পড়তে পারেন-

এই প্রেক্ষাপট না জেনে আমীরের সাম্প্রতিক জামায়াত-বিরোধী বক্তব্য বোঝা কঠিন। এগুলোকে নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচার করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তবে রাজনীতির মাঠে এসব বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতেই পারে, এবং সেটি হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে নয়।

এদিকে, বিএনপি প্রকাশ্যেই বলেছে যে তারা হেফাজতের ভেতরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমর্থন চায়। কারণ, কওমীভিত্তিক একাধিক ইসলামী দল ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতা বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র বলছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের পর আমীর হেফাজতের সঙ্গে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা বসুন্ধরায় সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই হেফাজতের শীর্ষ নেতা মাও. আজিজুল হক ইসলামাবাদী মন্তব্য করেন—কওমীভিত্তিক দলগুলো শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই যাবে।

তবে এখানেই ধাঁধা। গত বছর জামায়াত আয়োজিত এক সভায় তিনিই আবার বলেছিলেন, ব্যালটের যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া ইসলামী ঐক্যের সুফল মিলবে না। অর্থাৎ, একদিকে তিনি জামায়াতের নির্বাচনী নেতৃত্বকে প্রশংসা করেছেন, আবার অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। এ অবস্থানকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?

প্রশ্ন উঠছে—হেফাজতের ভেতরে কি আলাদা একটি মহল সক্রিয়, যারা বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগে যুক্ত? আমীর হেফাজত কি সে সম্পর্কে অবহিত? এসব প্রশ্ন আপাতত অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে। তবে এটুকু স্পষ্ট—হেফাজতকে ঘিরে রাজনৈতিক সওদাবাজি এখন বাস্তবতা, এবং নির্বাচনের পথে এটি আরও প্রকট হবে বলেই মনে হচ্ছে।

লেখক: আলেম, সমাজচিন্তক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।