Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর বিধবা স্ত্রী সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও ব্যয় নির্বাহের জন্য চাকুরী করতে পারবেন কিনা?

বিধবা স্ত্রী সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও ব্যয় নির্বাহের জন্য চাকুরী করতে পারবেন কিনা?

প্রশ্ন (ক) আমার স্বামী গত ৪০ দিন হয় মারা গেছেন। তিনি মৃত্যুর আগে অসংখ্য বার আমাকে এবং আমার সন্তানদের আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দিয়েছেন। তারপরও তার দুটো কন্যা সন্তান আমার কাছে আমানত। আমি একজন শিক্ষিতা মহিলা। আমার আলাদা কোন সংসার নেই। শ্বশুর বাড়ী গ্রামে। সেখানে লেখা পড়ার ভালো কোন পরিবেশ এবং স্কুল-মাদ্রাসা নেই। দুই বাচ্চার বয়স যথাক্রমে ৯ বছর এবং ৮ মাস। এদেরকে আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষ করতে হলে শহরের ভাল পরিবেশ চাই। কিন্তু সে আর্থিক সামর্থ্যও আমার নেই। আর এদেরকে ভাল পরিবেশে মানুষ করার দায়ভার কেউ নেবেন বলেও আশা করতে পারছি না। আমি মহিলা মানুষ, দুটো কন্যা সন্তানের দায়িত্ব তো আর সাধারণ ব্যাপার না। এই মুহূর্তে আমার বাইরে একটা চাকুরী করা সম্পর্কে শরয়ী বিধান কি? জানালে উপকৃত হব।

(খ) স্বামী মৃত্যুর পর স্ত্রীর কীভাবে শোক পালন করতে হয়? স্ত্রীর নাক ফুল খোলা কি শরীয়ত স্বীকৃত? বিধবা স্ত্রীকে কি সাদা শাড়ী পরতে হয়? আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমি নাকফুল খুলিনি। আমি খুলতে চেয়েছি কিন্তু আমার শ্বাশুড়ী সইতে পারবে না বলে অন্যান্য আত্মীয়রা খুলতে দেয়নি। ২৮ দিনের দিন একজনের কাছে জানলাম যে, নাক-ফুল খোলা না-কি সুন্নাত, না খুললে গোনাহগার হতে হবে, তখন খুলে ফেলি। এতে কি নাক-ফুল লাগানো অবস্থার দিনগুলোতে আমার স্বামীর প্রতি অ-শ্রদ্ধা বা অ-ভক্তি করা হয়েছে? আসলে আমি আন্তরিক ভাবে তেমন কিছু চাইনি। ক্ষমা পাবার উপায় কি?

– সালমা আক্তার, মাদ্রাসা রোড, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।

জবাব: (ক) ফিক্বাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদি অধ্যয়নে প্রতিয়মান হয় যে, আপনি যে চাকুরী করতে ইচ্ছুক, উক্ত চাকুরী যদি শরীয়ত সম্মত হয় এবং চাকুরী করতে গিয়ে পর্দা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য শরীয়তের কোন হুকুম লঙ্ঘনের আশংকা না হয়, তাহলে আপনার জন্য চাকুরী করার অনুমতি আছে। আর যদি উক্ত চাকুরী শরীয়ত সম্মত না হয় এবং চাকুরী করতে গিয়ে পর্দা ও আপনার নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যাপারে আশংকা থাকে, তাহলে আপনার জন্য এমন চাকুরী করা জায়েয হবে না। এমন পরিস্থিতিতে আপনি নিজের বাসায় থেকেই আয়-রোজগারের নিরাপদ কোন উদ্যোগ নিয়ে বিবেচনা করুন। ছোট বাচ্চাদেরকে টিউশনি, কোন হস্তশিল্পের কাজ, সেলাই কাজ, অনলাইন ভিত্তিক আউট সোর্সের উপর কাজ, লেখালেখি, অনুবাদ ইত্যাদি হতে পারে।

(খ) কোন স্ত্রীর স্বামী ইন্তিকাল করলে উক্ত স্ত্রীর জন্য চার মাস দাশ দিন পর্যন্ত শোক পালন করতে হবে। আর শোক পালনের বিষয়ে বিধান হলো- এ সময় উক্ত বিধবা স্ত্রী স্বামীর বাড়ী হতে অন্য কোথাও রাত্রে আসা-যাওয়া করতে পারবে না। এবং এসময় কোন সৌন্দর্য বর্ধন বা আকর্ষণ উদ্দীপক কোন প্রকার খুশবো, তৈল, সুরমা, মেহেন্দী, কলপ ইত্যাদি ব্যাবহার করা নিষেধ। পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যেও স্বাভাবিক ঘরোয়া পরিবেশের অতিরিক্ত আকর্ষনীয়, নকশীদার ও মূল্যবান পোষাক-পরিচ্ছদ পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর সোনা-রূপার অলংকার এবং যে কোন প্রকারের সাজ-সজ্জা ব্যাবহার করা নিষেধ। নাক-ফুল পরা নিয়ে মতভেদ আছে। কারো কারো মতে এটা সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করা হয় বিধায় উক্ত সময় নাক-ফুল ব্যাবহার করা নিষেধ। আবার কারো কারো মতে নাকফুল সৌন্দর্য চর্চায় পড়ে না, এটা অতি সাধারণ স্বাভাবিক ঘরোয়া অলংকার। কেউ পরলেও গুনাহ হবে না। নাকফুল নিয়ে যেহেতু মতভেদ আছে, না পরাই উত্তম। তবে কেউ পরলেও এ জন্য বড় রকমের গুনাহ হবে না। স্বাভাবিকভাবে এজন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করাই যথেষ্ট। (বিস্তারিত জানতে দেখুন- তাতারখানিয়্যাহ- ১/৫৩৩, দুররে মুখতার- ৩/৫১০ পৃষ্ঠা)।

জবাব লিখেছেন- মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী

ফাযেলে- দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা), মুহাদ্দিস ও মুফতি- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং উপদেষ্টা সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ডটকম।