Home শীর্ষ সংবাদ আলেমদের উপর বাড়তি নৃশংসতা: গভীর ইসলাম বিদ্বেষ থেকেই কি রোহিঙ্গা গণহত্যা!

আলেমদের উপর বাড়তি নৃশংসতা: গভীর ইসলাম বিদ্বেষ থেকেই কি রোহিঙ্গা গণহত্যা!

মিয়ানমারের রাখাইনের ইন ডিন গ্রামে দশজন রোহিঙ্গা পুরুষের গণহত্যার যে রিপোর্ট ও ছবি রয়টার্স ফাঁস করার পর সরাবিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দার জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, সেই নিহত ১০ জনের মধ্যে একজন ছিলেন মওলানা আব্দুল মালিক। যিনি একাধারে একজন আলেম ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। এই গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিলো গত বছরের ২রা সেপ্টেম্বর।

রাখাইনের অন্যান্য মসজিদের মতো মাওলানা আব্দুল মালেক যে মসজিদের ইমাম ছিলেন, সেই মসজিদে আযান দেয়ার জন্য কোন লাউডস্পিকার ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। তবুও মওলানা আব্দুল মালিকের কণ্ঠেই দৈনিক পাঁচবার আযান ধ্বনিত হতো এই গ্রামীণ জনপদের মসজিদটিতে। তাঁর কাছেই ইসলামের শিক্ষা পেতেন ইন ডিনের দরিদ্র মানুষেরা। তিনি সেই দরিদ্রপীড়িত জনপদে ছিলেন ইসলামের একমাত্র আলোকবাহী আলেম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ইন ডিন গ্রামে গণহত্যার শিকার সেই দশজনের ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে গুলিবিদ্ধ করে। একমাত্র মাওলানা আব্দুল মালেককেই হত্যা করা হয় শিরোচ্ছেদ করে। ধরালো অস্ত্র দিয়ে মাওলানা আব্দুল মালেকের ধড় থেকে মাথাকে বিচ্ছিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলা হয়।

ইন ডিন গ্রামে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হলেও মাওলানা আব্দুল মালেককে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে শিরোচ্ছেদ করে। ছবি- রয়টার্স।

স্থানীয় রোহিঙ্গা মুসলিমরা জানান, মাওলানা আব্দুল মালিকের প্রতি এই বাড়তি আক্রোশের কারণ হচ্ছে, তিনি আলেম ছিলেন এবং ইসলামের বিধিবিধানের প্রচার করতেন গ্রামবাসীদের মধ্যে। তিনি বৌদ্ধদের রক্ষ চক্ষুকে উপেক্ষা করে নিয়মিত মসজিদে আযান দিতেন ও নামাযে ইমামতি করতেন। আর এই কারণেই তাঁকে হত্যার সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাড়তি আক্রোশ দেখিয়ে নৃশংসতা চালায় তার উপর।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে, সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলমানদের তুলনায় যারা আলেম এবং ধর্মপালন করে চলেন, মুখে দাড়ি আছে, পাঞ্জাবি পরেন, আর নারীদের মধ্যে যারা হিজাবধারী, এদের উপর অতিরিক্ত নৃশংসতা প্রয়োগ করে বর্মি সেনাবাহিনী। আলেমরা ধরা পড়লে তাদেরকে জবাই করা হয় এবং শরীর থেকে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আলাদা করে শরীর বিকৃত করে হত্যা করা হয়। অনেক সময় আলেমদেরকে গয়ে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

কার্যতঃ মিয়ানমারে যা চলছে সেটা শুধু নিছক জাতিগত রোহিঙ্গা বিদ্বেষ থেকে নয়। বেছে বেছে রোহিঙ্গা আলেম ও পর্দানশীন নারীদের উপর অতিরিক্ত নৃশংসতা থেকে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এই গণহত্যার আড়ালে লুকিয়ে আছে গভীর এক ইসলাম বিদ্বেষ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়টা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন পর্যবেক্ষক মহল। -রয়টার্স।