Home ইসলাম কুরআনী হিদায়াতের এক মুগ্ধকর গল্প!

কুরআনী হিদায়াতের এক মুগ্ধকর গল্প!

।। সাইমুম সাদী ।।

মাথায় খোপা বাঁধা একটি ছেলেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামায পড়তে দেখলাম গতকাল। কিছুক্ষণ পর ইসলামী বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই কিনতেও দেখলাম। কিছুটা যেচে গিয়ে কথা বললাম। সালাম কালামের পর আলাপ করলাম ক’মিনিট।

বললাম, সম্ভবত ব্যান্ড সংগীত নিয়ে কাজ করেন?

উত্তরে জানালেন, ‘অনেকেই তাই মনে করে। চুল লম্বা রাখি ফ্যাশন হিসেবে। গায়ক হিসেবে নই। তবে ব্যান্ডের ভক্ত ছিলাম এক সময়’।

: কি বই কিনলেন আজ?

: কুরআন সম্পর্কিত বই খুঁজতে এসেছি। এখনো কিনিনি। তবে কিনব ইনশাআল্লাহ। এখন দেখছি।

: কিন্তু…

আমাকে কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বললেন, “আপনার প্রশ্ন, চুলে খোপা আর হাতে চুড়ি পরে কীভাবে কুরআনের লাইনে এসেছি- এইতো?!”

আমি হেসে মাথা নাড়ালাম।

এরপর তিনি জানালেন- “সারাক্ষণ গানে ডুবে থাকতাম আমি। আইউব বাচ্চু ছিলেন আমার গুরু। সাকিব খান ছিলেন আমার পছন্দের নায়ক তাছাড়া দেশী বিদেশী …”।

ইতিমধ্যে তার অন্য এক বন্ধু এসে যোগ দিলো আমাদের সাথে। ওর কানে দুল দেখে টাসকি খেলাম।

তিনি বলতে লাগলেন- “ওকে দেখে আশ্চর্য হতে পারেন। আমি বলছি শুনুন। একদিন ইউটিউবে এক মাওলানার ওয়াজ শুনলাম কুরআন নিয়ে।কুরআনে নাকি সব সমস্যার সমাধান আছে”।

“এবং তখন থেকে আমি ও আমার বন্ধু মিলে কুরআন ইন্টারনেট থেকে পড়তে শুরু করলাম। প্রশান্তির পরশ যেনো সারা অস্তিত্বে ছড়িয়ে পড়লো। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার মুফতি সাহেবের সাথে দেখা করে কুরআন সম্পর্কে জানতে চাইলাম। জানলাম”।

“এখন কুরআনের খেদমতেই বাকি সময় ব্যায় করার নিয়ত করেছি। গান ছেড়ে দেব চিন্তা করছি। দোয়া করবেন”। এ পর্যন্ত বলে একটু থামলেন।

কথা অনেক লম্বা। তারা দু’জন বিদায় নিয়ে বই কিনতে চলে গেলেন।

আমার মনে পড়ল, বুয়েটের আবরার ফাহাদের কথা। আবরার কোনও ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলে ছিলেন না। আবরার জানতেন, বুয়েটে ইসলাম চর্চা বিপদজনক। যেকোনো মুহুর্তে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা। তারপরও ছেলেটি কেমন দু:সাহসে ইসলাম চর্চা করতেন,নামাযের দাওয়াত দিতেন!

মূলত: এটাই হচ্ছে কুরআনের অলৌকিকত্ব। যিনি পড়েন, তাকেই কুরআন প্রভাবিত করে। চুম্বকের মত টেনে নেয়। এবং এজন্যই ইসলাম আমাদের ইসলামী দল ও ব্যাক্তিত্বের কাছে মুহতাজ নয়।

শুধুমাত্র কুরআনের সংস্পর্শে নিজে আসুন, অন্যকে আসতে দিন। উদ্বুদ্ধ করুন। হিদায়েতের পথে ফিরে আসবে মানুষ।

ওই দুই বন্ধুর ছবি দিচ্ছি না, তাদের অনিচ্ছা তাই। তবে ছবি রেখে দিয়েছি ফোনে৷। কোনো একদিন হয়তো দেব।

আসুন, তাদের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াতের পথে অনেক দূর নিয়ে যাক। এবং কুরআনের সংস্পর্শে থাকার জন্য আমাদেরকেও তাওফীক দান করুন রাব্বুল ইজ্জত।

লেখক: তরুণ আলেম, গবেষক, গ্রন্থ লেখক ও জনপ্রিয় সোশ্যালমিডিয়া এক্টিভিস্ট।