Home ফিকহ ও মাসায়েল হাদীসশাস্ত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা রাহ. (দুই)

হাদীসশাস্ত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা রাহ. (দুই)

।। হাফেয মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

ইমাম আযম (রাহ.)-এর ধর্মানুরাগঃ ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) আল্লাহ’র ওলী ও বড় পুণ্যবান বান্দা ছিলেন। একদা কুফা শহরে জনৈক লোকের একটি ছাগল চুরি হয়েছে বিধায় তিনি সুদীর্ঘ সাত বৎসর পর্যন্ত কোন ছাগলের গোশ্ত খাননি। (মিফতাহুস্ সাআদাহ-১/৭৮)। আল্লামা আহমদ ইব্নে মুস্তফা (রাহ.) মিফতাহুস সাআদাহ নামক গ্রন্থে লিখেন যে, ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) এত অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন যে, তিনি চল্লিশ বছর যাবৎ ঈশার নামাযের ওযূ দ্বারা ফজরের নামায আদায় করেন। এবং প্রতি মাসেই তিনি ৬০ (ষাট) বার কুরআন শরীফ খতম করতেন। দিবসে এক খতম রজনীতে এক খতম। তিনি যে স্থানে শাহাদাতবরণ করছেন সেখানে তিনি ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) বার কুরআন মাজীদ খতম করেন। (মাবাদিয়াতে ফিক্বাহ-৩৭ পৃঃ)।

ইমাম আযম (রাহ.)এর স্বপ্নঃ

বর্ণিত আছে, ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) এক রজনীতে স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর মুবারক থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাড়গুলি তাঁর বক্ষস্থলের সন্নিকটে একত্রিত করছেন। (মিফতাহুস্ সাআদাহ-২/৮২)।

এই স্বপ্নের কারণে ইমাম আযম (রাহ.) খুব ভয় পেয়ে গেলেন। তৎকালের প্রসিদ্ধ স্বপ্নব্যাখ্যাতা, ইমাম মুহাম্মদ ইব্নে সিরীন (রাহ.)কে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলেই ইমাম মুহাম্মদ ইব্নে সিরীন (রাহ.) বলেন, এই স্বপ্ন আপনার নয়। এটা আবু হানিফা (রাহ.)এর। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) বললেন, আমিই আবু হানিফা। তখন ইমাম মুহাম্মদ ইব্নে সিরীন (রাহ.) বললেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন বা ধর্মকে প্রচার-প্রসার করবেন। (মাবাদিয়াতে ফিক্বাহ-৩৯ পৃঃ)।

ইমাম আযম (রাহ.)-এর হাদীসের উস্তাদগণঃ

মোল্লা আলী ক্বারী (রাহ.) “মুসনাদে আবি হানিফা”-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফা (রাহ.)-এর উস্তাদের সংখ্যা ৪,০০০ (চার হাজার)  বলে উল্লেখ করেছেন। (দরসে তিরমিযী-১/৯২)।

হাদীস শিক্ষার জন্য যিনি কুফা বসরার তৎকালীন মুহাদ্দিসগণের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ালেন, বৎসরের পর বৎসর ধরে হরম শরীফের হাদীস শিক্ষাকেন্দ্রে হাদীস শিক্ষায় রত থাকলেন, মদীনা শরীফের হাদীসের শাইখবৃন্দ যাঁকে হাদীসের সনদ দানে ভূষিত করলেন। আতা ইব্নে আবী রাবাহ, নাফে ইব্নে উমর, আমর ইব্নে দীনার, মাহারীব ইব্নে ওয়াসার, আমান কূফী, ইমাম বাকের, আল কামা ইব্নে মারসাদ, মাক্হুল শামী, ইমাম আওযাঈ, মুহাম্মদ ইব্নে মুসলিম যুহ্রী, আবু ইসহাক সাবেঈ, সুলাইমান ইব্নে ইয়াসার, আবদুর রহ্মান ইব্নে হরমুয, আল্ আবায, মনসূর আল্ মু’তাসিম, হিশাম ইব্নে ওরওয়া প্রমুখ বুযুর্গ মুহাদ্দিসগণ যার উস্তাদ ছিলেন তিনি হাদীস শাস্ত্রে কিরূপ জ্ঞানার্জন করতে পারেন? হাদীস শাস্ত্রে তিনি কত গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে পারেন? এটা কল্পনা করাও মুশ্কিল।

প্রথম অংশ পড়ুন- ‘হাদীসশাস্ত্রে ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.)’

হাফেয ইব্নে হাজার আসকালানী (রাহ.) “তাহ্যীবুত্তাহ্যীব” নামক গ্রন্থে ইমাম আযম (রাহ.)এর উস্তাদবৃন্দের মধ্যে নিুলিখিত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। আ’তা ইব্নে আবী রাবাহ মক্কী, আসেম ইব্নে আবিল খাওয়াদ কূফী, আলকামা ইবনে মারসাদ কূফী, হাহাম ইব্নে আতাবা কূফী, সালমা ইব্নে কুহায়েল কূফী, ইমাম বাকের মাদানী, আলী ইবনুল আকমার কূফী, যিয়াদ ইব্নে আলকামা কূফী, হিশাম ইব্নে ওরওয়া মাদানী, ইয়াহইয়া ইব্নে সাঈদ মাদানী, আবদুল করীম ইব্নে উমাইয়া বসরী, আবু সুফিয়ান সাদী, আতিয়া ইব্নে সাঈদ কূফী, আদী ইব্নে সাবেত আনসারী কূফী, সাঈদ ইব্নে মাসরূক কূফী প্রমুখ। (ইমাম আযম আবু হানিফা-৪৯ পৃঃ)।

আল্লামা যাহাবীর “তাবাক্বাতুল হুফ্ফায” গ্রন্থে নিুলিখিত উস্তাদগণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবু ইসহাক আস্সাবেঈ কূফী, নাফে ইব্নে উমর মাদানী, আবদুর রহমান ইব্নে হরমুযুল মাদানী, কাতাদাহ বসরী, আমর ইব্নে দীনার মক্কী, মাহারেব ইব্নে দসার কূফী, হাশিম ইব্নে হাবীবুস্-সেরাফ কূফী, ইমাম আওযাঈ, আবদুল্লাহ ইব্নে উমর ইব্নে হাফ্স মাদানী, আ’মাশ কূফী, আসেম ইব্নে সুলাইমানুল আহওয়াল বসরী, আ’তা ইব্নে আবী মুসলিম খুরাসানী, আ’তা ইব্নে সায়েব আস্সাকাফী, মনছুর আল মু’তাসির, মনছুর ইব্নে যাযান, আবদুল মালেক ইব্নে উমর কূফী, আবু যুবায়ের মুহাম্মদ ইব্নে মুসলীম মক্কী, আমর ইব্নে মারয, মাকহুল শামী, আবদুল আযীয ইব্নে রফী, সেমাক ইব্নে হারব, ইয়াযীদুল ফকীর কূফী, মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদের মাদানী, কায়েস ইব্নে মুসলিম কূফী প্রমুখ। (ইমাম আযম আবু হানিফা-৫০ পৃষ্ঠা)।

“তাহ্যীবুল কামাল” নামক গ্রন্থে যে সমস্ত উস্তাদবৃন্দের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন, আবু সাঈদ মাওলা ইব্নে আব্বাস, মুহাম্মদ ইবনে শিহাব যুহরী, মুহাম্মদ ইব্নে সায়েবুল কলবী কূফী, কাবুস ইব্নে আবী যারইয়ান কূফী, আওন ইব্নে আবদুল্লাহ কূফী, ইকরামা মাওলা ইব্নে আব্বাস মক্কী, আবদুল্লাহ ইব্নে দীনার মাদানী, তাউস ইব্নে কায়সান ইয়ামানী, শায়বান ইব্নে আবদুর রহমান বসরী, শাদ্দাদ ইব্নে আবদুর রহমান বসরী, রবীআতুর রায়ী, খালেদ ইব্নে আলকামা আলওবাঈ, হারেস ইব্নে আবদুর রহমান মক্কী, ইসমাঈল ইব্নে আবদুল মালেক মক্কী, ইবরাহীম ইব্নে মুহাম্মদ কূফী প্রমুখ। (ইমাম আযম আবু হানিফা-৫০ পৃঃ)।

“কিতাবুল আসার” নামক গ্রন্থে যে সমস্ত উস্তাদবৃন্দের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেনঃ মুসা ইব্নে আবী আয়েশা কূফী, সালাত ইব্নে বাহরাম, উসমান ইব্নে আবদুল্লাহ ইব্নে হাওশার বিলাল, হাশিম ইব্নে আবিল হায়সাম,  হুসাইন ইব্নে আবদুর রহমান, মা’ন, মাইমুন ইব্নে সিয়াহ, জাওয়াবুল ইয়াতীমী সালেমুল আগতাস, ইয়াহইয়া ইব্নে আমর ইব্নে সালমা, আমর ইব্নে যুবায়ের, আবদুল্লাহ ইব্নে উমর, মুহাম্মদ ইব্নে মালেক হামদানী, আবুস্ সাওয়ার, খারেজা ইব্নে আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ ইব্নে আবি যিয়াদ, কাসীরুল আসাম্ম, হামীদ আল আ’রাজ, আবুল আতূফ, আবদুল্লাহ ইব্নুল হাসান, সুলাইমান আশ্শায়বানী, সাঈদ আল মারযিবান, উসমান ইব্নে আবদুল্লাহ, আবু জাজিয়াহ প্রমুখ। (ইমাম আযম আবু হানিফা-৫১ পৃঃ)। [আগামী কিস্তিতে সমাপ্য]

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল- জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া উত্তরা, ঢাকা ও রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা এবং খতীব-উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম।

আরও পড়তে পারেন- ‘মহিলা মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে হাফেয মাওলানা নাজমুল হাসানের বিশেষ সাক্ষাৎকার’