Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গ্যাস্ট্রিক রোগ: কারণ, উপসর্গ ও প্রতিকার

গ্যাস্ট্রিক রোগ: কারণ, উপসর্গ ও প্রতিকার

- প্রতিকী।

।। ডা. ইসমাইল আযহারি ।।

গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রিক রোগ কি? : আমরা যখন কোন খাদ্য গ্রহণ করি, তখন খাদ্য পরিপাকের জন্য এবং খাদ্যে উপস্থিত অনুজীবসমূহকে ধ্বংস করার জন্য পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নামক এক প্রকার এসিড ক্ষরিত হয়, যা খাদ্য পরিপাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

একজন সুস্থ মানুষের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় ১.৫ -২ লিটার হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত  হয়। এই হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ এর মাত্রা যদি কোন কারণে বেড়ে যায়, তখন পাকস্থলির  ভিতরের আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। হাইড্রোক্লোরিক এসিড দিয়ে মিউকাস মেমব্রেনের যে প্রদাহ হয়, এই অবস্থাকে গ্যাস্ট্রাইটিস রোগ বলে।

গ্যাস্ট্রাইটিস হবার প্রক্রিয়া

আমরা জেনেছি যে, আমাদের পাকস্থলি  থেকে প্রতিনিয়ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরিত হয়, তাই যখন পাকস্থলী খালি (empty stomach) থাকে। তখন হাইড্রোক্লোরিক এসিডসমূহ ব্যবহৃত না হয়ে অধিক পরিমাণে জমা হয়ে যায়। কারণ হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কাজ হচ্ছে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করা। যখন খালিপেট থাকে, কিংবা যখন পেটে কোন খাবারই থাকবেনা, তখন অতিরিক্ত এসিড পাকস্থলীতে জমে যায়। অতিরিক্ত এসিডের কারণে তখন পাকস্থলীর ভিতর ক্ষত হয়ে যায়, এবং পর্যায়ক্রমে তা অন্ত্রের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। আবার পাকস্থলির উপরের দিকে খাদ্যনালী তথা ইসোফেগাসের দিকেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়তে পারেন-

‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ

কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইসলামের শিক্ষা: ফরহাদ মজহার

আদর্শবানরূপে নিজেকে গড়তে চাইলে চার গুণাবলী অর্জন করতে হবে

‘হিজাব’ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করে: মার্কিন গবেষক!

বিশ্বকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস

এসিড যদি পাকস্থলির উপরের দিকে খাদ্যনালী বা ইসোফেগাসকে আক্রান্ত করে, তবে এই অবস্থাকে Gastro-Esophageal Reflux disorder (GERD) বলা হয়। এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের বেশি বেশি ঢেকুর আসবে এবং রোগী তার বুক জ্বালাপোড়া করে বলে অভিযোগ করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে গলাতে কফ জমে থাকতে পারে। বমিবমি ভাব থাকবে।

প্রদাহের পরিমাণ বেশি বেড়ে পাকস্থলির মাঝে আলসার তৈরী করতে পারে, যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে থাকি। তখন বুকের মাঝখানে প্রচন্ড ব্যাথা হবে,  রোগী বলবে, আমার বুক জ্বালাপোড়া করতেছে,  ব্যাথায় বুকের হাঁড় ভেংগে যাচ্ছে।  এইভাবে ধারাবাহিক আলসার হতে থাকলে সেখানে কোষসমূহের গাঠনিক পরিবর্তন আসতে পারে, এক প্রকারের কোষ অন্যপ্রকার কোষে রুপান্তরিত হতে পারে, যাকে Metaplasia বলা হয়, এবং পরিশেষে তা থেকে Dysplasia এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের উপসর্গ

১. পেটের বাম পাশে ব্যথা,মাঝখানে ও ব্যাথা হতে পারে।
২. বুক জ্বালাপোড়া করা।
৩. খাবারে অরুচিবোধ হওয়া।
৪. পেট জ্বালাপোড়া করা।
৫. পেট ফেঁপে থাকা।
৬. মাথা ঘুরানো।
৭. বমি বমি ভাব।
৮. অল্প খাবার এর পর পেট পুরে গেছে মনে হওয়া।
৯. GERD এর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, অধিক হারে ঢেকুর ও বমিভাব।
১০. ডিউডেনাম আলসার হলে পেটের মাঝামাঝি ব্যথা এবং ব্যাথা পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়া।
১১. গ্যাস্ট্রিক আলসারের সবচেয়ে আনকমন উপসর্গ হচ্ছে খাবার চাহিদা বেড়ে যাওয়া। অধিকহারে খাবার পরেও রোগীর ক্ষিধা লাগবে। কারণ আলসারের কারণে অনেক সময় দেখা যায়, পাকস্থলি থেকে মস্তিস্কের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রে  নার্ভ সিগনাল সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারেনা। তাই রোগী পেট ভরে খেলেও মস্তিস্কের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র  সঠিক মেসেজ না পাওয়ার কারনে ক্ষুধার পরিমান বাডিয়ে দেয়।

গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের কারণ

১. অনিয়মিত খাবার খাওয়া।
২. তেলে ভাজা খাবার কিংবা অধিকহারে তৈলাক্ত খাবার খাওয়া।
৩. কোল্ড ড্রিংক খাওয়া।
৪. ধূমপান করা।
৬. পানি কম খাওয়া।
৭. রাত্রে খাবার খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে যাওয়া (এই ক্ষেত্রে GERD হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি)।
৮. অধিক হারে গোস্ত খাওয়া।
৯.  ব্যাথানাশক  ঔষধ  খাবার কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে। তাই ব্যাথানাশক ঔষধ খেলে  সাথে একটি গ্যাস্ট্রাইটিস প্রতিরোধী ঔষদ  দিয়ে দিবে।
১০. H. Pylory ব্যাক্টেরিয়া  দ্বারা ইনিফেকশন হলে ডিউডেনাল আলসার হতে পারে।

গ্যাস্ট্রাইটিস প্রতিরোধে পরামর্শ

১. নিয়মিত খাবার খাবেন, বেশী বেশী পানি পান করুন।
২. রাত্রে খাবারে পর ২০-৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে ঘুমাবেন।
৩. নিয়মিত সকাল বেলায় ইসপগুলের ভূসি ভিজিয়ে পান করুন। এতে করে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিউট্রালাইজড হয়ে যাবে।
৪. সকালে খালি পেটে ২ গ্লাস পানি পান করুন।
৫. দৈনিক কখনোই যেন ১৩০ গ্রামের বেশী গোস্ত খাওয়া না হয়।
৬. তেলে ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন।
৭. অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৮। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন

গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্যে মেডিসিন

১। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরি শ্রেণীর মেডিসিনগুলি এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে ভূমিকা রাখে। যেমন – Omeprazole. Esomeprazole, Pantoprazole, Rabeprazole ইত্যাদি
২। এন্টাসিড শ্রেণীর ড্রাগসমূহ।
৩। H. pylori ডায়াগনোসিস হলে ট্রিপল থেরাপি দেওয়া হয়।
৪। বমিবমি ভাব থাকলে Domperidone ব্যবহার হয়।
তবে যে কোনো মেডিসিন শুরুর পূর্বে একজন এমবিবিএস  ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

ডা. ইসমাইল আযহারি
(এম,বি,বি,এস,)ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।

উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

করোনা আক্রান্ত হয়ে যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী