Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা করোনাভাইরাস: অতিরিক্ত ওজন কেন কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বাড়ায়?

করোনাভাইরাস: অতিরিক্ত ওজন কেন কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বাড়ায়?

ছবি- বিবিসি।

উম্মাহ অনলাইন: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস সহ বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে জানা গেছে। প্রাথমিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থাকলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়তে পারে।

কিন্তু এরকম হওয়ার কারণ কী?

স্থূলতা কি আসলেই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাড়ায়?

বেশ কিছু গবেষণাতেই এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।

১. যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ১৭ হাজার কোভিড-১৯ রোগীকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে যাদের, – বডি ম্যাস ইনডেক্স ৩০ এর ওপর – তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩% বেড়ে যায়।

২. যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ইলেকট্রনিক রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আর ঐ রোগীর যদি ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মত সমস্যা থাকে তাহলে ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

৩. যুক্তরাজ্যের আইসিইউ’তে থাকা জটিল ভাবে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায় আইসিইউ’তে থাকা রোগীদের ৭৩% অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছিলেন।

যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ৬৪% মানুষের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে। কোনো ব্যক্তির ওজন এবং উচ্চতার অনুপাতে পরিমাপ করা হয় তার বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই।

স্থূলতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশন আগেই সতর্ক করেছিল যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়া ব্যক্তিদের একটা বড় অংশের ‘বিএমআই ২৫ এর বেশি হবে।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি ও চীনও প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

এছাড়াও বয়স বেশি হলে, অন্য জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে এবং পুরুষদের জন্য কোভিড-১৯ এ জটিলভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।

আরও পড়তে পারেন-

আজকে আল্লাহর রহম ছাড়া পরিত্রাণের কোন উপায় নেই!

যুগে যুগে মহামারীর ইতিকথা

‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ

কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইসলামের শিক্ষা: ফরহাদ মজহার

‘আমাদেরকে যুদ্ধের চেয়ে অনেক বড় কর্মযজ্ঞে নামতে হবে’

কেন অতিরিক্ত ওজন ঝুঁকি তৈরি করছে?

আপনার ওজন অতিরিক্ত হওয়া মানে আপনি দেহে অতিরিক্ত চর্বি বহন করছেন। অর্থাৎ আপনি শতভাগ ফিট নন। আর আপনার ফিটনেস যত কম হবে, আপনার ফুসফুসের কর্মক্ষমতা তত কমবে। এর ফলে আপনার রক্তে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেন পৌঁছাতে সমস্যা হবে। এর ফলে শরীরে রক্ত চলাচল এবং আপনার হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাভিদ সাত্তার বলেন, “অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকে। তার মানে, তাদের শরীর যথেষ্ট চাপের মধ্যে দিয়ে কাজ করে।” করোনাভাইরাসের মত একটি ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় এই বিষয়টি গুরুতর হতে পারে।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার ডিয়ান সেলাইয়াহ বলেন, “শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোয় যথেষ্ট অক্সিজেন না যাওয়ায় স্থূল দেহ এক পর্যায়ে চাপ নিতে পারে না।” এ কারণে আইসিইউতে থাকা স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা ও কিডনির কার্যক্রম চালানোর জন্য সহায়তা বেশি প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কি প্রভাবিত হয়?

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার যে সক্ষমতা শরীরের থাকে – যেটিকে আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হিসেবে জানি – সেই ক্ষমতা স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে কম থাকে। আমাদের শরীরের চর্বিতে থাকা ম্যাক্রোফেইজ নামক কোষ যখন অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়, তখন এই সমস্যা তৈরি হয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর ফলে শরীরে ‘সাইটোকাইন ঝড়’ তৈরি হতে পারে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরণের প্রতিক্রিয়া যার ফলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

ডাক্তার সেলায়া বলেন, “অতিরিক্ত ওজনের মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নিষ্ক্রিয় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো এর ফলেই কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হার বেশি দেখা যাচ্ছে।”

অন্য সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কতটা?

স্থূলতার সাথে সাধারণত দুর্বল হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুস, যথাযথভাবে কাজ না করা কিডনি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর মত রোগে আক্রান্ত হলে ঐ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো প্রাধান্য পায় না এবং শরীরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে তারা। স্থূল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনাও তৈরি হয়, তবে এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।

হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়?

অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রেও নানারকম চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের শরীরে টিউব বা ভেন্টিলেটর প্রবেশ করানোতে অনেকসময় সমস্যা তৈরি হয়। আবার ওজনের মাত্রা নির্দিষ্ট থাকার কারণে তাদের স্ক্যান করার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অপেক্ষাকৃত বেশি ওজনের রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা করার জন্য পাশ ফিরিয়ে শোয়ানো অথবা উপুড় করে শোয়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসকদের। সূত্র: বিবিসি।

উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

করোনাভাইরাস: দেশে ২৪ ঘন্টায় ৭০৯ জন শনাক্ত, মারা গেছে ৭ জন