Home ফিকহ ও মাসায়েল রোযার নিয়ত ও কতিপয় জরুরী মাসআলা

রোযার নিয়ত ও কতিপয় জরুরী মাসআলা

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

নিয়ত বলা হয়, অন্তরের ইচ্ছা ও আগ্রহকে। এটি মনে মনে হোক বা মুখের উচ্চারণে। রোযার জন্যে নিয়ত করা শর্ত। ফলে রোযার জন্যে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বর্জনের মতো নিয়ত করাও ফরয। শুধু মনে মনে ‘আমি আগামী কাল রোযা রাখব’ বা ‘রোযা রাখার জন্যে সাহরী খাচ্ছি’ এতটুকু নিয়ত করলেও তা সহীহ হয়ে যাবে। তবে নিয়ত মুখে পড়া ফরয নয়; কেবল মনে মনে সংকল্প করলেই যথেষ্ট হবে। আর ‘আগামী কাল আমি রোযা রাখবো’ শুধু এতটুকু বললেও যথেষ্ট হবে। তবে যদি কেউ মনের চিন্তা এবং সংকল্পের সঙ্গে মুখেও বাংলা বা আরবীতে কিংবা যে কোনো ভাষায় নিয়ত করে তা আরো উত্তম হবে; কিন্তু একে জরুরি মনে করা বিদআত। (ফাতাওয়া আলমগীরী- ১/২৫৭, মাকতাবায়ে ইত্তিহাদ; আদ্দুরুর মুখতার- ১/১৪৭)।

মাসআলাঃ প্রত্যেক রোযার জন্যে প্রতি দিন নতুনভাবে নিয়ত করা আবশ্যক। (ফাতাওয়া আলমগীরী- ১/২৫৭, মাকতাবায়ে ইত্তিহাদ)।

মাসআলাঃ সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্বেই যদি কেউ এ নিয়ত করে যে, ‘আমি আগামীকাল রোযা রাখব’ তার এ নিয়ত ধর্তব্য হবে না। তবে সূর্যাস্ত যাওয়ার পরে নিয়ত করলে তা সহীহ হবে। (আদ-দুরুল মুখতার- ২/৩৭৭, ফাতাওয়া শামী- ২/৩৭৭)।

আরও পড়তে পারেন-

মাসআলাঃ বেলা দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত নফল রোযার নিয়ত করা জায়েয। সুতরাং কারো বেলা দশটা পর্যন্ত রোযা রাখার নিয়ত ছিলো না আবার পানাহারও করেনি এবং রোযা ভঙ্গের অন্য কোনো কাজও করেনি, এরপর সে নফল রোযার নিয়ত করেছে, তার রোযা হয়ে যাবে। (আদ-দুররুল মুখতার- ১/১৪৬)।

মাসআলাঃ ফরয, নফল ও নযরে মুআয়ইনের রোযার নিয়ত দিনের দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্বে করলেও তার রোযা হয়ে যাবে, যদি রোযা ভঙ্গের কোনো কাজ সে এ সময় না করে থাকে। (আদ-দুররুল মুখতার- ১/১৪৬)।

মাসআলাঃ ক্বাযা, মান্নত ও কাফফারার রোযার নিয়ত সুবহে সাদিকের আগেই করতে হবে। অন্যথায় তার রোযা হবে না, বরং তা নফল রোযা বলে বিবেচিত হবে। (কুদুরী- ৭৯)।

মাসআলাঃ রমযান মাসে যদি নির্দিষ্ট করে রমযান মাসের রোযা বা ফরয রোযা বলে নিয়ত নাও করে, শুধু এতটুকু নিয়ত করে, আজ আমি রোযা রাখবো অথবা রাতে মনে মনে বলে, আগামীকাল রোযা রাখবো, তাহলে তাতেই রমযানের রোযা সহীহ হয়ে যাবে। (মুলতাকাল আবহুর- ৫/৪৩)।

মাসআলাঃ কেউ রমযান মাসে রমযানের রোযা না রেখে যদি বলে আমি এখন নফল রোযা রাখি পরে রমযানের রোযার কাযা করে নেব, তবুও তার রমযানের ফরয রোযা শুদ্ধ হবে, নফল হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/২৫৮, মাকতাবায়ে ইত্তিহাদ)।

মাসআলাঃ কোনো কারণে বিগত রমযানের রোযা বাদ পড়েছিলো, সারা বছর সে রোযার ক্বাযা আদায় করা সম্ভব হয়নি, এখন পুনরায় রমযান মাস এসে গেছে, এ অবস্থায় যদি সে গত রমযানের ক্বাযা রোযার নিয়ত করে, তবুও এ রমযানের রোযাই হবে, গত রমযানের রোযার ক্বাযা আদায় হবে না। ক্বাযা রোযা রমযানের পরে রাখতে হবে। (আদ-দুররুল মুখতার- ১/১৪৭)।

মাসআলাঃ কেউ মান্নত করেছিলো যে, আমার অমুক কাজ হয়ে গেলে আমি আল্লাহ তাআলার জন্যে দু’টি বা একটি রোযা রাখবো। তারপর তার সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে; কিন্তু সে মান্নতের রোযা রাখেনি। যখন রমযান মাস এসেছে, সে ওই রোযা রাখার ইচ্ছা করলো। এখন যদি সে মান্নতের রোযার নিয়ত করে তবুও তার রমযানের রোযাই আদায় হবে, মান্নতের রোযা আদায় হবে না। সে মান্নতের রোযা রমযানের পরে রাখবে। মোটকথা, রমযান মাসে সে যে রোযারই নিয়ত করুক, তাতে রমযানের রোযাই হবে। রমযান মাসে অন্য কোনো রোযা হবে না। (কুদুরী- ৮২ পৃষ্ঠা)।

– আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।