Home সম্পাদকীয় মসজিদের দূর্ঘটনাটি যেনতেন নয়, দায় এড়ানো সুযোগ নেই

মসজিদের দূর্ঘটনাটি যেনতেন নয়, দায় এড়ানো সুযোগ নেই

গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাসের বিস্ফোরণে মোট ৩১ জনের মৃত্যুর ঘটনাটি কোন যেনতেন দুর্ঘটনা নয়। প্রথমে এসি বিস্ফোরণের কথা শোনা গেলেও পরে ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণে ভিতরে গ্যাস জমা হয়ে বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, গ্যাসের লিকেজের বিষয়টি স্থানীয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে সারানোর জন্য অনুরোধও করা হয়। কিন্তু পত্রিকান্তে জানা যায়, ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ায় মেরামতে গড়িমসি করা হয়। ফলে এতো বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে পরিস্কার এই দুর্ঘটনার পেছনে অবহেলা, অনিয়ম এবং দুনীতির বিষয় জড়িত। ঘটনাটি তদন্তে তিনটি পৃথক তদন্ত দল কাজ করছে। ফলে তদন্ত রিপোট দেয়ার পরই প্রকৃত কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যাবে।

এরই মধ্যে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গত সোমবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা অফিসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহতদের সবোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে মসজিদ নির্মানে নিয়ম মানা হওয়া না হওয়ার বিষয়েক বেশি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছেন। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বলা হলো মসজিদ নির্মানে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। কিন্তু স্থানীয়দের ভাষ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে মসজিদেটি নিয়ম মেনেই নির্মাণ করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

মসজিদ নামাজ আদায়ের জন্য। এতে কারো ব্যক্তি স্বার্থ থাকেনা। রাস্তার পাশঘেষে দেশে হাজার হাজার মসজিদ আছে। মসজিদের মতো একটি স্থাপনা গোপনে গড়ে ওঠেনা। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ থাকার কথা নয়। যদি অবৈধভাবেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসন শুরুতেই আপত্তি জানায়নি কেনো? এতো দিনই বা চুপ থাকলো? যদি তিতাসের গ্যাস লাইনের ওপর দিয়েই মসজিদ নির্মাণ হয়ে থাকে, তাহলে তিতাসতো সেখানে বাধা দিতে পারতো। তারা কেনো এতো দিন নীরব থাকলো?

শুধু তাই নয়, লিকেজের বিষয় জানার পরও তারা কেনো দুর্ঘটনার আশংকাটি করেনি। এটি এমন একটি মসজিদে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত জামাত হয়। ইমাম-মুয়াজ্জিন আছেন সেই মসজিদটিতে ৪২ জন মুসল্লি দগ্ধ হয়ে ৩১ জন মারা যাওয়ার পর এখন সেটির নীতি মেনে গড়ে ওঠা, বৈধ-অবৈধ হওয়ার প্রশ্নটি বড় করে সামনে আনাটা দু:খজনক।

এই ঘটনায় আরো কিছু বিষয় লক্ষ্যনীয় হলো, আমরা দেখছি এতো বড় ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের খোঁজ খবর নিতে সরকারের শীষস্থানীয় বা প্রশাসনেরও উর্ধতরা যাননি। নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষনিক আর্থিক সাহায্য দেয়ার ঘোষনাও দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতে রিট করার পর আদালত ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার জন্য তিতাস গ্যাসকে নির্দেশ দিয়েছে।

মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনসহ ৩১জন আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। হাসপাতালে ভর্তি বাকী ৬ জনের অবস্থাও আশংকাজন । এরা দুনিয়ার কোন কাজের জন্য গিয়ে সেখানে মারা যাননি। তারা আল্লাহর ইবাদাত করতে গিয়ে মারা গেছেন। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন।

কিন্ত তাদের পরিবারের অবস্থা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। পরিবারগুলো কতটা মানসিক কষ্ট এবং অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। এই পরিবারগুলোকে স্বপ্রণোদিতভাবে সহায়তার ঘোষণা দেয়া কাম্য ছিল। আমরা এই ধরণের অন্যান্য ঘটনায় সরকারকে সহায়তা করতে, বিশেষ গুরুত্ব দিতে দেখি। এমন মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও বিশেষ ব্যক্তিদের অসুস্থ্য হলে ২০-৫০ লাখ টাকা করে সহায়তা দিতে দেখি। কিন্তু এই ঘটনায় আমরা এমন পর্যন্ত এমন ঘোষণা দেখতে পাইনি।

আমরা মনে করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রথমত: ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারসমূহে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা দেয়া উচিত। পাশাপাশি মসজিদ গড়ে ওঠার বৈধতা অবৈধতার দিকটিকে এই মুহুতে বড় করে না দেখে দুর্ঘটনার পেছনে যাদের দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম কাজ করেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে এই ঘটনা থেকে সকলে শিক্ষা নিতে পারে। পাশাপাশি দ্রুত মসজিদটি নামাজের জন্য খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

মসিজদ আল্লাহর ঘর, ইবাদাতের স্থান। জেনেশুনে ধর্মপ্রাণ মানুষ অবৈধভাবে মসজিদ গড়ে তুলে না বলে আমাদের বিশ্বাস। তারপরও এমন কিছু দৃষ্টিগোচর হলে আলেম উলামাদের মতামত গ্রহণ করে ধর্মীয় নির্দেশনা জাতির সামনে তুলে ধরে সচেতনা তৈরী করতে হবে। ##

– ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া, ই-মেইল-faizubn@yahoo.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।