Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ বাংলাদেশী চেতনা থেকে কারা আমাদের পৃথক করতে চায় ?

বাংলাদেশী চেতনা থেকে কারা আমাদের পৃথক করতে চায় ?

।। আরিফুল ইসলাম শিকদার ।।

ভারত ভাগ নিয়ে কান্নাকাটি যারা এখনো করে তারা মূলতঃ ভারতের দালাল। ভারত ভাগ মূলতঃ উগ্র হিন্দুত্ববাদী আচরণের কারণেই হয়েছিল, যারা মুসলমানদের শাসনতান্ত্রিক ন্যূনতম অধিকার দিতে রাজী ছিল না। আর বর্তমান ভারতে মুসলিম নির্যাতন দেখেও যাদের হুঁশ হয় না, তাদের লাত্থি মাইরা ভারত খেদানো দরকার। যারা এই ধরনের কাজ করবে, তারা মূলতঃ রাষ্ট্রদ্রোহী।

আর ইসলামের দিক থেকে যদি বিবেচনা করি, তাহলে তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ইসলামের নামের উপর গড়ে ওঠা দেশকে বরদাশত করতে পারছেন না। তারা হিন্দু শিব সেনাদের দ্বারা আমাদের লাত্থি গুতা খাওয়াইতে চায়।

তাদের এই মনোবাসনা কখনোই পূর্ন হবে না, ইনশাআল্লাহ।

আর হোসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.)এর রাজনীতিরে যারা ওহীর আদেশের মত আঁকড়ে ধরছেন, তাদের বলব- তিনি তাঁর জায়গা থেকে যা করছেন তা করা ঠিক ছিল। আর আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা করছি তাই ঠিক। সমস্ত মুসলমানদের যেমন ভারত থেকে পাকিস্তানে আসা সম্ভব ছিল না, তেমনি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হয়ে আমাদের ভারতীয় শিবসেনাদের অধীনে যাবারও কোন কারণ ছিল না।

মদীনা রাষ্ট্রটির কথা বিবেচনা করুন। মদীনা রাষ্ট্রের জন্য কি উচিত হত যে, মক্কায় কিছু দূর্বল মুসলিম রয়ে গেছে বলে তারা মক্কার কাফিরদের শাসন মেনে নিবে? নাকি সেই রকম কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল? তবে আজ কেন আপনি বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডটি ইসলামের নামে পৃথক হওয়ার পরেও সেই রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছেন?

আপনি তিনটা বিষয় বলতে পারেন-

১. বাংলাদেশ কি ইসলামী অনুশাসনে চলে? এই কথার জবাবে আমি বলব, ইসলামের নামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র সেখানেই আপনি ইসলাম কায়েম করতে পারছেন না, তাহলে ভারতে গিয়ে আপনি ইসলাম কায়েম করবেন? আপনার মত বেকুব দ্বিতীয়টি কি আছে? যিনি তুলনামূলক ভালো অবস্থানেও ইসলাম কায়েম করতে পারছেন না, তিনি সম্পূর্ণ বৈরি পরিবেশে গিয়ে ইসলাম কায়েম করবেন কীভাবে?

২. মুসলিম এক উম্মাহ, তাহলে আমরা পৃথক হব কেন? ওয়েল! মুসলিম এক উম্মাহ, কিন্তু খেলাফত কায়েম হলে যেসব মুসলিম দারুল হরবে বসবাস করবে, তাদের জন্য কি খিলাফতকে দারুল হরবের অধীন করে দিতে হবে? আপনি হয়তো বলবেন, অধীন করার প্রশ্ন আসছে কেন?

আমি বলব বর্তমানে একত্র হওয়ার প্রশ্নই উত্থাপিত হয়েছে গণতান্ত্রিক সিস্টেম মেনে। আপনি এইখানে সাপোর্ট দেওয়ার অর্থই হল সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের অধীনে যাওয়ার জন্য রাজী হওয়া। আপনি যদি ভিন্ন কোন মত থেকে অভিন্ন ভারত চান, তবে সেটা এই ফোরামে বলবেন কেন? বরং আপনি এই ফোরামটাই বর্জন করুন।

৩. বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ ইসলাম বিরোধী। এই কথার জবাবে বলব, রাসূল (সা.) মদীনায় যে চুক্তি করেছিলেন তা ছিল বহিঃশত্রু থেকে মদীনাকে রক্ষার জন্য সকল ধর্ম গোত্র একযোগে কাজ করবে। তো এই মাদানী চেতনা কি ইসলাম বিদ্বেষী? নাকি ইসলাম ঐ ভূখন্ডে প্রাধান্য পাওয়ায় মাদানী ঐ চেতনায় হয়ে উঠেছিল ইসলামী চেতনার প্রতীক?

তাই বর্তমানে তিন দিক হিন্দু শাসিত বৃহৎ একটি রাষ্ট্রের মধ্যে যখন ইসলামের নামের উপর একটি রাষ্ট্র “বাংলাদেশ” গড়ে উঠেছে, তখন সেখানে ইসলাম যতটুকুই থাক না কেন, এই বাংলাদেশী চেতনা কিছুতেই হাদীসে বর্ণিত আসাবিয়্যাহ নয়। কারণ, এই বাংলাদেশী চেতনার পিছনে মূল ভূমিকা ইসলামের। একটা শ্রেণী চাইবে এর থেকে আপনার মনকে বিচ্ছিন্ন করতে। কারণ, এই বিচ্ছিন্ন হওয়ার দ্বারা আপনি এই রাষ্ট্র নিয়ে জোরালো বক্তব্য রাখতে পারবেন না । আর যখন আপনি সেটা করতে পারবেন না, তখন আপনি হয়ে উঠবেন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আর ইসলামী চেতনার সৈনিকরা যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে উঠবে, তখন এই রাষ্ট্রকে আরো বেশী ইসলাম বিরোধী করাটা সহজ হবে।

তাই আসুন, যারা এখনো বাংলাদেশী চিন্তাকে ইসলাম বিরোধী চিন্তা মনে করছেন, তারা সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে এই দেশ গঠনে মনযোগী হোন। এই দেশ যেই উদ্দেশ্যে ভারত থেকে পৃথক হয়েছে, সেই উদ্যেশ্য বাস্তবায়ন করুন। একই সাথে জালেমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে প্রেরণা নিয়ে ৭১ এ স্বাধীন হয়েছে সেই, লড়াইকেও অব্যাহত রাখুন।

মনে রাখবেন, যারা আমাদের বাংলাদেশী চেতনা থেকে পৃথক করতে চায়, তারাই কিন্তু ইসলামের দুশমন। অতএব, তাদের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হতে দিলে এই ভূমিতে ইসলামই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম আমার ভাই। কিন্তু ইসলামের নামে গড়ে ওঠা ভূমিকে ইসলাম বিরোধীদের হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব আমারই।

লেখকঃ আহবায়ক মুভমেন্ট ফর ইনসাফ।