।। মালেকা ফেরদৌস ।।
আমি আর জুলি। একটা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। জুলি বলল, আয় ছোট বেলার মত দৌড়ের পাল্লা দেই।
আমরা দৌড়ে মাঠ ভাঙ্গছি। খুব হাল্কা লাগছে নিজেকে। আমার প্রিয় নীল ফ্রকটা পরে আছি। পেছন থেকে মল্লিকা দিদি ডাকছেন- (মল্লিকা দিদি আমার মায়ের মেয়ে, যিনি আদর করে আমায় বাবুই তুলসি ডাকেন)। মিলি, অ মিলি, ও বাবুই তুলসি, বেশি দূরে যেও না, মা বকবে।
দু’ জনে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। জুলি বলল- আজ আমরা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চা খাব। ওর প্রস্তাব আমার মনপূত হল।
রাস্তার পাশে একটা ছেলে চা বিক্রি করছে। আরেক পাশে এক বয়স্ক মহিলা চিতই পিঠা বানাচ্ছে। সেখানে পাড়ার বুয়ারা আড্ডা দিচ্ছে। বুয়ারা গল্প করছে। হাসাহসি করছে। সারাদিন কাজের পর এখন পুরোটা সময় ওদের। বিবি সাহেব আর সাহেবদের নিয়ে ওদের গল্প। জুলি ওদের পাশে গিয়ে আবার ফিরে এলো।
: জরিনার মা, আইজকা কামে গেলিনা ক্যারে?
: মুখ ঝামটা মারে জরিনার মা। বলে- আর যাইতাম না ময়না বু। এমন খ্যাচ্চর বিবিসাব আর দেহি নাই।
: ক্যান তুই তো তার গীত গাইতি। দ্যাশেত্তুন মাইয়্যাও আইন্না দিলি।
আর দিমু না।আমিও হ্যার কাম করুম না। মাইয়্যাডারে নাহি সাহেব বুহে আত দ্যায়। রান্না ঘরে গিয়া চুল ধরে। আইজ কামের তন বাদ দিয়া দিছে। আমারে দুনিয়ার কতা হুনাইছে। আমিও ছাইড়গা দেইনাই। সাহেবের সামনে সব কইছি। উপর তালার ভাইয়া দুপুরে আইয়া ঘরের দুয়ার লাগায়। বাজজে সাহেব আর বিবিসাব আমি বাইর অইয়া আইছি।
: এতো কতা কইতে গেলি ক্যান। ওরা বড়লোক, যা ইচ্ছা করুক গা।
: ক্যান কমু না। বেডির ভাই একটা গুন্ডা। গন্ডগোল অইলেই বন্দুক আর দাও লইয়া রাস্তায় নামে। মারামারিতে যায়। সামনের তরকারি আলারে আতুরি দিয়া পিডাইয়া হাড্ডি ভাইঙ্গা দিছে। সব দোকানতন চান্দা উডায়।
: এতো কতা কইও না বু। ঢাহা থাকতে পারবা না।
: তর কি। থাহুম না ঢাহা। এর লইগ্গাই তোর ভাতার ভাগজে।
এই থাম। বেশি কতা কস।
: কমু না ক্যা। তুই তো রাস্তার মুচির লগে থাহস। গাঁজা খাস। আমি জানি না মনে করসছ? মুচি তর ঘরে গাঁজা রাহে। বস্তির, বাজারের হগল পোলাপাইনরে নেশা ধরাইছে। বলেই রাস্তায় নামল জরিনার মা। পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে।
এতোক্ষণ পর মুখ খুলল সাহেরা- আমিও থাহুম না। পোলাডারে কামে দিছি। অরে ওরা জোর কইরা মিছিলে নেয়, ভাষণ শুনতে নেয়। টাহা দেওয়ার কতা কইয়া কিছু দেয়না। না গ্যালে মারে। আর মাইয়াডারে লইয়া বস্তিত থাহি। পাশের গরে মদ রাহে। হুনছি অনেক ক্ষমতা, যার এই কারবার। দল করে । সবাই ভয়ে থাহে। আড্ডা বহায়। মাইয়্যা লোক নিয়া আহে। বদখোর হারমজাদার চোক আমার মাইয়ার দিকে পরছে। যা থাহে কপালে, চউক উডাইয়া ফালামু।বারি যামু গা। বিয়া দিয়া তয় শান্তি।
পিঠা বিক্রেতা ময়মুনা স্বর নামিয়ে ফিস ফিস করে কথা শুরু করে- বাবুরে চেনো।
সবাই খুব আগ্রহী হয়ে উঠল বাবুটা কে জানার জন্য।
: আরে ঐ যে বাসে আগুন ধরায় হেই বাবু। মোগো বরিশাইল্লা পোলা। হ্যারে না চিনলে তো কিছুই চেনো না। মোগো গ্রামের পাশের গ্রামের পোলা। কি পাউডার ছিডাইয়া নাহি বাসে আগুন ধরায়। কত মানুষ যে পুরাইয়া মারছে। আমারে কয়, খালা কাম করি আমরা আর নাম দেই অন্যের। অনেক বড়লোক এহন। মাইয়ারে ভালো বিয়া দিছে?
: হুনছি জামাইরে পুলিশে ধইরা নিছে।
: নিলে কি অইবো। দুই দিনও তো রাখতে পারে নাই। বুঝলা সব অইছে টাহার খেলা। স্বর নামিয়ে ফিস ফিস করে বলে- ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, সব সাপ্লাই দেয়। বাসায় সব বড় লোকের পোলা পাইন আহে। মাইয়ারাও গাড়ি চালাইয়া আহে। পুলিশ তো বান্ধা। সব কিছিমের লোকই আহে। [চলবে]
উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ