Home ইসলাম নেতা ও জনগণের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকা চাই

নেতা ও জনগণের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকা চাই

।। মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রাহ.) ।।

নেতা ও জনগণের মাঝে পারস্পরিক সুসম্পর্ক থাকা চাই। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ ‏”‏ ‏.‏ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ نُنَابِذُهُمْ بِالسَّيْفِ فَقَالَ ‏”‏ لاَ مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ وَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْ وُلاَتِكُمْ شَيْئًا تَكْرَهُونَهُ فَاكْرَهُوا عَمَلَهُ وَلاَ تَنْزِعُوا يَدًا مِنْ طَاعَةٍ ‏”‏ ‏.

অর্থাৎ- তোমাদের (রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক) নেতাদের মধ্যে ভাল নেতা তারাই, যাদের কার্যকলাপে এবং ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে তোমরা (জনসাধারণ) তাদের জন্য অন্তরে ভালবাসা পোষণ কর এবং তাদের জন্য দোয়া কর। তারাও তোমাদের ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে তোমাদেরকে ভালবাসে ও তোমাদের জন্য নেক দোয়া কের। তোমাদের নেতাদের মধ্যে খারাপ নেতা তারা, যাদের কার্যকলাপে এবং ব্যবহারে তোমরা জনসাধারণ ব্যথিত ও নিপীড়িত হয়ে তাদেরকে ঘৃণা কর ও তাদের জন্য বদদোয়া কর এবং তোমাদের ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে ও তোমাদের জন্য বদদোয়া করে।

সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ রকম চরিত্রহীনতার কারণে এ রকম চরিত্রহীন নেতার আদেশ অমান্য করা আমাদের কর্তব্য নয় কি? হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, যে যাবত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করতে থাকবে, সে পর্যন্ত তোমরা তাদের দেশ শাসন বিষয়ক আদেশ অমান্য করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিও না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৯১০)।

আরও পড়তে পারেন-

এই বাক্যটি যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এ জন্য এই বাক্যটিকে হযরত একবার বলিয়া ক্ষান্ত হননি, দু’বার বলেছেন, হে জনসাধারণ! তোমরা জেনে রাখ- তোমাদের উপর যিনি নেতা নির্বাচিত, মনোনীত বা নিযুক্ত হবেন, তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোন গোনাহের কাজ করেন, তা তো ঘৃণা করতে হবে, কিন্তু সে কারণে রাজ্য পরিচালনা বা দেশ রক্ষাবিষয়ক কোন আদেশ তিনি করলে তবে সে আদেশ অবশ্যই পালন করতে হবে। সে আদেশ পালন করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করা কারো জন্য কিছুতেই জায়েয হবে না।

ইসলামের চোখে দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের পতন সৃষ্টির মত বড় গোনাহ এবং বড় অপরাধ আর নাই- এমনকি হত্যাকাণ্ডের চেয়েও এটি বড় অপরাধ।

ইসলামের দৃষ্টিতে বাহ্যিক শান-শওকত ও জাকজমকের মর্তবা বড় নয়- নেক চরিত্র এবং নেক আমলের মর্তবা বড়, সৎ-স্বাভাবের এবং সৎকর্মের মর্তবা বড়।

হযরত আমর ইবনে মুররা (রাযি.) একবার হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রাযি.)কে বললেন- আমি হযরত রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-

مَنْ ولَّاهُ الله -عز وجل- شيئًا مِنْ أَمْر المسلمين فاحْتَجَبَ دُونَ حاجَتِهم وخَلَّتِهِم وفقرهم، احْتَجَبَ الله عنه دون حاجَتِه وخَلَّتِهِ وفقره

অর্থাৎ- যাকে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করবেন, তিনি যদি মুসলমানদের অভাব-অভিযোগ এবং দুঃখ ও কষ্ট নিবারণে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকেন, তবে তার স্মরণ রাখা উচিত যে, হাশরের ময়দানে যখন সে ভীষণ অভাবে, ভীষণ কষ্টে পড়বে। তখন আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন না, তার অভাব মোচন করবেন না এবং তার ক্রন্দন শুনবেন না। (তবরানী, বায়হাকী)।

হযরত আমর ইবনে মুররা (রাযি.)এর কাছে এই পবিত্র হাদীস শোনামাত্র হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (রাযি.) এমন একজন লোককে দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন, যে হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.)এর বিভাগীয় আমলাসহ জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ বিনা ফীতে সহজেই নোট নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থাপন করবেন। যাতে তিনি তাদের সব অভাব-অভিযোগের সমাধা দিতে মনোযোগী হতে পারেন।

হযরত মুয়রবিয়া (রাযি.)এর এমন সুন্দর জনকল্যাণমুখীতা, জনদরদী হওয়া এবং জনগণের সাথে উদার ও অমায়িক ব্যবহারের বহু বহু দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আছে এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.)এর গৌরবগাঁথা বর্ণনা রয়েছে।

সংকলনে- ইশতিয়াক আহমদ (আশিক)

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।