Home ইতিহাস ও জীবনী আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর জানাযাপূর্ব আবেগঘন বক্তব্যে যা বলেছিলেন মাওলানা নাজমুল হাসান

আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর জানাযাপূর্ব আবেগঘন বক্তব্যে যা বলেছিলেন মাওলানা নাজমুল হাসান

ছবি- উম্মাহ।

দেশের শীর্ষ আলেম রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে ইন্তিকাল করেন এবং পরদিন (১৪ ডিসেম্বর) রবিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার অংশগ্রহণে নামাযে জানাযা শেষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত তুরাগের জামিয়া ছোবহানিয়া মাদ্রাসা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর নামাযে জানাযারপূর্ব বিশাল জমায়েতে হেফাজত আমীর, বেফাক সভাপতি, জমিয়ত সভাপতি ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান হযরত কাসেমী (রাহ.)এর উপর স্মৃতিচারণমূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

এ সময় মাওলানা হাফেয নাজমুল হাসান যে আবেগঘন বক্তব্য দেন, তা উপস্থিত অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। উম্মাহ পাঠক সমীপে বয়ানটির পূণর্বিবরণী নিম্নে উপস্থাপন করা হল-

জনাযাপূর্ব বয়ানে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান বলেন, “দারুল উলুম দেওবন্দের কর্মের কত কথা আমরা আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর কাছে দেখেছি। হযরত শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.)এর সিয়াসত, হাকিমুল উম্মাত হযরত শাহ আশরাফ আলী থানভী (রাহ.)এর কিয়াদত, আল্লামা হযরত কাশ্মীরি (রাহ.)এর দিরাসাত, তালিম-তারবিয়াত সবকিছু নিয়ে চলনেওয়ালা ছিলেন হযরত আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)। হযরতের বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে আজ কোন আলোচনা করতে চাই না। আজকে লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনতার সামনে শুধু একটি স্মৃতিচারণ করতে চাই, যা হযরতের প্রত্যেক তাকরীরের মধ্যে প্রত্যেক বয়ানের মধ্যে থাকত”।

তিনি বলেন, “হযরত এ কথাটা বলতেন যে, আমাদের দায়িত্ব হলো মানুষের কল্যাণে কাজ করা, দেশের কল্যাণে কাজ করা, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে কাজ করা, দেশের উন্নয়নে কাজ করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করা, শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য কাজ করা। হযরত সব সময় আহ্বান করতেন,  সকলে যাতে এসব কল্যাণকর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারি। মানুষের অকল্যাণ হয়, মানুষের ক্ষতি সাধন হয়, দেশের ক্ষতি সাধন হয়, এমন কোন কর্মকান্ড যাতে কস্মিণকালেও আমাদের দ্বারা না হয়।হযরতের এই আহ্বান জাতির জন্য, দেশের জন্য, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য এবং সম্প্রীতির জন্য। সবসময় হযরতের আহ্বান থাক সম্প্রীতির আহ্বান, সৌহার্দপূর্ণ অব্স্থানের আহ্বান, সহমর্মীতার আহ্বান। আমি আজকে আপনাদের সামনে হযরতের এসব কথাগুলোই আমার পুনর্বার ব্যক্ত করলাম।আল্লাহ যেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম এবং সমস্ত কওমী অঙ্গনের সমস্ত তালেবানে এলেমকে আল্লাহু সুবনাহু ওয়াতাআলা হযরতের এসব অমূল্য বাণীগুলোকে জীবন চলার পথে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ ও ধারণ করার তাওফীক দান করেন, আমীন”।

আরও পড়তে পারেন-

মাওলানা হাফেয নাজমুল হাসান বলেন, “হযরত একদিকে বাংলাদেশের বহু মাদ্রাসার মুরুব্বী ছিলেন, বহু উলামায়ে কেরামের মুরুব্বী ছিলেন, আধ্যাত্মিক রাহবার ছিলেন। হযরতের মিশন ও ভিশনের অসম্পূর্ণ কাজগুলো আমরা যারা হযরতের রেখে যাওয়া সন্তান, হযরতের উত্তরসূরী, আমাদের দায়িত্ব হবে হযরতের এসব রেখে যাওয়া কাজগুলোকে নিয়ে সামনে চলা। ভেঙ্গে না যাওয়া, আমাদের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে হযরতের এই অসম্পূর্ণ কাজসমূহকে সম্পূর্ণ করা এবং কাসেমীয়্যাতকে নিয় অগ্রসর হওয়া। দ্বীনের জন্য, দেশের জন্য, যাতে করে আমরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে হযরতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করতে পারি। আল্লাহ সুবনাহু ওয়াতাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুন। হযরতকে জান্নাতের আলা মাকাম দান করেন। হযরতের সমস্ত তাকসীরাতকে আল্লাহপাক মাফ করে দেন”।

তিনি বলেন, “৩০ বছর যাবত হযরতের সাহচর্যে থেকে এসেছি। আপনাদের কাছে করজোড়ে মাফ চাই।আমি চিনতে পারিনি আল্লামা কাসেমীকে। আমি বুঝতে পারিনি তাঁর আলা মাক্বামকে। আমি উপলব্ধিতে নিতে পারিনি তিনি দেশ ও জাতির জন্য কত অমূল্য রত্ন ছিলেন”। এ সময় আল্লামা নাজমুল হাসান আবেগময় হয়ে পড়লে জমায়েত জুড়ে মৃদ্যু কান্নার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।

বয়ানের শেষ পর্যায়ে মাওলানা নাজমুল হাসান বলেন, “হযরত ছিলেন বেফাকুল মাদরিসিরিল আরাবিয়ার সিনিয়র সহসভাপতি, আল-হাইয়্যাতুল উলইয়ার কো চেয়ারম্যান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের হযরত ছিলেন সংগ্রামী মহাসচিব, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব। এই বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও সংস্থায় হযরত মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.)এর জানেশীন, ফেদায়ে মিল্লাত, ফেদায়ে মাদানী, হযরতের এই বর্ণাঢ্য কর্মকান্ডে বহু উলামায়ে কেরামের সঙ্গে হযরতের মিটিং করতে হয়েছে, পরামর্শ করতে হয়েছে, অনেক শাশ্বত স্দ্ধিান্ত নিতে হয়েছে, যদি এমন কোন সিদ্ধান্ত যা জাতির কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, কওমীয়্যাতের কল্যাণে এবং দেওবন্দীয়্যাতের কল্যাণে, কাসেমীয়্যাতের কল্যাণে হযরত কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যদি কোন  মুরুব্বীর মনে আঘাত লেগে থাকে, কোন মুরুব্বী কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি হযরতের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে করজোড়ে মাফ চাচ্ছি। হযরতকে মাফ করে দিবেন, দোয়া করবেন এবং আমাদের জন্যই দোয়া চাই। আমরা যাতে কোন রক্তচক্ষু ও বাতিলের হুমকি-ধমকির পরোয়া না করে হযরতের মতো হক্ক-হক্কানিয়াত নিয়ে নিয়ে চলতে পারি। আমরা এই জন্যা দোয়া চাই। আল্লাহপাক তাওফীক দান করুক। আমীন”।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।