Home ইসলাম ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিয়া বা উপহার দেওয়া

ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিয়া বা উপহার দেওয়া

-প্রতীকি ছবি।

অন্য কাউকে খুশি করা এবং তার সঙ্গে নিজের সুসম্পর্ক প্রকাশ করার জন্য তাকে যে উপহার দেওয়া হয় তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিয়া বলে। হাদিয়ার দেওয়ার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

মুমিনদের পারস্পরিক হৃদ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল পারস্পরিক হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামও হাদিয়ার প্রতি খুব উৎসাহিত করেছেন। এর কারণ হল, হাদিয়ার দ্বারা পরস্পরের অন্তরে মহব্বত-ভালোবাসা তৈরি হয় এবং সম্পর্ক দৃঢ় হয়।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিয়া ও সদকা

কোনো অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সওয়াবের নিয়তে কিছু দেওয়া হলে সেটাকে হাদিয়া বলা হয় না। বরং, সদকা বলাহয়। হাদিয়া তখনই হবে যখন এর দ্বারা মহব্বত-ভালোবাসা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য থাকবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কাঙ্ক্ষিত হবে।

একনিষ্ঠতার সঙ্গে হাদিয়া দেওয়া হলে এর সওয়াবও দান-সদকা থেকে কম নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। হাদিয়া এবং দানের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং নিজে ব্যবহারও করতেন। কিন্তু তিনি সদকা গ্রহণ করে নিজে ব্যবহার করতেন না। বরং অভাবগ্রস্থ কাউকে দিয়ে দিতেন।

পারস্পরিক মহব্বত বৃদ্ধি, সমাজজীবনে শান্তি-নিরাপত্তা লাভ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত একটি দুর্লভ কৌশল এটি।

হাদিয়া সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে, অতঃপর খোটা এবং কষ্ট দিয়ে তার বরবাদ করে না। তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” (২:২৬২)

হাদিয়া ব্যবহার করতে কোনো নিষেধ নেই। এ মর্মে আল্লাহ বলেন,

“তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।” (৪:৪)

হাদিয়া ভালোবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম ও হিংসা দূর করার উপায়

নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান কর, তাহলে তোমাদের মাঝে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় কর। এর দ্বারা তোমাদের অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যাবে।” (মুসনাদে আহমদ)

হাদিয়ার বিনিময়ে হাদিয়া

হাদিয়া দেয়ার ব্যাপারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মনীতি এবং নির্দেশনা রয়েছে। নবীজিকে কেউ হাদিয়া দিলে তিনি গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে তাকে উত্তম হাদিয়া দেওয়ার চেষ্টা করতেন।

হজরত আয়েশা(রাযিঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়ম ছিল তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে তিনি নিজেও কিছু হাদিয়া হিসেবে দিতেন।” (বুখারি)

আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামও বলেছেন, “যাকে হাদিয়া দেওয়া হয় যদি তার কাছে হাদিয়ার বদলে দেওয়ার মতো কিছু থাকে তাহলে সে যেন তা দেয়। আর যার কাছে দেওয়ার মতো কিছুই নেই তখন সে যেন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার প্রশংসা করে এবং তার ব্যাপারে ভালো কথা বলে। যে এমন করল সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে করল না এবং উপকারকে গোপন করল সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।’ (তিরমিযী)

অর্থাৎ, হাদিয়াদাতাকে দেওয়ার মত কিছু না থাকলে অন্তত জাযাকাল্লাহু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) এতটুকু বললেও কৃতজ্ঞতা আদায় হয়ে যাবে।

স্বল্প হাদিয়াকে তুচ্ছ মনে না করা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের প্রতিবেশীকে দেওয়ার জন্য সামান্য হাদিয়াকেও তুচ্ছ মনে কর না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর-ই হোক না কেন।” (বুখারি)

সুতরাং, স্বল্প জিনিস হাদিয়া দিতেও লজ্জা না করা এবং কেউ অল্প কিছু দিলেও তাতে নাক না ছিটকানো। কারণ এতে করে হাদিয়াদাতা কষ্ট পাবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিয়া দিয়ে খোটা দেওয়া যাবে না

হাদিয়া দিয়ে কাউকে পরে খোটা দেওয়া খুবই ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন, “খোটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না” (মুসলিম)

ধনী-দরিদ্র সকলকে হাদিয়া দেওয়া

মানুষজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানো এটিও হাদিয়ার মধ্যেই গণ্য। এ ক্ষেত্রে শুধু ধনীদেরকে দাওয়াত দেওয়া, আর দরিদ্র-অসহায়দেরকে উপেক্ষা করা নিতান্তই মন্দ একটি কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ওলিমায় (বিবাহের অনুষ্ঠানে) শুধু ধনীদেরকেই আমন্ত্রণ করা হয় আর দরিদ্রদেরকে বর্জন করা হয়, সে ওলিমার খাবার নিকৃষ্ট খাবার।” (বুখারি)

হাদিয়ার জন্য আকাক্সিক্ষত না থাকা

মনে মনে আকাক্সিক্ষত থাকার পর যে হাদিয়া আসে এটাকে বলে ইশরাফে নফস। এটা নিষেধ। যেমন মনে মনে আশায় থাকা যে, অমুক আত্মীয় সাধারণত আমার জন্য হাদিয়া নিয়ে আসে। অমুক তারিখে উনি হজ থেকে আসছেন। আমার জন্য অবশ্যই হাদিয়া নিয়ে আসবেন। তো যে হাদিয়ায় এ ধরনের নিয়ত থাকবে সে হাদিয়া গ্রহণ করা ঠিক না। এতে বরকত থাকে না।’ (বোখারি, হাদিস : ১৪৭২)

ঋণের বিনিময়ে হাদিয়া গ্রহণ না করা

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কাউকে ঋণ (কর্জ) দেয়, আর গ্রহীতা যদি তাকে কোনো তোহফা দেয় কিংবা যানবাহনে আরোহণ করতে বলে, তখন সে যেন তার তোহফা কবুল না করে এবং তার সওয়ারিতেও আরোহণ না করে। অবশ্য আগে থেকে যদি উভয়ের মধ্যে এরূপ লেনদেনের ধারা চলে আসে, তবে তা ভিন্ন কথা।’ (ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হাদিয়া আদান-প্রদানের এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতটির ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।