Home ইসলাম অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলে থার্টি ফার্স্ট নাইট

অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবলে থার্টি ফার্স্ট নাইট

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

থার্টি ফার্স্ট নাইট মানেই একটি বছরের সমাপ্তি ও আরেকটি বছরের সূচনালগ্ন। আহ! দিনগুলো আমাদের শেষ হয়ে গেলো! এটা তো আমাদের জীবনেরই মূল্যবান একটি অংশ। আমাদের জীবনের একটি ক্যালেন্ডার যে শেষ হয়ে গেল, আমাদের জীবনের দালান থেকে ৩৬৫টি পাথর যেন খসে পড়ে গেল।

আমাদের বয়সের সাথে সাথে আমাদের জীবন ছোট হয়ে এল। এটি আমাদের চিন্তার ব্যাপার। আমরা গত বছর কীভাবে কাটিয়েছি? জীবনে একটি বছর অতিক্রম করে আগামী বছর কীভাবে কাটাব? আমাদের ভাবা উচিত, প্রথম জীবনের উন্মাদনায় যে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে, অন্তত শেষ জীবনে হলেও তার ক্ষতিপূরণ করতে চেষ্টা করা। কারণ, একটা সিগারেট যেমন জ্বলতে জ্বলতে একসময় ছোট হয়ে যায়, তদ্রুপ দিনের আগমন ও রাতের গমনে আমাদের জীবনেরও সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কোন খারাপ কাজের মাধ্যমে অর্থাৎ আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হন এমন কর্মের মধ্যে যে সময়ে ভাল কাজের সংখ্যা অনেক কম ছিল, এভাবে যদি আমরা বিগত সময় কাটিয়ে থাকি, তাহলে প্রতিটা মূল্যবান দিনের জন্য আমাদের ক্রন্দন করা উচিত। আমাদের আফসোস করা উচিত। কারণ একথা চিরন্তন সত্য যে, মানুষ মরণশীল। জীবনের একদিন পাড়ি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে যাওয়া।

একটি বছরের সমাপ্তি মানেই এক এক বছর করে আমাদের মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। তাই এই রাতের জন্য কখনো কোন মুসলমান অপেক্ষা করতে পারে না। কোন মুসলমান নর-নারী থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করার জন্য হোটেল শেরাটনে, হোটেল রূপসী বাংলায়, হোটেল পেনিন্সুয়ালায়, ঢাকার টিএসসি’তে, রমনা পার্কে, গুলশান বনানীর লেকের ধারে, ফয়েয লেকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাইভ কনসার্টে গিয়ে নাচ গান বাজনা ও অন্যান্য অবৈধ কাজে লিপ্ত হতে পারে না। কোন মুসলমান ব্যান্ড দলের গানের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গনে ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আঙ্গিনায় উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করতে পারে না। এ রাতে নারী পুরুষ উভয়েই রাজ পথে মদ্য পান, বিয়ার পান, হিরোয়িন, গাজা ও ফেনসিডিল নেশা করতে পারে না। যে জীবনে আল্লাহর কালেমা পাঠ করেছে ও এর উপর বিশ্বাস স্হাপন করেছে এবং যার অন্তরে ঈমানের সামান্যতম আলো রয়েছে, থার্টি ফার্স্ট নাইট / হ্যাপি নিউ ইয়ার তাদের জন্য নয়। এ রাতে সৎ পথে ধাবিত হয়ে, নতুন ভাবে সংকল্প করার রাত।

বাংলাদেশের মতো বৃহত্তর মুসলিম দেশে ও নব্বই ভাগ মুসলমানের রাষ্ট্রে এ রাতে বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খলতার ভয়ে এবং বেহায়াপনা কন্ট্রোল করতে জায়গায় জায়গায়, শত শত, হাজার হাজার পুলিশ, আর্মি নিযুক্ত করতে হয়। এ রাতে প্রতিটি ক্ষেত্রে এত অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রকাশ পায় যে, নারীদের পাতলা ও ছোট পোশাক পরিধানে যাতে পোশাক পরেও উলঙ্গ বলা চলে। এ অবস্হায় যুবকরা বিপথগামী হয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপকর্ম /অপরাধে লিপ্ত হওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়।

অন্যদিকে যৌন আবেদনময়ী সবকিছু প্রদর্শিত হওয়ায় ইভটিজিং এর শিকার হয় অনেক তরুণী ও ভদ্র মহিলাগণ। এ ধরনের নারী জনিত অনেক ঘটনা প্রতি বছর এ রাতকে কেন্দ্র করেই ঘটে থাকে। এ রাতে উচ্চ বিলাসীর আদরের দুলালরা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে। যার কারনে এ রাতে সব’কটি তারকা হোটেলে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য হাজার হাজার টাকার টিকেট বিক্রি করা হয়।

এদেশে এমন অনেক মুসলমান আছেন, যারা হাজার টাকা ব্যয় করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে রাত কাটাবেন, নাচ-গান করবেন, নায়িকা ও গায়িকারা নাচের সাথে সাথে তাদের বডির গোপনীয় অঙ্গগুলো প্রকাশ করাবেন। সারা রাত জেগে আনন্দ- ফূর্তি করবেন।

আফসোস শত আফসোস! বছরের সমাপ্তি এ রাতে কিভাবে মানুষ নিজের পরিণতির কথা ভুলে যায়। এক ফোঁটা নাপাক পানি হতে মানব সন্তানের জীবনের শুরু, একটা মৃত লাশে তার পরিণতি। মানুষ ভুলে যায় তিরমিযী শরীফে বর্নিত রাব্বুল আলামীনের হাবীবের ঘোষিত এই বাণী; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবর প্রতিদিন ডেকে বলে, আমি তো মাটির ঘর, আমার ভেতর তোমাকেই আসতে হবে। আজকে খুব অহংকার করে তুমি চল, আমার এই ঘর অন্ধকার ঘর, আমার এই ঘর মাটির ঘর। আমার এই ঘর কীট-পতঙ্গের ঘর, একাকী ঘর, আমার কাছে আসতেই হবে।

আরও পড়তে পারেন-

এজন্য আল্লাহওয়ালা মানুষ নিজেকে ডেকে বলে, – হে মন, এত আনন্দ এত উল্লাস করতে তোমার মন চায়? তোমার কি মনে নেই যে, তোমাকে এই জানাযায় খাটে উঠতে হবে? মানুষ তোমাকে আল্লাহু আকবার বলে বিদায় দেবে। কনকনে শীতের রাতে মানুষ যখন ঘরমুখী হয়ে লেপের ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন মৃত্যুবরণকারী মানুষকে আমরা কবরে রেখে আসি, নীচে ঠান্ডা লাগবে বলে কোন চাদর দেওয়া হয় না, কোন বিছানা দেওয়া হয় না, মাটির উপর তাকে শুইয়ে দেয়া হয়। হে মানুষ! হে আত্না! তোমার পরিণতি কি একই নয়? তারপরও কি তোমার এত উল্লাস, এত, আনন্দ, এত ফূর্তি, এত উৎফুল্লতা, এত প্রফুল্লতা?

আমি প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে বলতে চাই, আপনারা নিজেরা এবং পরিবারের কোন সদস্যরা থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য এ রাতের কোন কাজেই অংশগ্রহন করবেন না। অভিভাবকরা ও সন্তানদের প্রতি নজর রাখবেন। অন্যথায় আপনি দাইউস এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে দাইউস বলা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “আল্লাহ তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়” (মুসনাদে আহমাদ- ২/৬৯)।

পুরুষরা হাদীসটির সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিন। তাহলে কি দেখতে পাচ্ছেন ? আপনি কি সঠিক ভাবে আপনার দায়িত্ব পালন করছেন ? আপনি কি পরিবারকে পর্দার মধ্যে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন ? আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ আমরা নিজেরাতো সঠিক নিয়মে চলছি না বরং পরিবারকেও আমরা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছি।

ভাইয়েরা! আপনারা যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে,বোনদেরকে, আদরের কন্যাদেরকে পরপুরুষের চোখের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করছেন, স্ত্রীদের ছবি ফেসবুকে দিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছেন, স্ত্রীকে সাজিয়ে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন আর পরপুরুষ ও লম্পটরা চোখকে পরিতৃপ্ত করছে সেসব প্রত্যেক পুরুষের “দাইয়্যুস” হাদীসটির ব্যাপারে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নিজের পরিবারের মহিলাদের বুঝান, দাওয়াহ দিন। তারপরও না বুঝলে বাধ্য করুন, কেননা তাদের ব্যাপারে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন।

“এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে”। (বুখারী- ৭১৩৮; মুসলিম- ১৭০৫)।

এমনকি আপনার জান্নাত জাহান্নামও অনেকাংশে তাদের উপর নির্ভর করছে। কারণ তারা আপনার অধিনস্ত। আপনার পরিবার। আপনিই সবার অভিভাবক।

এতদিন গুনাহ করেছেন, সমস্যা নেই। আজ তাওবা করুন। প্রতিজ্ঞা করুন হ্যাপি নিউ ইয়ারের/ থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোন প্রোগামেই অংশগ্রহণ করবেন না। আগে অংশগ্রহণ করলে ক্ষমা চেয়ে নিন। আমার রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করে দেবেন।

একবার শয়তান বলল- ইয়া রব, আপনার ইজ্জত ও মহাত্মের কসম! আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো। যতক্ষণ তাদের ভিতর রুহ থাকবে।

রাব্বুল আলামীন বললেন- আমার ইজ্জত মাহাত্ম্যও বড়ত্বের কসম! আমি তাদেরকে ক্ষমা করতেই থাকবো যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইবে।

তাই আসুন, আমরা এ বছরের সকল গুনাহের জন্য রাব্বুল আলামীনের দরবারে ক্ষমা চেয়ে ইবাদাতের মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করি। নতুন নতুন ভালো কাজ করার উদ্যেগ নিতে পারি। ইবাদাত আরো বাড়িয়ে দেওয়ার নিয়ত করতে পারি। রাব্বুল আলামীন আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক: পরিচালক- আল বাশার ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা, প্রকাশক- উম্মাহ২৪ডটকম, সভাপতি- মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানী মাদ্রাসা, মানিকনগর, ঢাকা ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।