Home ইসলাম আলেমরা সৎ, মানবিক, অপরাধমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার কাজই করে যাচ্ছেন: মুফতি...

আলেমরা সৎ, মানবিক, অপরাধমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার কাজই করে যাচ্ছেন: মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী

[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র মুহাদ্দিস ও টংগী তিস্তা গেট শাহী জামে মসজিদের খতীব মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী শুক্রবার জুমায় খুতবার পূর্বে মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের চুম্বকাংশ উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]

মানব জাতির মধ্যে দ্বীনি ইলম অর্জনকারী উলামায়ে কেরামকে আল্লাহ তায়ালা সব চেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ, উলামায়ে কেরাম আল্লাহকে সবচাইতে বেশি ভয় করেন। উলামায়ে কেরামের অবদান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। যেমন—আজকে আমাদের দেশে করোনার মহামারী বিরাজ করছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞান ‘করোনা’ নিয়ে হয়রান।

অনেককে বলতে শোনা যায় যে, হুজুর আমাদের মাথায় ধরে না, আমাদের দেশে এই রকম ওয়াজ মাহফিল হয়। মসজিদে এতো গাদাগাদি হয়। মাদ্রাসাসমূহে মাসের পর মাস ধরে ভিড়ের মতো পরিবেশে ক্লাস চলছে নিয়মিত। কিন্তু নামাযী, আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে তো করোনায় কাবু করতে দেখছি না।কোন মাদ্রাসার একজন ছাত্রও তো করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর খবর পত্রিকায় খুঁজে পেলাম না। কত শত জানাযা হচ্ছে গায়ে গা লাগিয়ে, কিন্তু জানাযায় যাওয়া কাউকে তো করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে শুনি না।

করোনায় আমাদের প্বার্শবর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে দেড় লক্ষ মানুষ মারা গেছে, আমেরিকাতে হাজার হাজার মারা যাচ্ছে।আর আমাদের দেশে মাত্র সাত হাজার মৃত্যুবরণ করলেন করোনায়। স্বাভাবিকভাবেই তো বাংলাদেশে দৈনিক কয়েক শত লোক মারা যায়। সেই হিসেবে তো করোনায় মৃত্যুর হার হিসাবেই আসে না। এর মূল কারণ হলো— উলামায়ে কেরামের আমল।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে জমিনে যে পরিমাণ আমল হবে তা আসমানে যাবে এবং তা প্রসেস হয়ে সেই পরিমাণ রহমত আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে পাঠাবেন। উলামায়ে কেরাম এই কাজটা করে যাচ্ছেন। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা তারা প্রতিদিন তাহাজ্জুদের সময় উঠে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে দিন শুরু করেন। খাওয়া দাওয়া আর অযু ইস্তেঞ্জা ও ঘুমের টাইম ব্যতিত সারাদিন কুরআন-হাদিস ও দ্বীনের বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করতেছেন। এই জন্য এদের বরকতে আমাদের দেশকে বিভিন্ন রোগ ব্যধি ও দূর্যোগের হাত থেকে আল্লাহ হেফাযত রাখছেন। এটা উলামায়ে কেরামদের একটা অবদান। কওমি মাদরাসার আলেমদেরকে যারা অবজ্ঞা করে বেয়াদবি করেন, অতীত ইতিহাস থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত- কীভাবে ফেরআউন মূসা (আ.)এর সাথে বেয়াদবি করে ধ্বংস হয়েছিল। কীভাবে আবু জেহেল আমাদের নবীর সাথে বেয়াদবি করে ধ্বংস হয়েছে।

উলামায়ে কেরাম দেশের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ও যোগ্যতাসম্পন্ন সন্তান। এদেশের জন্য উলামায়ে কেরাম একটা বিশেষ সম্পদ। এদেরকে যারা গবেট বলেন, তাদেরকে আমি বলতে চাই, যারা ত্রিশ পারা কুরআন সিনায় ধারণ করে রাখেন তারা কখোনো গবেট হতে পারে না। তারা আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত। তারা যোগ্য, মেধাবী এবং সর্বোপরি দেশের সু নাগরিক।

আরও পড়তে পারেন-

এটা গভীর হতাশার বিষয় যে, আমাদের দেশের এসপি সাহেবরা যদি বলেন, এদের হাত ভেঙ্গে ফেলে দিবে। তাহলে বুঝতে হবে, তিনি অনধিকারচর্চা করছেন এবং তার নিজের ধ্বংস ডেকে আনছেন। কারণ, ইতিহাসে দেখা যায়- আলেমদের সাথে বেয়াদবি করে, আলেমদেরকে কষ্ট ও হয়রানী করে কারো পরিণতি ভাল হয়নি। আমরা তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আলেমদের ক্ষতি কামনা করে ও তাদেরকে হয়রানী করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না। কারণ, আল্লাহর কালাম সিনায় ধারণকারীদের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ আল্লাহ সহ্য করবেন না। তার প্রতিফল দুনিয়া থেকেই শুরু হয়ে যায়। এমন ঘটনা ইতিহাসে অজস্র আছে। সুতরাং আলেম-উলামা, মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরা সতর্ক হয়ে যান, আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হওয়া থেকে।

উলামায়ে কেরামদেরকে যারা চাঁদাবাজ বলেন, মূলত: তারাও চাঁদাবাজি করে। আমাদের দেশের সরকারেই তো চাঁদাবাজি করছে। আমি একটা গাড়ি কিনলে গাড়ির দামের চেয়ে তিন গুণ ভ্যাট এবং ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এটা রাষ্ট্রকে চাঁদা দিচ্ছি। উলামায়ে কেরামরা চাঁদা তুলে সারাদেশ থেকে গরিব মেধাবী, সুবিধা বঞ্চিত ও শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়া শিশু-কিশোরদেরকে ধরে এনে যোগ্য আলেম, যোগ্য মানুষ এবং দেশর সু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেছেন। যেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র তা করছে না। আলেমরা তো মাদ্রাসাগুলোতে এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন যে, চুরি করা যাবে না, ডাকাতি করা যাবে না, অন্যের সম্পদ আত্মসাত করা যাবে না, যিনা-ব্যভিচার করা যাবে না, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, দুর্নীতি-লুটপাট ও রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাত করা যাবে না, মানুষের সাথে সদাচরণ করতে হবে, সবসময় সত্য কথা বলতে হবে, সুদ-ঘুষ নেওয়া যাবে না, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের দেখভাল করতে হবে, গরীবদেরকে দান-সদক্বা করতে হবে, বিপদগ্রস্তের সহায়তা করতে হবে, অপব্যয় করা যাবে না ইত্যাদি। এভাবে আলেমরা তো অপরাধমুক্ত সৎ, মানবিক ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার কাজই করছেন রাত দিন। এজন্য তো আলেম-উলামাদেরকে স্বর্ণপদক দেয়ার দরকার ছিল। অথচ কী করে তারা আলেমদের বদনাম ও কুৎসা রটাতে পারে?

এসব উলামা-বিদ্বেষীদেরকে বলব, আলেমদেরকে মানুষ নিজ ইচ্ছায় চাঁদা দিয়ে দোয়া নেয়, আর তোমাদেরকে বাধ্য হয়ে চাঁদা দিয়ে দিন-রাত বদ দোয়া দেয় ও গালি দেয়। এটাই হলো আলেমদের শাহী মর্যাদা।

অনুলিখনে- মুহাম্মদ আল আমীন

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।