Home বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মোবাইল অ্যাপ কতটা নিরাপদ? ৫টি সতর্কতামূলক লক্ষণ খেয়াল রাখুন

মোবাইল অ্যাপ কতটা নিরাপদ? ৫টি সতর্কতামূলক লক্ষণ খেয়াল রাখুন

আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নতুন নতুন অ্যাপে ঢুঁ মারাটাও এক প্রকার বিনোদন, বিশেষ করে যখন সেটির উদ্দেশ্য হয় জীবনকে আরেকটু সহজ করা।  কিন্তু আমরা হরদম অসতর্কতাবশত অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিরাপদ কি না, বুঝে ওঠতে পারি না। তাছাড়া আজকাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে অ্যাপের সংখ্যা এত বেড়েছে, সেসব নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখার প্রয়োজনটুকুও অনেকে বোধ করি না।

ভুয়া অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিপদে পড়েননি, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। মার্কেটপ্লেসে রিপোর্ট করে মাঝে মধ্যে এগুলোকে নির্মূল করার চেষ্টা হলেও একই জায়গায় নতুন কোনো অ্যাপ সহসাই জায়গা করে নেয়।

একটি অ্যাপ কতটুকু নিরাপদ, তা খালি চোখে বোঝা সবার জন্য একই রকম সহজ নয়। অনেকের কাছেই প্রযুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বোধগম্য হয়ে ওঠে না; যথাযথ সতর্কতার পরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক ফসকে যায়। তাই অ্যাপ ডাউনলোডের আগেই ছোট, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা উচিত।

ডেভেলপারের ওয়েবসাইট পাওয়া দুষ্কর

যদি আপনি ডেভেলপার বা অ্যাপটির নির্মাতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য খোঁজার চেষ্টা করে এ সংক্রান্ত কোনো ওয়েবসাইটই খুঁজে না পান, নির্মাতা দলটি সম্পর্কে কোনো তথ্যই না পান, তাহলে ধরে নেবেন সেই অ্যাপকে বিশ্বাস না করাই ভালো।

‘কে আসলে অ্যাপের নির্মাতা?’ সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে এই তথ্য বিবেচনা করতেই হবে। কিছু প্রতিষ্ঠান সুরক্ষার খাতিরে নিজেদের সম্পর্কে তথ্য গোপন রাখে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইন্টারনেটে কোথাও কোনো তথ্য নেই। এটিও বিপজ্জনক।

আবার, একই ডেভেলপার অন্য কী কী অ্যাপ তৈরি করেছে, সেটি জানাও দরকারি।

যদি তাদের বাদ-বাকি অ্যাপগুলো নিয়ে দুর্নাম থাকে, তবে ইন্সটল করতে চলা অ্যাপটি নিয়ে আপনাকে আলাদা করে ভাবতে হবে।

যদি ডেভেলপার বিশ্বস্ত হয়, তাহলে সে নিজ উদ্যোগেই তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে যথার্থ তথ্য সরবরাহ করবে; সেক্ষেত্রে সে চাইবে ব্যবহারকারী যেন বেশি করে তাদের সেবা সম্পর্কে জানেন।

জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন স্টোরে অ্যাপটি খুঁজে পাওয়া যাবে না

শুধু নামী ও সুপরিচিত মার্কেটপ্লেস থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করবেন। ভিপিএন কানাডার সিইও জেফ ওয়াকার বলেন, ‘অ্যাপ্লিকেশন নামাবেন আপনার স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড অনুযায়ী।’

‘যেমন ধরুন, আপনার যদি আইফোন থাকে, তাহলে শুধু অ্যাপলের অ্যাপস স্টোর থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করা ভালো। যদি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হন, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে গুগল প্লে স্টোর। স্যামসাং ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে গ্যালাক্সি অ্যাপস স্টোর।’

ব্র্যান্ড নির্দেশিত মার্কেটপ্লেসে যেসব অ্যাপ পাওয়া যায় সেগুলোতে ‘প্রোভাইডারের’ নির্দেশিকা মেনে চলার প্রবণতা বেশি।

অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যক্তিগত তথ্য চাইবে

যদি কখনো অ্যাপ্লিকেশন নিজে থেকেই আপনাকে ব্যাংকের হিসাব বা ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে বলে, তাহলে কখনোই তা করবেন না।  যদি সেই অ্যাপের ওপর আপনার ব্যাংকের লোগো থাকে অথবা ব্যাংক কর্তৃক সত্যায়িত (সার্টিফায়েড) হয়ে থাকে, তবেই তা বিশ্বাসের সাথে ব্যবহারযোগ্য। থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা কখনোই সুরক্ষিত নয়।

যে অ্যাপ্লিকেশনই আপনার কাছে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য চাইবে, আপনার কর্তব্য হবে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা, আপনার ফোন থেকে সেই অ্যাপ সরিয়ে দেওয়া এবং বিকল্প একটি অ্যাপ খুঁজে নেওয়া।

স্ক্রিনশট দেখতে কৃত্রিম লাগবে

‘ফেক’ অ্যাপগুলো জমিয়ে রাখা ছবি বারবার ব্যবহার করে, সেসব ছবি সাধারণত হয় বাজেভাবে সম্পাদিত গ্রাফিক্সের ফলাফল। এসব অ্যাপের ডেভলপাররা অন্য অ্যাপ থেকে চুরি করা ছবি ব্যবহার করবে।

অনেক সময় ছবির সঙ্গে আমরা কিছু লেখা বা টেক্সট দেখি।  এসব লেখার মাধ্যমেও অনেক কিছু ফুটে ওঠে অ্যাপের বৈধতা নিয়ে।

আরও পড়তে পারেন-

যেমন, সেখানে ব্যবহৃত বাক্য ঠিক আছে কি না, ব্যাকরণ সঠিক হয়েছে কি না, বাক্যাংশ ঝাপসা হয়ে এসেছে কি না ইত্যাদির মধ্যেও ফুটে ওঠে অ্যাপের নির্ভরযোগ্যতা। বৈধ একটা অ্যাপ যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে ছবি তার ব্যবহারকারীদের দেখাতে চাইবে। একই ছবি বারবার দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের বিরক্ত করতে চাইবে না। ভালো অ্যাপগুলো চেষ্টা করবে আপনাকে আকৃষ্ট করতে; আপনি যেন অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য তারা আপনাকে রীতিমত প্রলুব্ধ করবে।

ডাউনলোডের আগে যা খুঁজবেন

আমরা যখন কোনো অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করি, তখন এর সঙ্গে ব্যবহারবিধি ও শর্তাবলী সম্বলিত নামে ( টার্মস অব সার্ভিস) একটি পেজ আসে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানকার লেখার অংশটি পড়ে দেখি না। 

না পড়ে ও না জেনে-বুঝে প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীরা একটি অ্যাপকে তার ফোনের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্যের ‘নিয়ন্ত্রণ’ দিয়ে দেয়।

আপনারা অ্যাপ স্টোরে ঢুকে কোনো অ্যাপের পেজে গেলেই এই অংশটি দেখতে পাবেন, যেখানে বিভিন্নভাবে আপনার কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে।

ওই প্রশ্নের সঙ্গে যদি অ্যাপের বৈশিষ্ট্য মেলে, তাহলে বুঝবেন কোথাও কোনো গলদ নেই।

অ্যাপটি কি আপনার ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এবং ব্যক্তিগত ফাইলের তথ্য চাচ্ছে? বারবার যদি একই রকমের তথ্য চায় এবং এরসঙ্গে অ্যাপের মূল ফিচার বা বৈশিষ্ট্যের কোনো যোগসূত্র না থাকে, তাহলে অবশ্যই অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড থেকে বিরত থাকুন। ভালো করে খতিয়ে দেখুন, কেন এটি আপনার কাছে ‘এক্সেস’ চাচ্ছে ফোনে থাকা নানান জিনিসের।

একটা গেম অ্যাপ্লিকেশনের কখনোই আপনার ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট কিংবা মেসেজ অপশনের এক্সেস চাওয়ার কথা নয়।

সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি কোনো অ্যাপ ডাউনলোডের আগে তা নিয়ে অনলাইনে একটু খোঁজখবর নেন। এতে আগের কোনো পাবলিক রিভিউ আছে কি না, তা-ও জেনে নিতে পারবেন। কী জানতে পারলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন অ্যাপটি নামানো ও ব্যবহার করা উচিত কি না।

জীবনকে একটু সহজ করে তুলতে গিয়ে যেন আমরা এমন কোনো ভুল না করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে হুমকির দিকে ঠেলে দেবে। সময় থাকতে সচেতন হওয়াটাই কাম্য।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।