Home সাক্ষাৎকার আনুশকা হত্যা: তরুণ-তরুণীরা কেন অন্ধকারে পা বাড়াচ্ছে? কী ভাবছেন ছাত্র নেতারা?

আনুশকা হত্যা: তরুণ-তরুণীরা কেন অন্ধকারে পা বাড়াচ্ছে? কী ভাবছেন ছাত্র নেতারা?

মুহাম্মদ আল আমীন: আনুশকা নূর আমিনের ঘটনাটা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য একটা লজ্জাজনক কেস। ভারতীয় আর পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আসক্ত কিশোর-কিশোরীদের অনেকের জন্যই এখন বিএফ, জিএফ, রিলেশন, ব্রেক-আপ, মিউচুয়াল সেক্স, এমনকি রুমডেটও অনেকটা পানি-ভাত এর মতই। খুব সহজেই এরা মিশছে একে অপরের সাথে। মোবাইল আর ইন্টারনেট এদের পারস্পরিক যোগাযোগকে করে তুলেছে একদম সহজ৷

আবার এদের অনেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এমন হাজারো তরুণ তরুণীরা দিনদিন অন্ধকারে পা বাড়াচ্ছে তার কয়টারইবা খবর আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে। তাই এদের উত্তরণের পথ খুঁজতে কয়েকজন তরুণ তাদের ভাবনা শেয়ার করেছেন উম্মাহ২৪.কমে।

– মাওলানা মাহমুদ হাসান।

উদীয়মান তরুণ, নবগঠিত ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বারিধারাস্থ ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি মাওলানা মাহমুদ হাসান বলেন— ধর্ষণের দায় কি শুধু দিহানের? কলাবাগানে ঘটে যাওয়া আনুশকা ফ্রি মিক্সিংর কারণে ধর্ষণ ও মৃত্যুর শিকার হয়েছে। কিন্তু এটা কি আদৌও কোন ধর্ষণ ছিল? পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে এসেছে উভয়ের সম্মতিতেই তাদের এই যৌন সম্পর্ক হয়েছে এবং পরবর্তীতে অধিক রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু ঘটেছে। এর দায়ভার শুধু দিহানেরই নয়, সমাজের উপরও আছে। কারণ, সমাজ থেকে এখন ধীরে ধীরে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা উঠে যাচ্ছে। যুবকরা পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চায় সমাজে অবাধ যৌনচার ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্য আমাদের ইসলামী নীতি-নৈতিকতা ও নির্দেশনায় সমাজ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এ সমস্ত ঘৃণিত কাজ সমাজ থেকে দূর হয়ে যাবে।

– বশির আহমদ

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার আরো এক তরুণ মেধাবী ছাত্র এবং ছাত্র জমিয়ত বারিধারাস্থ ক্যাম্পাস শাখার সেক্রেটারি বশির আহমদ বলেন— দেখুন! আনুশকা হত্যা ট্রাজেডি অত্যন্ত দুঃখজনক এক ট্রাজেডি। আমি এর দায়ভার যেকোনো এক পক্ষকে দিচ্ছি না। বরং এ ক্ষেত্রে আনুশকা ও দিহান উভয়েই যেমন দায়ী, তার চেয়ে বেশি তাদের ফ্যামিলি, তাদের অভিভাবক, তথাকথিত নারীবাদীরা এবং যারা নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে লিভ টুগেদার, ফ্রী মিক্সিং ও স্লিপ ওভারের প্রোমোট দিচ্ছে তারা।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আজ আমাদের তরুণ সমাজ অন্ধকারে পা বাড়ানোর প্রমোট পাচ্ছে ভয়াল পর্ণোগ্রাফি, ওয়েব সিরিজ নামের নগ্নতা ও কাছে আসার গল্পের নামে নাটক সিনেমা থেকে।এসব যদি বন্ধ না করা হয়, তরুণ-তরুণীদের ইসলামি দীক্ষা না দেওয়া হয়, তাহলে এভাবে আরো অনেক আনুশকাকে এভাবেই হারাতে থাকবে এ সমাজ।

– মুহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম (সামি)।

আরো এক প্রতিভাবান তরুণ, আলোর দিশারী ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম (সামি) বলেন— মাষ্টার মাইন্ড স্কুলের ও লেভের শিক্ষার্থী আনুশকার (১৭) মৃত্যুতে সারা দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

গ্রুপ স্টাডির নামে নিজের প্রেমিকের বাসায় একান্তে সময় কাটানোর সময় বিকৃত যৌনাচারে তার মৃত্যু ঘটে। আজ মেয়েটি মারা না গেলে পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকতো আরেকটি সতিত্বনাশের ঘটনা। একদিকে দিহানরা শত শত নিরীহ আনুশকাকে বশে এনে ইজ্জত খুবলে খাচ্ছে। অন্যদিকে এ প্রজন্মের ছেলেরা পাচ্ছে বিয়ের আগেই ইজ্জত বিকোনো আনুশকা। আর তাদেরকে সমর্থন করার জন্য তৈরি হচ্ছে একদল বস্তাপঁচা মানসিকতার লোক। সমাজটাকে এভাবে জারজে ভরে দিচ্ছে তথাকথিত চেতনার ধ্বজাধারী সেক্যুলাঙ্গার শাহবাগি প্রজন্ম।

তিনি আরো যোগ করে বলেন, এ শুধু এক দিহান আর আনুশকার গল্প। এরকম লাখো দিহান আর আনুশকার গল্প আমাদের সমাজে রয়েছে, যা প্রকাশ পায় না রক্তপাত বা মৃত্যু না হওয়ার কারণে। কিন্তু সমাজের এই আবর্জনা বা মহামারীর মূলে কি কারণ রয়েছে? এর প্রধান কারণ হচ্ছে-

  • ধর্মীয় জ্ঞান থেকে আমাদের সমাজ এবং এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাত গুটিয়ে নিয়েছে এবং দুই জনের সম্মতিতে বিয়ের পূর্বেই মিউচুয়াল সেক্স বৈধতার মত নিকৃষ্ট শিক্ষা আমাদের সন্তানদেরকে স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটিতে দেয়া হচ্ছে।
  • আধুনিকতার নামে পশ্চিমাদের কৃষ্টি কালচার প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের সমাজের মাঝে।
  • লাগামহীন স্বাধীনতা, নারীর অশালীন পোষাক এবং নারী-পুরুষের অবাধ মিলা মিশা আমাদের সমাজকে ঘোর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
  • পিতা মাতার অসতর্কতা ছেলে মেয়েদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছে পরস্পরের অবৈধ সম্পর্ক, মিলামিশা এবং বিয়ে বহির্ভুত যৌন মিলনের মত নিকৃষ্ট কাজে। যার ফল স্বরূপ আজকে আমাদের সমাজে ধর্ষণ, খুন, ব্যভিচার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

নাহিদুল ইসলাম সামি আরো বলেন, অন্যদিকে একদল ইসলাম বিদ্বেষী নারীবাদীরা সমান অধিকারের সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে নারী সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে প্রাশ্চাত্যের ফ্রি-সেক্সের মতো জঘন্য সাংস্কৃতির দিকে। ধর্মীয় সাংস্কৃতি থেকে আজকাল তরুণ-তরুণীরা বিমুখ হয়ে ভোগবাদে ডুবে যাচ্ছে। নারীদের ব্যাপারে ইসলামের মহামান্বিত বিধান পর্দাকে আজকের আধুনিক সমাজের নারীরা স্বাধীনতা বিরোধী মনে করছে।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, এদেশে যদি আবারো শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর মর্যাদা নিশ্চিত এবং আদর্শবান পুরুষ গঠন করতে হয়, তাহলে ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের কোন বিকল্প নেই।

তাই আমি বলব, হে দেশ, হে পিতা, হে ভাই, সতর্ক হউন— আধুনিকতা আর স্বাধীনতার নামে যেই অশ্লীলতা সমাজে চলছে, তার লাগাম টেনে ধরুন। অন্যথায় এর আযাব আপনার ঘর পর্যন্ত এসে পৌছবে। ঘরে ঘরে দিহান আর আনুশকাদের জন্ম হবে। আল্লাহ মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুক, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হেফাযত করুক। আমীন।

– মাওলানা আব্দুল করীম।

হুফফাজ কল্যাণ সোসাইটি বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল করীম বলেন— এ ব্যাপারে কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামের পর্দার বিধান বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাশ করা হলে আমাদের তরুণ সমাজ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে না বলে বিশ্বাস করি। ছেলে মেয়ে বাসার বাহিরে কখন কোথায় কার সাথে সময় পার করছে সেই বিষয়ে অভিভাবকগণকে সচেতন থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের জন্য পৃথক ক্লাসের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের খেয়াল থাকা প্রয়োজন।

– মাওলানা রাকিবুল ইসলাম।

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ টাংগাইল জেলার সহ-সভাপতি মাওলানা রাকিবুল ইসলাম বলেন—ঢাকার স্কুল ছাত্রী আনুশকার হত্যা, শুধু তার পরিবার নয় সারা দেশে এক শোকের ছায়া বিরাজ করছে। আমার দেশে এমন ঘটনা আজ নতুন নয়। এমন ট্রাজেডি দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমারা এর মূল কারণ কেন চিহ্নিত করে প্রতিকার করছি না! প্রতিকারের রাস্তা কেন খুঁজছিনা! আর কত প্রাণ হারালে আমরা সচেতন হবো। এই প্রাণ গুলো হারানোর দায় যদি বলি বিবাহ বহির্ভূত অবাধ মেলামেশা, তা কি অযৌক্তিক হবে!

তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজের একশ্রেণির অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বিবাহ বহির্ভূত গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড, জাস্টফ্রেন্ডের প্রতি উৎসাহদান করে। কাছে আসার গল্প বলে সমাজকে ভয়বহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিবাহকে তারা কঠিন বিষয় করে উপস্থাপন করছে। ঠিক নাটক সিনামাতেও এই অবাধ মেলামেশার শিক্ষাই দেওয়া হচ্ছে। এসব অবাধ মেলামেশার পথকে আমাদের পরিহার করতে হবে। বিবাহকে সহজ করতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে সকলকেই সতর্ক হতে হবে। দুনিয়াতে ধ্বংসের পথ অনেক, কিন্তু শান্তির পথ একটিই। তা হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিলেই আমাদের সমাজ এসকল ট্রাজেডি থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করছি।

– মুহাম্মদ আল আমীন, করেসপন্ডেন্ট, উম্মাহ ২৪ ডট কম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।