Home লাইফ স্টাইল ইসলামের আলোকে ‘রাগ’ দমনের কয়েকটি উপায়

ইসলামের আলোকে ‘রাগ’ দমনের কয়েকটি উপায়

।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

অল্পতেই রাগা নিন্দনীয় : অন্যসব আবেগের মতোই রাগও মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। কেউ খুব দ্রুত রেগে যায়, আবার দ্রুতই তার রাগ চলে যায়। কেউ আবার দেরিতে রেগে খুব দ্রুত তার রাগ কেটে যায়। কেউ রেগে যায় খুব দ্রুত, কিন্তু তার রাগ সহজে কেটে যায় না; বরং সে বহুদিন পর্যন্ত সেই রাগ পুষে রেখে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। যারা অল্পতে রেগে যায় এবং সেই রাগ বহুদিন পুষে রাখে, রাসূল (সা.) তাদের নিকৃষ্ট মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তিরমিযী, হাদিস- ২১৯১)।

রাগ না হওয়ায় কল্যাণ নিহিত : রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মানুষ বড় ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারে। এ কারণে রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবিদের রাগ নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিতেন। আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে বলল, আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি (নবীজি) বলেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার তা বলেন, নবীজি (সা.) প্রত্যেকবারই বলেন, রাগ করো না।’ (বুখারি, হাদিস- ৬১১৬)।

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আব্দুল ওয়াহেদ (ইবনে তিন) (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর উপদেশ ‘রাগ করো না’-এর মধ্যে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কারণ রাগ মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে, সম্পর্ক নষ্ট করে, যা মানুষের ইহকালীন ক্ষতির কারণ হয়। কেউ কেউ রাগের বশবর্তী হয়ে আবার অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে বসে, যা মানুষের পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। (ফাতহুল বারি- ১০/৫২০)।

এ কারণেই হয়তো রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রকৃত বীর সে নয়, যে কুস্তিতে মানুষকে হারিয়ে দেয়; বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (বুখারি, হাদিস- ৬১১৪)।

ক্রুদ্ধ ব্যক্তির ওপর শয়তানের প্রভাব : মানুষ যখন রেগে যায়, তখন তার ওপর শয়তান ভর করে। ফলে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। রাসূল (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তি  আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.)-কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকল। আবু বকর চুপচাপ তার গালি শুনতে থাকলেন, আর তার দিকে চেয়ে রাসূল (সা.) মুচকি হাসতে থাকলেন। অবশেষে আবু বকর সিদ্দিক জবাবে তাকে একটি কঠোর কথা বলে ফেলেন। তাঁর মুখ থেকে সে কথাটি বের হওয়ামাত্র নবী (সা.)-এর ওপর চরম বিরক্তি ভাব ছেয়ে গেল এবং ক্রমে তা তাঁর পবিত্র চেহারায় ফুটে উঠল। তিনি তখনই উঠে চলে গেলেন। আবু বকরও (রাযি.) উঠে তাঁকে অনুসরণ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী? সে যখন আমাকে গালি দিচ্ছিল তখন আপনি চুপচাপ মুচকি হাসছিলেন। কিন্তু যখনই আমি তাকে জবাব দিলাম তখনই আপনি অসন্তুষ্ট হলেন? রাসূল (সা.) বলেন, তুমি যতক্ষণ চুপচাপ ছিলে ততক্ষণ একজন ফেরেশতা তোমার সঙ্গে ছিল এবং তোমার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছিল। কিন্তু যখন তুমি নিজেই জবাব দিলে তখন ফেরেশতার স্থানটি শয়তান দখল করে নিল। আমি তো শয়তানের সঙ্গে বসতে পারি না। (আল মুজামুল আউসাত- ৭/১৮৯)।

আরও পড়তে পারেন-

এ কারণেই রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে রেগে গেলে ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম’ পড়ার পরামর্শ দিতেন। কেননা মানুষের ওপর রাগ চেপে বসলে তখন শয়তান তাকে তাণ্ডব চালানোর প্ররোচনা দেয়। আর মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা আপনাকে প্ররোচিত করে, তবে আপনি আল্লাহর আশ্রয় চাইবেন, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা- হা-মিম আস সাজদা, আয়াত- ৩৬)।

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় : নিম্নে হাদিসে বর্ণিত রাগ নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) নানা অবস্থার প্রেক্ষাপটে তা বর্ণনা করেছেন।

এক. দোয়া পাঠ : সুলাইমান ইবনে সুরাদ (রা.) বলেন, দুই ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ (সা.)-এর সামনে পরস্পরকে গালি দিতে লাগল। তাদের একজনের চোখ লাল হতে থাকে ও ঘাড়ের রগ মোটা হতে থাকে। রাসূল (সা.) বলেন, আমি অবশ্যই এমন একটি বাক্য জানি এ ব্যক্তি তা বললে নিশ্চয়ই তার রাগ চলে যাবে। তা হলো- ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রজিম’। অর্থ : অভিশপ্ত শয়তান থেকে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি। লোকটি বলল, আপনি কি আমার পাগল ভাব দেখছেন! (আবু দাউদ, হাদিস- ৪৭৮১)।

দুই. স্থান পরিবর্তন : রাগ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি পদ্ধতি হলো, অবস্থান পরিবর্তন করা। বর্তমানে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরাও রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অবস্থার পরিবর্তন করে মনোযোগ অন্য দিকে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আবু জার (রা.) বলেন, রাসূলাল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগের উদ্রেক হয় সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ দূর হয় তো ভালো, অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে। (আবু দাউদ, হাদিস- ৪৭৮২)।

তিন. অজু করা : রাগ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি পদ্ধতি হলো, অজু করে নেওয়া। আবু ওয়াইল আল-কাস (রহ.) বলেন, একদা আমরা উরওয়াহ ইবনে মুহাম্মদ আস-সাদির কাছে গেলাম। তখন এক ব্যক্তি তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে তাকে রাগিয়ে দিল। (সঙ্গে সঙ্গে) তিনি দাঁড়িয়ে অজু করলেন। অতঃপর বললেন, আমার বাবা আমার দাদা ‘আত্তিয়্যাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, রাগ হচ্ছে শয়তানি প্রভাবের ফল। শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায়। অতএব তোমাদের কারো রাগ হলে সে যেন অজু করে নেয়। (আবু দাউদ, হাদিস- ৪৭৮৪)।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।