Home ওপিনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল মুসলমানদের জন্য, ইসলামবিদ্বেষীদের জন্য নয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল মুসলমানদের জন্য, ইসলামবিদ্বেষীদের জন্য নয়

।। তারেকুল ইসলাম ।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিবস। কিন্তু এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা প্রায় সবাই ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষিত। তাদের সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? তাছাড়া তাদের স্মরণে ঢাবি’র প্রচেষ্টা তেমন চোখে পড়েনা। কারণ আজকের ঢাবি ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।

তাছাড়া এ অঞ্চলের গরিব মুসলিম চাষা-ভূষার সন্তানদের শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু আজকে ইসলামবিদ্বেষী সেকুলারদের দাপটে ঢাবিতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা নানান বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার! বিশেষত ভর্তির সময় তাদের প্রতি সেকুলার কর্তৃপক্ষ বৈষম্যমূলক আচরণ করে।

আসলে ঢাবিতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যতদিন থাকবে ও পড়বে, ততদিন ‘ঢাবি থেকে ইসলাম খেদাও’ সেক্যুলার নীতি বজায় রাখা সম্ভব না। তাই, সেক্যুলার মেসবাহ কামাল, আবুল বারকাত ও আমেনা মহসিনদের ভয়টা এই জায়গায়। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মেধাকে নয়, মূলত তাদের ইসলামী আদর্শকেই তারা ভয় পান। তাদের আদর্শ ও মেধা এক হলে সেকুলার সাম্রাজ্য যে বেশিদিন টিকতে পারবে না- এটা তারা খুব ভালো করে বুঝেন বলেই ‘ঢাবি দিনদিন উচ্চতর মাদ্রাসা হয়ে উঠছে’ বলে তারা প্রায়ই আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন।

অধ্যাপক আমেনা মহসিন, ড. মেসবাহ কামাল ও আবুল বারকাতরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইসলাম খেদাও’ সেক্যুলারনীতির বাই-প্রোডাক্ট। বাংলায় রেনেসাঁ ও সেক্যুলারিজমের নামে ইসলাম খেদাও নীতি আজকে নতুন না, এর শিকড় প্রোথিত ঊনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বৃটিশ পৃষ্ঠপোষিত বাংলার হিন্দু রেনেসাঁসের গর্ভে!

যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সময় নবাব সলিমুল্লাহ ৬০০ একর জমি দান করেছিলেন এবং সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী জমিদার শ্রেণির সকল প্রতিরোধ অতিক্রম করে ঢাবি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিলেন, সেই নবাব সলিমুল্লাহ’র মৃত্যুবার্ষিকীর ব্যাপারে ঢাবি কর্তৃপক্ষের খবর থাকে না। কোনো বিশেষ স্মরণসভার আয়োজনও থাকে না! খুবই প্যাথেটিক ব্যাপার!!

পক্ষান্তরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধিতাকারী হিন্দুত্ববাদী শোষক জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী, স্মরণসভা, সঙ্গীতসভা ইত্যাদি জাঁকজমকভাবে সোৎসাহে আয়োজন করা হয় ঢাবিতে— যেন স্যার সলিমুল্লাহ নয়, রবীন্দ্রনাথই ঢাবির প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক নায়ক! অথচ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ঢাবি প্রতিষ্ঠার অন্যতম বিরোধিতাকারী!

আরও পড়তে পারেন-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মক্কা ও ফাক্কা ইউনিভার্সিটি’ বলে ব্যঙ্গ করতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও শ্রী আশুতোষ মুখার্জিরা। গরিব মুসলমান চাষাভূষার ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কী করবে? তখন শোষক হিন্দু জমিদারদের ছিল এমন সাম্প্রদায়িক হিংসুটে মন-মানসিকতা! এই হিন্দুত্ববাদী মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের সাথে আজকের মিসবাহ কামাল, আবুল বারকাত ও আমেনা মহসিনদের ভূমিকা মিলিয়ে নিন।

মোদ্দা কথায়, ১৯২১ সালে কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু জমিদারশ্রেণি কর্তৃক শোষিত ও নিপীড়িত বাংলাদেশের গরিব মুসলিম প্রজাদের শিক্ষার্জনের কল্যাণে ও স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে আবারও হিন্দুত্ববাদী শোষক জমিদারদের প্রেতাত্মারা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে প্রতি বছর সাড়ম্বরে বিভিন্ন পূজা উদযাপন করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে কুরবানির ঈদ উদযাপন হওয়ার নিউজ বা রিপোর্ট আমরা কখনো পাইনি। যদি কোনো হলে মুসলিম শিক্ষার্থীরা গরু জবাই করে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতো, তাহলে আর যায় কোথায়, সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে হল থেকে তাদের বহিষ্কার করার আওয়াজ তুলতো ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার মিডিয়াকুল! তাছাড়া চারুকলায় অঘোষিতভাবে গরুর মাংস রান্না নিষিদ্ধ সেটা আমরা ইতোমধ্যেই জানি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের পূজার আয়োজন হলে সমস্যা নাই; কিন্তু কুরবানির ঈদ উদযাপন হতে পারবে না। মাদরাসার স্টুডেন্টরা পড়তে পারবে না। কথিত সেক্যুলারিজমের নামে নামকরণ থেকে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দদ্বয় কেটে দিতে হবে। এই ইসলামবিদ্বেষী মন-মানসিকতার সাথে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কলকাতার হিন্দু সম্প্রদায়ের মুসলিমবিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ইতিহাস মিলিয়ে নিন। সেকুলার শিবসেনাদের দখলে আজকের ঢাবি!

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় ইংরেজি পত্রপত্রিকার কলামিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।