Home ইসলাম নামায সামাজিক বন্ধন মজবুত করে

নামায সামাজিক বন্ধন মজবুত করে

।। শায়খুল হাদীস মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ।।

ইসলামে নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। নামায ও সামাজিক বন্ধন একটির সাথে অপরটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মানব সমাজে সভ্যতা, নৈতিকতা ও সামাজিকতার বিকাশ ও সামাজিক বন্ধন মজবুতির জন্য নামাযের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এ জন্যই নামাযে জামাতের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে।

মানুষ সমষ্টিগতভাবে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে, একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাযে দাঁড়ায়। সেখানে ধনী-গরীব উচু-নিচুর কোনো ভেদাভেদ নেই। নামাযের পর একে অপরের খোঁজ-খবর নেয়। কোনো দিন যদি নিয়মিত কোনো মুসল্লী জামাতে শরীক হতে না পারেন, সকলেই তার খোঁজ-খবর নিতে তৎপরত হয়ে ওঠেন। প্রয়োজনে  বাড়ীতে গিয়ে তার বিষয়াদি জানতে চান।

নামাযের মাধ্যমে পরস্পর মায়া-মহাব্বত তৈরী হয় এবং সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়। তাইতো তাওহীদ ও রিসালাতের বিষয়ে সাক্ষ্যদানের  পর একজন মুসলমানের প্রধানতম কর্তব্য হলো নামায আদায় করা। কোনো ব্যক্তি  ইসলামের সুশিতল ছায়াতলে এসে এক কালিমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার  পরপরই রসূল (সা.) তাকে নামাযের তা’লীম দিতেন।

এমনকি রসূল (সা.) আরবের বিভিন্ন গোত্রের নামে যে সকল বাণী প্রেরণ করেছিলেন তাতে নামায মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্যরূপে পুন: পুন: উল্লেখ করেছেন। তিনি নবুয়তের তেইশ বছরে নামাযের প্রতি অধিক তাকিদ করে গিয়েছেন। ইন্তিকালের পূর্ব মুহূর্তে শেষ অসীয়ত স্বরূপ নামাযের কথাই উল্লেখ করে বলেছিলেন, নামায এবং তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। (ইবনে মাজাহ)।

ফরয ইবাদতসমূহের মধ্যে নামায সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কারণেই বুখারী শরীফের একটি হাদীসে এসেছে, প্রিয়নবী (সা.) নামাযকে যাকাত, হজ্জ এবং সওম নামক  রুকনের অগ্রে স্থান দিয়ে ইরশাদ করেন: ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদের উপর স্থাপিত। সেগুলি হলো ‘এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া-

এক. আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবূদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও  রসূল। দুই. নামায পাবন্দীর সাথে আদায় করা। তিন. যাকাত দেয়া। চার. হজ্জ করা এবং পাঁচ. রমযানের রোযা রাখা’।

নামায ইসলাম ও মুসলমানদের  প্রতীক। একজন মানুষ মুসলিম কি অমুসলিম তা নামায দ্বারাই বাহ্যতভাবে চিনা যায়। নামায দীনের খুঁটি। খুঁটি ব্যতিরেকে  কোনো ইমারত  যেমন টিকে থাকতে পারে না ঠিক তেমনিভাবে নামায ব্যতিরেকে মানুষের ইমান ও ইসলাম ও টিকে থাকতে পারে না।

হযরত রসূলে আরাবী (সা.) বলেন, ‘ ইসলামের খুঁটি হচ্ছে নামায,কিয়ামতের দিনে সর্বাগ্রে এ নামাযের হিসাবই গ্রহণ করা হবে’। তিনি আরো ইরশাদ করেন,  “কিয়ামত দিবসে বান্দাদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিস সম্পর্কীয় হিসাব গ্রহণ করা হবে সেটি হলো নামায’। নামাযের হিসাব যদি ভাল ও মঙ্গলজনক হয় তবে সে সফলতা লাভ করবে। আর যদি মন্দ হয় তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে’। (তিরমিযী)।

কোনো ব্যক্তির যদি জীবনে এক ওয়াক্ত নামায  ছুটে যায় তাহলে বুঝতে হবে তার জীবন থেকে অনেক বড় একটি অংশ ছুটে গেছে। হযরত নাওফাল ইবনে মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন; যে ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামায ছুটে গেল তার যেন পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ সবকিছু লুন্ঠিত হয়ে গেল। (তিরমিযী)।

নামায এমন একটি বিধান যা শরীয়তের মাপকাঠি যে বয়স থেকে একজন ব্যক্তির উপর বর্তায় তখন থেকে  সকলের সাথে সমানভাবে সংশ্লিষ্ঠ। অর্থাৎ  নারী, পুরুষ, ধনী, নির্ধন, রাজা, প্রজা, আমলা, কর্মচারী, যুবক, বৃদ্ধ, সুস্থ, অসুস্থ-সকলের উপর সমানভাবে ফরয। এটি এমন ইবাদত যা কোনো ব্যক্তি থেকে সামান্য জ্ঞান থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই রহিত হয় না।

এ ফরয পালনে যদি দাঁড়াবার মত শক্তি না থাকে, তাহলে বসে বসে হলেও আদায় করতে হয়। যদি বসে আদায় করার মতো শক্তিও না থাকে তা হলে শুয়ে হলেও আদায় করতে হয়। কারোর পক্ষে যদি মুখ দ্বারা শব্দ উচ্চারণ করা অসম্ভব হয় তা হলে হাতের ইশারা দ্বারা হলেও নামায পড়তে হয়। যাত্রা পথে কোথাও যাত্রা বিরতি দিয়ে নামায  পড়ার সুযোগ না থাকলে গাড়ীতে চলা পথে হলেও নামায পড়ে নিতে হয়। যদি ব্যক্তি কোনো সাওয়ারীর উপর থাকে তাহলে সাওয়ারী যে দিকে মুখ করে চলছে সে দিকে ফিরে হলেও নামায পড়ে নিতে হয়।

এক কথায় কোনো অবস্থাতেই নামায মাফ নয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষ মহিলাদের কিছুটা ছাড় রয়েছে বিস্তারিত লেখার এখানে সুযোগ নেই। সকল নবীরাই নিজ নিজ উম্মতকে নামাযের জন্য নির্দেশ ও তাকিদ করে গেছেন। পবিত্র কুরআনে হযরত ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, লুকমান, মূসা, ঈসা (আ.) প্রমুখ নবী কর্তৃক নিজ নিজ বংশধর ও উম্মতকে নামাযের তাকিদ প্রদান সূচক বহু আয়াতের উল্লেখ পাওয়া যায়।

আরও পড়তে পারেন-

নামাযের মাহাত্ম সম্পর্কে পবিত্র হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন, আমি নামাযকে আমার এবং আমার বান্দার মধ্যে দুভাগে বিভক্ত করে নিয়েছি। এক ভাগ আমার জন্য, অপর ভাগ আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা প্রার্থনা করে সে তা লাভ করে। বান্দা যখন বলে ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার প্রাপ্য’ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে ‘যিনি দয়াময় ও পরম দয়ালু’ আল্লাহ তদুত্তরে বলেন: আমার বান্দা আমার গৌরব ও মহিমা ঘোষনা করলো। যখন বান্দা বলে ‘যিনি বিচার দিবসের প্রভু’, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে ‘আমরা শুধু তোর্মাই এবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি’ তখন আল্লাহ বলেন, এ আয়াত আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্থাৎ সে যা প্রার্থনা করবে তা-ই সে পাবে। যখন বান্দা বলে‘ আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করো যে পথ তোমার অনুগ্রহপ্রাপ্তদের পথ। তোমার ক্রোধপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথ নয় অর্থাৎ আপনার ক্রোধপ্রাপ্তদের পথে আমাদেরকে পরিচালিত করবেন না।

তখন আল্লাহ বলেন, এটি আমার বান্দার জন্য, সে যা চায় তা সে নিশ্চয় পেয়ে যাবে। (আহমদ, ইবনে মাযাহ) প্রিয় পাঠক: সকল নবী ও রসূলরা নামাযের প্রতি এতো বেশী গুরুত্ব কেন দিয়েছেন? এই জন্যই দিয়েছেন নামায দ্বারা ব্যক্তি থেকে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি আসে। দূর হয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। তৈরী হয় পরষ্পর সামাজিক বন্ধন।

একটু লক্ষ্য করুন। মানুষের আখলাক ও নৈতিকতার উন্নতি সাধন এবং কুপ্রবৃত্তি সমূহের দমনে নামায অব্যর্থ আমল। নামায ব্যক্তির মনকে পরিচ্ছন্ন ও পরিস্কার করে দেয়। ব্যক্তির মনে আল্লাহর মহানত্ব ও তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত করে। অবাধ্যতা কিংবা গর্হিত কাজ ও অশ্লীলতার প্রতি সে আন্তরিকভাবে ঘৃণ্যভাব পোষণে সক্ষম হয়।

ইরশাদ হচ্ছে- ‘ নামায যথার্থভাবে আদায় করো, নিশ্চয় নামায (ব্যাক্তিকে) সকল অশ্লীল ও মন্দকার্য থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত- ৪৫)।

আল্লাহ আমাদের সকলকে নামাযের ইহতেমাম করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: শায়খুল হাদিস- তিলপাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, খিলগাঁও, ঢাকা ও মিফতাহুল উলূম মাদ্রাসা, বাড্ডা, ঢাকা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- সানমুন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, নয়াপল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।