Home মহিলাঙ্গন নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিতের দায়ভার পুরুষের

নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিতের দায়ভার পুরুষের

।। সাদিয়া আহমদ আনিকা ।।

আল্লাহ পাক পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যস্থিত সমূদয় বস্তু নিয়ে এবং জীব-জানোয়ার, পশু-পাখি, বৃক্ষ-লতা সৃষ্টি করলেন ‘কুন’ শব্দ দ্বারা। একমাত্র মানুষ সৃষ্টিই হলো ব্যতিক্রমধর্মী। নিজ কুদরতী হাতে মাটিকে খামির করে তিনি তৈরী করলেন আদম (আ.)এর আকৃতি বা দেহাবয়ব। তারপর তাতে প্রাণ সঞ্চার করে পাঠালেন জান্নাতে, যার বর্ণনা মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভবপর নয়। অনন্ত কালের সুখের আলয় এই জান্নাত। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা পূর্ণ মর্যাদার সাথে জান্নাতে পাঠালেন অবস্থান করার জন্য। কিন্তু আদম (আ.) এত সুখের পরেও কিসের যেন অভাব অনুভব করতে লাগলেন। কিসের তরে যেন তিনি ছটফট করতে লাগলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গায়েবের মালিক। তিনি সবই বুঝতে পারলেন। বুঝতে পারলেন, আদম (আ.) একজন সাথী বা বন্ধুর অভাবে মানসিক ভাবে ছটফট করছেন।

তাই আদম (আ.)এর অশান্তি দূর করার নিমিত্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদম (আ.)কে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে তাঁর পাঁজরের একখানা হাড় দ্বারা কুদরতী ‘কুন’ শব্দের মাধ্যমে সৃষ্টি করলেন আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)কে। অর্থাৎ- হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া পরস্পরের প্রথম সাথী বা সংগী হলেন। পরে সেই বন্ধুত্ব আরো পাকাপোক্ত করার নিমিত্তে আল্লাহ পাক উভয়কে বিবাহ দিয়ে সম্পর্ক আরো পাকাপোক্ত করে দেন। সেই থেকে নারী ও পুরুষ উভয়ে আল্লাহ পাকের বেঁধে দেওয়া বিধান প্রতিপালন করে আসছেন। এই প্রেক্ষিতে ইসলাম নারীর মূল্যায়ন করে থাকে সমঅধিকারের ভিত্তিতে।

ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে নারীকে সমঅধিকার প্রদান তো দূরের কথা, নারীকে মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না। কোন কোন ধর্মে বলা হয় নারী অমঙ্গলের প্রতীক। আবার কোন কোন ধর্মে নারীকে পুরুষের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার আধার কিংবা সেবাদাসীরূপে আখ্যায়িত করে সব ধরনের ধর্ম-কর্ম এবং যাবতীয় মানবিক অধিকার থেকে করে রেখেছে বঞ্চিত। একমাত্র ইসলাম ধর্মই এর ব্যতিক্রম।

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত; এমন ঘোষণাও দিয়েছে। প্রাক-ইসলামী যুগে যা ছিল কল্পনাতীত। শুধু তাই নয়, ইসলাম ছাড়া অপরাপর ধর্ম কিংবা মতবাদে নারীর অবমূল্যায়ন ধারাবাহিকভাবে সেই আবহমান কালের নিয়মেই চলে আসছে। যিনি নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই নারী ও পুরুষকে উভয়ের বন্ধু বলে ঘোষণা করেছেন। অথচ আজ সেই বন্ধুকেই সৃষ্টিগত কারণে তাদের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে তাদের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার দ্বারা নিষ্পেষিত করা হচ্ছে।

[ দুই ]

সৃষ্টির আদিকাল হতেই পুরুষের পাশে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু একশ্রেণীর বিত্তবান, প্রভাবশালী ও শাসক সমাজে নারীকে সবসময়, সর্বকালে অবমূল্যায়ন করে কেবলমাত্র ভোগের সামগ্রী ও সেবাদাসী হিসেবেই ব্যবহার করে আসছে। ইসলাম-পূর্ব যুগে সব ধর্মেই নারীকে অমঙ্গলের প্রতীকরূপে গণ্য করা হতো। যদিও নারী ছাড়া নরের অস্তিত্ব ছিল কল্পনাতীত। তবে একথাটি তৎকালীন পুরুষ সমাজ জানতো না কিংবা অনুভব করতো না- তা নয়; তারা সবই বুঝতো।

শুধু নারীকে নিজের অধীনে কিংবা দাবিয়ে রাখার নিমিত্তে তাদের উপর তথাকথিত আধিপত্য বজায় রাখতো। মহান স্রষ্টার বিধান লঙ্ঘন করে নিজেদের মনগড়া পক্ষপাতদুষ্ট তথাকথিত বিধান দ্বারা শয়তানের প্ররোচণায় পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র চালাতো। আর পুরুষাপেক্ষা নারী জাতি দুর্বল বিধায় পুরুষদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-বিধানকে তারা স্রষ্টার বিধানরূপে মেনে নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও মুখ বুজে থাকতো। এভাবে পুরুষের চাপিয়ে দেয়া সব অনাচার, নির্যাতন ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিয়ে নারী জাতি পুরুষের মনোরঞ্জন করে বেঁচে থাকতো।

এই তো কিছুদিন আগেও পৌত্তলিক হিন্দু ধর্মে স্বামীর মৃত্যু হলে স্বামীর সহযাত্রী হিসেবে বধূকে জ্যান্ত চিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিতে হতো। আর সেই নিষ্ঠুর করুণ দৃশ্য হাজার হাজার মানুষ নামের পশুরা অবলোকন করে উল্লাসে ফেটে পড়তো। আর এই অনুষ্ঠানের নাম দেয়া হতো সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা। এই ছিল সমাজব্যবস্থা এবং এই পৈশাচিক কর্মকান্ডকেই ধর্মের অঙ্গ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হতো।

প্রাক-ইসলামী যুগ তথা আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়াকে অত্যন্ত অবমাননাকর ও অশুভ বলে মনে করা হতো। তাইতো ইতিহাসে দেখা যায়, কারো ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। যা শুনলেও গা শিউরে উঠে। মোট কথা, নারীকে ইসলাম-পূর্ব সময়ে মানুষের মধ্যেই গণ্য করা হতো না। বিভিন্ন ধর্মে নারীকে শয়তানের বাহন, নারীর আত্মা বলতে কিছু নেই, নারীই যাবতীয় পাপাচারের প্রতীক বলে ঘোষণা করা হতো।

হিন্দুধর্মে প্রচলিত ছিল সহমরণ প্রথা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নারী যদি পুরুষের আগে মারা যায়, তখন কিন্তু পুরুষকে নারীর সাথে আত্মাহুতি দেয়ার কোন বিধান হিন্দু ধর্মে নেই। বরং স্ত্রীকে দাহ করে এসেই স্বামী দ্রুত অপর একটি নারীকে বিবাহ করে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতো। পক্ষপাতিত্বমূলক এই বিধান কি স্রষ্টার বিধান হতে পারে? অথচ এই অন্যায় আচরণকে সমাজপতিরা দিব্যি স্রষ্টার বিধান বলে চালিয়ে দিত।

এই জুলুম ও অন্যায়-অত্যাচার স্রষ্টা সইতে পারলেন না। তিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, নারী মুক্তির অগ্রনায়ক, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে দুনিয়ায় পাঠালেন বিশ্ববাসীর জন্য রহমতের উসীলা করে। তিনিই সর্বপ্রথম ঘোষণা দিলেন, নারী মর্যাদাবতী সত্তা এবং সে দাসী নয়, বন্ধু। আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকাতে পুরুষের মত নারীরও আছে সমান অধিকার। শুধু একক সম্মান কারো নয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর মর্যাদা ও পাওনা অনেক বেশী।

[ তিন ]

আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকূলে যত প্রাণী আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল সৃষ্টি হল মানুষ। একথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ ধরে নিন, একটি গরু বা ছাগল বাচ্চা প্রসব করল। এই বাচ্চাকে লালন পালন করে বড় করার দরকার হয় না। জন্মের পরেই সে স্বনির্ভরতা অবলম্বন করে থাকে। তাকে দেখিয়ে দিতে হয় না কোথায় তার মায়ের স্তন, আর কীভাবে তা আহার করতে হবে। অথচ মানব সন্তানকে জন্মের পরে অনেক দিন পরনির্ভর হয়ে থাকতে হয়। তখন সেই শিশুর একমাত্র আশ্রয়স্থল হল তার মা। মা যেভাবে তাকে রাখে সেভাবেই সে থাকতে বাধ্য হয়।

জন্মের পর থেকে সাবালক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেই শিশুর সব দায়িত্ব বহন করতে হয় মাকে। পিতা যদিও জন্মদাতা, কিন্তু পিতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক বড় একটা গড়ে উঠে না। এ বিধান আল্লাহ তাআলারই দেয়া বিধান। কারণ, পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শক্ত সামর্থ করে, যাতে তারা বাইরে যে কোন শক্ত বা ভারী কাজ-কর্ম, চাষাবাদ করে জীবিকা সংগ্রহ করতে পারে। আর নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে অতিশয় কোমল ও নম্র করে। তাই ভারী বা শক্ত কোন কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কিন্তু নারীর যে গন্ডি বা বিচরণ সীমানা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে যে কর্ম তাকে সম্পাদনের ভার অর্পণ করা হয়েছে, তা মোটেও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্রের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। সন্তান গর্ভে ধারণ করা, দশ মাস সেই সন্তানকে পেটে বহন করা, তারপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রসব করার পর থেকে সেই সন্তানের পিছনে মায়ের যে অমানসিক কষ্ট স্বীকার করতে হয়, তা যদি পুরুষ উপলব্ধি করতে পারত, তাহলে দেশ আজ শান্তিতে ভরে যেত।

আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) সেই উপলব্ধির প্রেক্ষিতেই নারীর মর্যাদা কোথাও পুরুষের সমান, আবার কোথাও বা পুরুষের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে বলেছেন, সন্তানের বেহেশত মায়ের পায়ের নীচে। একমাত্র ইসলাম ছাড়া এই মর্যাদা নারীকে কোন ধর্ম বা সমাজ দেয়নি। আর ইসলামও শুধু শুধু এ মর্যাদা দান করেনি, চুল চেরা বিশ্লেষণ করে তার ন্যায্য প্রাপ্যই তাকে দান করা হয়েছে, এখানে অনুগ্রহ বা সহানুভূতির কোন প্রশ্ন নেই।

সন্তান জন্মের পরে মা স্তন্য দান করে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। এখন সেই সন্তান বড় হয়ে যদি চিন্তা-ভাবনা করে, ছোট বেলা মা তার বুকের দুধ খাইয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখিছিলেন, এখন আমি আমার মাকে সারা জীবন দুধের নহরের মধ্যে বসিয়ে রেখে সে ঋণ শোধ করব, তাহলে কি মায়ের সেই স্তন্য দানের ঋণ শোধ হবে? না, হবে না। তাহলে যে নারীর সাহায্য-সহযোগিতা, স্নেহ, আদর ব্যতিরেকে মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, সেই নারী জাতির মর্যাদা পুরুষের চেয়ে কম কোন অংশে?

সন্তান জন্মদান, লালন-পালন থেকে শুরু করে তার শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম, আদব-কায়দা শিক্ষাদান এসব দায়িত্বই তো মাকে পালন করতে হয়, এখানে পিতার ভূমিকা তো নেহায়েতই গৌণ। এছাড়া স্নেহ-মমতার দিক দিয়েও মায়ের সমতুল্য অন্য কেউ হতে পারে না। যদিও বর্তমান আধুনিক প্রগতির প্রবক্তাদের স্ত্রী নামের মানস কন্যারা, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশীর ভূমিকায় অভিনয় করে সন্তানদের মাতৃবিমুখ করে তুলছে। কিন্তু তাতে তো তাদের প্রাপ্য অস্বীকার করা যাবে না। বরং সেই ভূমিকা যারা পালন করছে, তারা সমাজের কাছে হচ্ছে হেয় প্রতিপন্ন, আল্লাহর কাছে হচ্ছে গুনাহগার, যার পরিণাম মৃত্যুর পরে জাহান্নাম।

আরও পড়তে পারেন-

রাসূলুল্লাহ (সা.)কে কেউ জিজ্ঞাসা করল, কে আমার কাছ থেকে অধিক সম্মান পাওয়ার অধিকারী? তিনি তিনবার বললেন মায়ের কথা। আর একবার বললেন পিতার কথা। আর এই বলা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ছিল যথার্থ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলার মূলে নারীর যে অবদান তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরুষের জীবনের সাথে নারী অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্যকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রূপে নারী পুরুষের পাশে থেকে বন্ধুর কাজ করে যাচ্ছে।

[ চার ]

সুপ্রিয় পাঠক, উপরে যেটুকু আলোচনা করা হল, তাতে মোটামুটিভাবে প্রমাণিত হয়েছে, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সব রকম শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের উৎস মূলে রয়েছে নারীর অবদান; যা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আমি আগেই বলেছি, ইসলাম পূর্ব সমাজে নারীকে মানুষ বলেই গণ্য করা হত না। ইসলামই সর্বপ্রথম নারীর অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ঘোষণা দেয়, নর-নারী উভয়ই আল্লাহর সৃষ্টি, তাই অধিকারও উভয়ের সমান। তবে যেহেতু আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষকে ভিন্ন আকৃতি ও গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাই তাদের কর্মস্থল ও কর্মসূচি পৃথক করে দিয়েছেন। পুরুষকে বলেছেন, তোমরা বাইরের জগতে বিচরণ করে রুজি রোজগারের তালাশ কর, আর নারীকে বলেছেন, তোমরা আন্দরে থেকে তোমাদের স্বামীদের গচ্ছিত আমানতের হিফাযত কর। তোমাদের গন্ডির মধ্যে পুরুষের নেই কোন অধিকার। তোমরা তোমাদের স্বামীদের সেবা করবে যেটুকু করা দরকার। আর পরিবারের অন্যান্য অধঃস্তন সন্তান-সন্ততি তোমাদের বাধ্যগত থেকে তোমাদের সেবা করবে আজীবন। কোন সন্তান যদি তার মায়ের সেবা না করে মাকে কষ্ট দেয়, সে কষ্ট কথায় হোক আর যে কোনভাবেই হোক, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করেছেন।

প্রতিটি মানুষই কোন না কোন মায়ের সন্তান। এখন বুদ্ধি, জ্ঞান ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ চিন্তা করুন, নারী অবহেলার বস্তু, না উচ্চ মর্যাদার অধিকারী? তবে এই মর্যাদা বা অধিকারের স্বীকৃতি একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে নারীকে দেওয়া হয়নি। আর যেহেতু ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মমত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেহেতু তাদের নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথার কোন কারণ নেই।

ইসলাম পিতা, মাতা, ভাই ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বামীর নিকট থেকে মোহরানার দাবীদার বানিয়েছে এবং তা পরিশোধ করা স্বামীর উপর ফরয করে দিয়েছে। অথচ অন্য কোন ধর্মে এর কোনটাই নির্ধারণ করা হয়নি। নারী পুরুষের দাসী নয়, সে যুগে যুগে পুরুষের মা, বোন ও স্ত্রী রূপে আখ্যায়িত হয়ে আসছে।

একদিন এক চরিত্রহীন যুবক প্রিয়নবী (সা.)এর কাছে গিয়ে যিনা করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মা, তোমার বোন বা তোমার ফুফুর সাথে যদি কোন যুবক যিনায় লিপ্ত হয়, তাহলে তোমার কাছে সে দৃশ্য কেমন লাগবে।” এ প্রশ্ন শুনে যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, কখনো তা হতে পারে না, এরূপ হলে আমি তাকে খুন করব। এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃদু হেসে বললেন, “তাহলে তুমি যার সাথে যিনা করবে, সেও তো কারো না কারো মা, বোন, ফুফু অথবা স্ত্রী হবে?” রাসূলুল্লাহ (সা.)এর মুখে একথা শুনে সে যুবক লজ্জিত হয়ে যিনার সংকল্প পরিত্যাগ করে তাওবা করে।

উপরোক্ত ঘটনার শিক্ষা হল, নিজের মন মানসিকতা দিয়ে অন্যের মন মানসিকতা বিচার করা উচিত। হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে- “তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর তা অন্যের জন্যও পছন্দ না করা পর্যন্ত তুমি মু’মিন হতে পারবে না।” আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশ’ বছর আগে এই নীতি প্রতিপালনের মাধ্যমেই ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং সারা বিশ্বে সর্বপ্রকার কুসংস্কার দূরীভূত হয়ে শান্তির অমিয় ধারা বয়ে গিয়েছিল। আর তা সম্ভব হয়েছিল ইসলামে সাম্যবাদ নীতি প্রচলনের মাধ্যমে। যে সমাজে নারীর কোন নিরাপত্তাই ছিল না সেই অন্ধকার কুয়াশাচ্ছন্ন সমাজে ইসলামী হুকুমত কায়েমের পরপরই একজন নারী তিন দিন তিন রাতের রাস্তা সঙ্গী-সাথী ছাড়া একাই চলাফেরা করতে সক্ষম হয়েছিল।

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার প্রশ্ন হল, যারা অন্যের মা, বোন, বা স্ত্রীর শ্লীলতাহানী করছে তারাও তো কোন না কোন মায়ের সন্তান, বোনের ভাই বা স্ত্রীর স্বামী। তাহলে তাদের সামনে যদি কেউ তাদের মা, বোন বা স্ত্রীকে ধর্ষণ করে, শ্লীলতাহানী ঘটায়, তাহলে সেই দৃশ্য কি তাদের কাছে উপভোগ্য আনন্দদায়ক হবে? যদি আনন্দদায়ক হয়, তাহলে তো বলতেই হয় তারা মানুষের সংজ্ঞায় পড়ে না। আর যদি উপরোক্ত দৃশ্য সেই ধর্ষণকারী ব্যক্তিদের কাছে উপভোগ্য না হয়, তাহলে তারা কি অন্যের মা, বোন বা স্ত্রীকে ধর্ষণ করে প্রকারান্তরে নিজেদের মা বোনকেই ধর্ষণ করল না? (নাঊযুবিল্লাহ)।

নারীর ভূবনে নারীর স্বাধীনতা এবং তার প্রাপ্য অধিকার ইসলামের সূচনা লগ্নেই কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই নতুন করে তাদের দেওয়ার মত আর কিছু অবশিষ্ট নেই। নারী স্বাধীনতার নামে বর্তমানে যে ধুঁয়া তোলা হচ্ছে, তা চরম ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব, ইসলাম প্রিয় দ্বীনদার মুসলমান সাবধান!

[ পাঁচ ]

যাই হোক, আমার কথা ছিল সমাজে নারীর ভূমিকা কি এবং তাদের অবস্থান কোথায়, আর সমাজ তাকে কোথায় স্থান দিয়েছে?

এখানে দেখা যাচ্ছে পর্যায়ক্রমে নারী সর্বাবস্থায় বিভিন্ন রূপে পুরুষের সাথে থেকে শক্তি, সাহস ও স্নেহ, প্রেম-ভালবাসা দিয়ে পুরুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া নারী পুরুষ উভয়ে, উভয়কে মানসিক যে প্রশান্তি দান করে থাকে, তা কোন কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় নয়।

আজ বাংলাদেশের সামাজিক চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। বিশেষ করে নারী জাতিকে নিয়ে আজ যে টনাহেঁচড়া শুরু হয়েছে, তাতে নারী স্বাধীনতা, নারীমুক্তি ও নারীর সমঅধিকারের নামে চলছে নারীর অমূল্য সম্পদ লুণ্ঠনের অশুভ প্রক্রিয়া ও প্রতিযোগিতা।

এ নিবন্ধ শেষ করার পূর্বে যারা নারীমুক্তি, নারীর সমঅধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে মাঠে নেমেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমার দু’টি প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন হল, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করলে বাইরে নয়, আল্লাহ তাআলার বেঁধে দেয়া গন্ডির মধ্যে থেকে নারী দুনিয়ার জীবনে যে ভূমিকা পালন করে থাকে অথবা আল্লাহর তরফ থেকে যে ভূমিকা পালনের নির্দেশ অবতীর্ণ হয়েছে তা কি পুরুষের তুলনায় কিছু কম, না অনেক ক্ষেত্রে বেশী? ইসলাম নারীকে যে স্বাধীনতা ও মর্যাদা দান করেছে, অন্য কোন ধর্মে এরূপ স্বাধীনতা বা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে কি? অথবা এর চেয়ে বেশী স্বাধীনতা বা মর্যাদা আর কীভাবে দেয়া যেতে পারে?

আমার মনে হয় এই নিবন্ধের আলোচনার প্রেক্ষাপটে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ইসলাম নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও মর্যাদা দান করেছে। তবে স্বার্থান্বেষী মহল আল্লাহর বিধানকে যথাযথভাবে প্রয়োগ না করায় কিছু কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তা না হলে, আল্লাহর বিধান মতে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। তবে সে নারীকে অবশ্যই আদর্শ নারী হতে হবে। আর আদর্শ নারী বলতে সেসব নারীকে বুঝাবে, যারা ধর্মীয় গন্ডির বাইরে তাগুতের অনুসারী নয়। আমার যুক্তি যদি ধোপে টেকে তাহলে সমাজের অর্ধেক মেধা নারী জাতিকে যারা মেধাহীন বানিয়ে মাঠে ময়দানে নাচিয়ে ইহকালের সুখ ও পরকালের শান্তি বিনষ্ট করে কুকুর শিয়ালের ন্যায় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, তাদের হাত থেকে নারী জাতিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব কাদের? আল্লাহ তাআলা কিন্তু নারী জাতির হিফাযতের দায়িত্ব পুরুষ জাতির উপর ন্যস্ত করেছেন। আর এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে জবাবদিহি পুরুষকেই করতে হবে।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, সমাজ ও রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার, যাদের ইঙ্গিতে গোটা দেশটাই সচল হয় এবং অচল হয়, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা দানের দায়িত্ব কি তাদের নেই? তারাও কি কোন মায়ের সন্তান নয়, নয় কি কোন বোনের ভাই অথবা স্ত্রীর স্বামী? যে নারী পুরুষদের প্রশান্তি আনয়ন এবং পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠনে এত অবদান রেখে যাচ্ছেন, তাদেরকে যদি নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়, এ দায় পুরুষ জাতি কখনো এড়াতে পারবে না।

– সাদিয়া আহমদ (আনিকা), শিক্ষার্থী- তৃতীয় বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।