Home ইসলাম দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাযিঃ), যার মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছিল

দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাযিঃ), যার মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছিল

উমর(রাযিঃ) ছিলেন ইসলামের ২য় খলিফা। তিনি ৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম।

আরব্য জাহিলি যুগে লেখাপড়ার খুব একটা প্রচলন ছিল না। এরপরও উমর(রাযিঃ) বাল্যকালেই লিখতে ও পড়তে শেখেন। কুরাইশের ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি কৈশোরেই যুদ্ধবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে অনেক শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগীর হিসেবে তার খ্যাতি ছিল।

ইসলাম গ্রহণের পর সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল-ফারুক বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী উপাধি দেওয়া হয়। আমিরুল মু’মিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে। সাহাবীদের মধ্যে মর্যাদার ক্ষেত্রে আবু বকর(রাযিঃ)-এর পরেই উমর(রাযিঃ)-এর অবস্থান।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উমর(রাযিঃ)

অন্যান্য মক্কাবাসীর মত উমর(রাযিঃ) প্রথম পর্যায়ে ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিলেন। উমর(রাযিঃ) এর ইসলাম গ্রহণ এক চিত্তাকর্ষক ঘটনা। তাঁর গোত্রের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর চাচাত ভাই যায়িদের পুত্র সাঈদ ইসলাম গ্রহণ করেন। সাঈদ আবার উমর(রাযিঃ)-এর বোন ফাতিমাকে বিয়ে করেন। স্বামীর সাথে ফাতিমাও ইসলাম গ্রহণ করেন।

উমর(রাযিঃ)-এর বংশের আরো এক বিশিষ্ট ব্যক্তি নাঈম ইবন আব্দুল্লাহও ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্ত তখনও পর্যন্ত উমর(রাযিঃ) ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না। সর্বপ্রথম যখন ইসলামের কথা শুনলেন, তখন ক্রোধে জ্বলতে থাকলেন। তাঁর বংশে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের তিনি পরম শত্রু হয়ে দাঁড়ালেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসলামের মুল প্রচারক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।

মুহাম্মদ(সাঃ)-কে হত্যার পরিকল্পনা

তরবারী কাঁধে ঝুলিয়ে উমর(রাযিঃ) চললেন। পথিমধ্যে বনী যুহরার এক ব্যক্তির সাথে তাঁর দেখা। সে জিজ্ঞেস করল, কোন দিকে উমর? তিনি বললেন, মুহাম্মদের একটা ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। লোকটি বলল, মুহাম্মদকে কিছু করে বনু হাশিম ও বনু যুহরার হাত থেকে কিভাবে বাঁচবে? এ কথা শুনে উমর বলে উঠলেন, মনে হচ্ছে তুমিও বাপদাদার ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়ে গেছ। লোকটি বলল, আমার কথা বাদ দাও, তোমার নিজের বোন আর ভগ্নীপতিই তো তোমার ধর্ম ত্যাগ করেছে। (প্রকৃতপক্ষে লোকটির উদ্দেশ্য ছিল উমরের লক্ষ্য পরিবর্তন দেওয়া।) এ কথা শুনে উমর রাগে উম্মত্ত হয়ে ছুটলেন তাঁর বোন আর ভগ্নীপতির বাড়ীর দিকে।

এসময় তারা দু’জন খাব্বাব ইবনুল আরাত(রাযিঃ)-এর কাছে কুরআন শিখছিলেন। উমরের আভাস পেয়ে খাব্বাব তখন বাড়ীর আরেকটি কক্ষে আত্মগোপন করলেন। উমর তাঁর বোন ও ভগ্নীপতীকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এখানে কিসের আওয়াজ শুনছিলাম? মূলত তারা সূরা ত্বাহা পাঠ করছিলেন। তাঁরা উত্তর দিলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলাম। উমর তখন বললেন, তোমরা সম্ভবত নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়ে গেছো।

তখন ভগ্নীপতি বললেন, তোমার ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মে যদি সত্য থাকে তুমি কি করবে উমর? একথা শোনার পর উমর তার ভগ্নীপতির উপর ঝাপিয়ে পরলেন এবং দুই পা দিয়ে তাঁকে ভীষণ ভাবে মারতে লাগলেন। বোন তাঁর স্বামীকে বাচাতে এগিয়ে এলে উমর তার মুখেও এমন জোরে আঘাত করলেন যে, তাঁর মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেল। তাঁর বোন এসময় রাগে উত্তজিত হয়ে বলে উঠলেন, সত্য যদি তোমার ধর্মের বাইরে থাকে, তাহলে আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।

ইসলামের প্রতি উমর(রাযিঃ)-র আগ্রহ সৃষ্টি

বোনকে রক্তাক্ত দেখে এবং বোন ও ভগ্নিপতির অবিচলতায় তাঁর মনে কিছুটা রেখাপাত করল। এর কিছুদিন আগ থেকেই উমরের মধ্যে একটা ভাবান্তর সৃষ্টি হচ্ছিল। কুরাইশরা মক্কায় মুসলমাদের ওপর নির্মম অত্যাচার-উৎপীড়ন চালানোর পরও একজনকেও ইসলাম থেকে ফেরাতে পারেনি। মুসলমানরা নীরবে সবকিছু মাথা পেতে নিয়েছে। প্রয়োজনে বাড়ী-ঘর ছেড়েছে তবুও ইসলাম ত্যাগ করেনি।

এ সকল ঘটনার দরূণ মুহূর্তের মধ্যে তাঁর হৃদয়ে সত্য জ্যোতি উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। তিনি পাক-সাফ হয়ে বোনের হাত থেকে সূরা ত্বহার অংশটুকু নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। পড়া শেষে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আমাকে মুহাম্মাদের কাছে নিয়ে চল। উমর(রাযিঃ)-এর একথা শুনে খাব্বাব(রাযিঃ) ঘরের গুপ্ত স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন।

উমর ও আমর দু’জনের জন্য রাসূলের দু’আ

এসে বললেন, “সুসংবাদ নাও উমর! বৃহস্পতিবার রাতে তোমার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন, হে আল্লাহ, উমর ইবনুল খাত্তাব বা আমর ইবন হিশাম (আবু জেহেল) এর দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আমি আশা করছি তোমার জন্য এ দু’আ কবুল হয়েছে।

উমর(রাযিঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ

এ সময় খাব্বার(রাযিঃ) উমর(রাযিঃ)-কে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থানস্থল পাহাড়ের পাদদেশে দারুল আরকামে নিয়ে গেলেন। সেখানে উমরকে দেখে সবাই একটু ঘাবড়ে গেলেও রাসূলের আদেশে তাঁকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হল। আর তিনি সবাইকে হতবাক করে ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের খুশিতে নবীজী স্বয়ং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর ধ্বনি দিলেন। এতে সকলেই বুঝে গেল যে উমর(রাযিঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছেন। উমর(রাযিঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর জিব্রাঈল(আঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, উমরের ইসলাম গ্রহণে আসমানের অধিবাসীরা পর্যন্ত উৎফুল্ল হয়েছে।

উমর(রাযিঃ)-এর ইসলাম গ্রহণে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। যদিও তখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ বা ৫০জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে হযরত হামজা(রাযিঃ)-ও ছিলেন। তথাপি মুসলমানদের জন্য কাবাঘরে গিয়ে প্রকাশ্যে সালাত আদায় করা তো দুরের কথা নিজেদেরকে মুসলমান বলাটাও তাঁদের জন্য নিরাপদ ছিল না। উমর(রাযিঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হলো। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন এবং অন্য সকলকে সাথে নিয়ে কাবাঘরে প্রকাশ্যে সালাত আদায় করা শুরু করলেন।

এভাবে উমর(রাযিঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী হল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।