Home ইসলাম রাসূল (সাঃ)-এর চিঠি পেয়ে তৎকালীন বাদশাহদের প্রতিক্রিয়া

রাসূল (সাঃ)-এর চিঠি পেয়ে তৎকালীন বাদশাহদের প্রতিক্রিয়া

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াতির কাজ করার ক্ষেত্রে মৌখিক দাওয়াতি যেমন দিয়েছেন তেমনি চিঠি আকারে লিখিত দাওয়াতও দিয়েছেন প্রচুর। হাদিসের কিতাসমূহে এরকম বহু চিঠির আলোচনা এসেছে।

তৎকালীন অনেক বড় বড় রাজা বাদশার দরবারে তিনি চিঠির মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পাঠিয়েছেন। দূতগণ যেখানে যেখানে প্রেরিত হতেন, তারা সেই জনগোষ্ঠীর ভাষায় কথা বলতেন।

হাদিস ও ইতিহাসের কিতাব থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চিঠি প্রেরণের প্রসিদ্ধ কয়েকটি ঘটনা নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।

আরও পড়তে পারেন-

এদের মধ্যে অনেকে ইসলাম কবুল করে নেয়, অনেকে পত্রকে সম্মান করে, আর অনেকে পত্রের অসম্মান করে। পত্রের সাথে যে যেভাবে আচরণ করে পরবর্তীতে তার-ও সেরূপ পরিণতি হয়।

১। হিরাক্লিয়াসের নিকট রাসূল (সাঃ)-এর চিঠি

হিরাক্লিয়াস ছিলেন বাইজাইন্টাইন সম্রাজ্যের শাসনকর্তা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দাহিয়া কালবী(রাযিঃ) কে দিয়ে হিরাক্লিয়াসের কাছে পত্র পাঠান। পত্রের ভাষা ছিল এরূপ-

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান হিরাক্লিয়াসের নিকট। হিদায়েতের অনুসরণকারীদের প্রতি সালাম। অতঃপর আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান করছি। ইসলাম গ্রহণ করে সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকুন, আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবেন। (ঈসা(আঃ) ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনার কারণে), যদি আপনি এতে সম্মত হন তাহলে আপনার প্রজাদের পাপের জন্য আপনি দায়ী থাকবেন, কেননা সাধারণ জনগণ তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করে।

হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে এসো, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান। সেটি হল আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত করি না। আর তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করি না এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ করি না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।”

পত্র পাওয়ার পর হিরাক্লিয়াস এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আরবের কোনো লোককে দরবারে আনার জন্য বললেন। ঘটানাক্রমে এ সময় ইসলামের প্রধান শত্রু আবু সুফিয়ানকে পাওয়া গেল। তাকে সম্রাটের দরবারে ডেকে আনা হল এবং কিছু প্রশ্ন করা হলো।

সম্রাট আবু সুফিয়ানের নিকট থেকে সকল বিষয় অবগত হয়ে বললেন, হে আবু সুফিয়ান তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তাহলে তিনি যে সত্যই আল্লাহর নবী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস আমার পায়ের নিচের মাটি শীঘ্রই তাঁর করতলগত হবে।

একজন রাসূল আগমন করবেন এ সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম। কিন্তু তিনি যে আরবে অবির্ভূত হবেন, এ কথা আমি জানতাম না। আমার যদি সুযোগ হত তাহলে নিশ্চয়ই আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হতাম এবং তাঁর পবিত্র পদযুগল ধৌত করে নিজেকে ধন্য করতাম।

২। পারস্য সম্রাটের নিকট রাসূল (সাঃ)-এর চিঠি

অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্য সম্রাটের নিকট ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত পত্র পেরণ করতে চাইলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে হুযাইফা(রাযিঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর নিকট ইসলামের দাওয়াত পত্র প্রেরণ করলেন এবং হুযাইফাকে বললেন, তুমি বাহরায়নের শাসনকর্তা মুনযিরের হাতে পত্রখানা দিয়ে তাকে কিসরার নিকট পৌঁছে দিতে বলবে। মুনযির তাই করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রেরিত পত্রটি ছিল নিম্নরূপ-

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে পারস্যের প্রধান কিসরার সমীপে। যারা আল্লাহর হিদায়েতের অনুসরণ করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর প্রতি ঈমান আনে এবং এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই এবং সমগ্র জগতের লোকদিগকে সতর্ক করার জন্য তিনি আমাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেনম, তার প্রতি সালাম। আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন, মুক্তি লাভ করবেন। অন্যথায় আপনার অগ্নি উপাসক প্রজাবৃন্দের পাপের জন্য আপনিই দায়ী থাকবেন।”

পারস্য সম্রাট পত্র পাঠ করে বলল, আমার নিকট এভাবে কে পত্র লিখেছে? শুরুতে আল্লাহর নাম, তারপর প্রেরকের নাম, তারপর সম্রাটের নাম। এ কতবড় অপমান! এ অপমান সহ্য করা যায় না। এ কথা বলে তিনি পত্রখানা ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেললেন। আর এর ফলস্বরূপ অল্পকয়েকদিনের ভিতর আল্লাহও তাঁর সাম্রাজ্য টুকরা টুকরা করে দেন।

৩। মুকাওয়াকিস এর নিকট পত্র প্রেরণ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মিসরের রাজা মুকাওয়াকিসের নিকট বিশিষ্ট সাহাবী হাতিব ইবনে আবি বালতাআ(রাযিঃ)-এর মাধ্যমে দাওয়াত সম্বলিত পত্র প্রেরণ করেন। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ-

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে মিসরের রাজা মুকাওয়াকিসের সমীপে। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান করছি।

ইসলাম গ্রহণ করে সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকুন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দান করবেন। আপনি যদি এতে অসম্মত হন তাহলে আপনার প্রজাদের পাপের জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।

হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আসো, যেটি আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান। সেটি হল, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করি না। আর তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করি না এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ করি না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।”

পত্র পাওয়ার পর মুকাওয়াকিস প্রকাশ্যভাবে ইসলাম গ্রহণ না করলেও তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত স্বীকার করে নেন এবং খুশি হয়ে মারিয়া ও সীরীন নামে দুজন কুমারী দাসীকে হাদীয়া হিসেবে প্রেরণ করেন। এছাড়া বাদশাহ উপঢৌকনস্বরূপ পাঁচটি কিবতি পোশাক ও এক হাজার দীনার প্রেরণ করেন।

৪। নাজ্জাশীর নিকট পত্র প্রেরণ

আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী জাফর ইবনে আবি তালিবের নিকট থেকে পূর্বেই ইসলামের দাওয়াত পান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াতকে মেনে নেন। ৬ষ্ঠ হিজরীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমর ইবনে উমাইয়া(রাযিঃ)-কে বাদশাহ নাজ্জাশীর দরবারে দূত হিসেবে পত্রের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত প্রেরণ করেন। পত্রের ভাষা ছিল নিম্নরূপ-

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে হাবশার সম্রাট নাজ্জাশীর সমীপে। তোমাকে সালাম। আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি যে, তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ঈসা ইবনে মরিয়াম আল্লাহর রূহ ও তাঁর বাণী; যা আল্লাহ মরিয়ামের গর্ভে নিক্ষেপ করেছিলেন। তারপর মরিয়াম ঈসাকে গর্ভে ধারণ করেন এবং তাকে রূহ দ্বারা সৃষ্টি করেন। যেভাবে আদম(আঃ)-কে স্বহস্তে সৃষ্টি করেছিলেন। আমি আপনাকে আল্লাহর দিকে আহবান করছি।

তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর আনুগত্য করুন এবং আমি যা কিছু নিয়ে এসেছি তার উপর ঈমান আনুন, আর তা অনুসরণ করুন। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল। আপনাকে এবং আপনার সৈন্যবাহিনীকে আল্লাহর দিকে ডাকছি। যে হিদায়েতের পথ অনুসরণ করবে তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

নাজ্জাশী পত্রখানা পড়ে প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন এবং আমর ইবনে উমাইয়ার নিকট চিঠির উত্তর দেন।

এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়ামামার বাদশাহ, বাহরায়নের সম্রাট এবং ওমানের সম্রাট এর নিকট দাওয়াত সম্বলিত পত্র প্রেরণ করেন। এসকল পত্রের ভাষা ছিল তাওহীদ-রিসালাত সম্বলিত এবং পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সত্যায়ন সম্পর্কীত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক এসকল পত্র প্রেরণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারিত হতে থাকে এবং ইসলামের আবির্ভাব যে অত্যাসন্ন তার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।