Home ইসলাম সূরা আরাফ-এর তাৎপর্য্য ও শিক্ষা গ্রহণ

সূরা আরাফ-এর তাৎপর্য্য ও শিক্ষা গ্রহণ

- ফাইল ছবি।

সূরা আরাফ কুরআনের ৭ম সূরা। এই সুরার একটি অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আল্লাহ তা’আলা এ সুরার চার স্থানে মানবজাতিকে ‘হে আদম সন্তান!’ বলে সম্বোধন করেছেন। এছাড়া সূরা আরাফ-এ আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনার ঐতিহাসিক দু’আ উল্লেখিত হয়েছে।

আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা

জান্নাত থেকে বিতারিত হওয়ার পর তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হলে তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন,

“হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ভুল ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।” (আল কুরআন-৭:২৩)

আরও পড়তে পারেন-
আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
সালাম-কালামের আদব-কায়দা
বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী

উত্তম পোশাকে সালাত আদায়

উত্তম পোশাক পরে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সূরা আরাফ-এ। কেননা সালাতে আদায়ের মুহুর্তে মুমিন বান্দা তাঁর রবের সাথে একান্তে ভাববিনিময়ে লিপ্ত হয়। সে কারণে আল্লাহ তা’আলা সালাত আদায়ের সময় উত্তম পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়ে বলেন,

“হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক সালাত আদায়ের সময় পরিপাটি পোশাক পরিধান করো, খাও এবং পান করো; কিন্তু অপব্যয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।” (আল কুরআন-৭:৩১)

জান্নাতি ও জাহান্নামিদের পারস্পরিক আলোচনা

আখিরাতের জীবনে জান্নাতের অধিবাসীরা কুরআন হাদিসের সব ঘোষণার সত্যতা পাবে। জাহান্নামিদের আযাব প্রত্যক্ষ করে তাদের সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতে আল্লাহর কাছে সকলে জান্নাতিরা প্রার্থনা করবে। সে ঘটনা ও দু’আ এভাবে উল্লেখিত হয়েছে,

“জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবে, দুনিয়াতে আমাদের রব আমাদের সাথে যেসকল ওয়াদা করেছিলেন, আমরা সেগুলি পরিপূর্ণরূপে সত্য পেয়েছি। তোমরাও কি তোমাদের রবের ওয়াদা সত্য পাওনি? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মধ্যখানে এসে ঘোষণা করবে, জালেমদের উপর আল্লাহর লানত” (আল কুরআন-৭:৪৪)

পারস্পরিক এই আলোচনার পর জাহান্নামিদের ভয়াবহ আযাব প্রত্যক্ষ করে জান্নাতিরা আল্লাহ তা’আলার দরবারে দু’আ করবে,

“হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এই জালেমদের (জাহান্নামীদের) সাথী বানাবেন না।” (আল কুরআন-৭:৪৭)

সূরা আরাফ-এ আল্লাহ্‌র বিভিন্ন অনুগ্রহের বর্ণনা

এরপর এ সুরায় আসমান-জমিন সৃষ্টি ও তার অবস্থানের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি আসমান ও জমীন সমূহকে সৃষ্টি করেছেন মাত্র ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশের উপর ইস্তিওয়া করেছেন (সমাসীন হয়েছেন)। তিনি রাতের উপর দিনকে এমনভাবে নিয়ে আসেন যে, দিন রাতের অনুগামী হয়। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র যেগুলির প্রত্যেকটি তাঁর আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, একমাত্র তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ প্রদান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজাহানের রব।” (আল কুরআন-৭:৫৪)

আল্লাহ মৃত জমিনের মাঝে বৃষ্টি বর্ষণ করে যেভাবে তা সজিব করে তুলে মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করেন, তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তিনিই বৃষ্টি বর্ষণের পূর্বে বৃষ্টির সুসংবাদবাহী বাতাসকে পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালাগুলিকে বহন করে নিয়ে আসে, তখন তিনিই এ মেঘমালাকে হাঁকিয়ে দেন কোনো মৃত জমিনের দিকে। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করেন। অতঃপর পানি দ্বারা যাবতীয় রকমের ফল-ফসল উৎপন্ন করেন। এমনিভাবে তিনি মৃতদেরকে বের করবেন যাতে তোমরা চিন্তা করো। যে জমিন উৎকৃষ্ট, তার ফল-ফসল তার রবের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফল-ফসল উৎপন্ন হয়। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের প্রতি।” (আল কুরআন-৭:৫৭-৫৮)

নবী-রাসূলদের দাওয়াতের বিশদ বর্ণনা

যুগে যুগে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত ও ইবাদতের যে দাবি নিয়ে নবী-রাসুলগণের আগমন ঘটেছিল তার উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে এ সুরায়। এ সূরায় আল্লাহ তা’আলা একাধারে হযরত নূহ(আঃ), হযরত হুদ(আঃ), হযরত সালেহ(আঃ), হযরত লূত(আঃ), হযরত শোয়ায়েব(আঃ) এবং সবিশেষে বৃহৎ পরিষরে হযরত মূসা(আঃ) ও ফেরআউনের ঘটনার বর্ণনা করেছেন। তাওহীদের দাওয়াত দিতে গিয়ে নবী-রাসূলগণ কি পন্থা অবলম্বন করেছেন এবং কিরূপ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে এ সূরার বর্ণনায়। সকল জামানার দা’ঈদের জন্য এ সকল বর্ণনা খুবই শিক্ষনীয়।

আল্লাহ সবচেয়ে উত্তম রক্ষাকারী ও গোনাহ মাফকারী

এরপর এ সূরার শেষে আল্লাহর বিশেষ গুণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যাতে আমরা তাঁর রহমতের নিকটই ফিরে আসি এবং তাঁর রহমতের সামনেই যেন আত্মসমর্পণ করি। আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনার দু’আ শিক্ষা দিয়ে উল্লেখিত হয়েছে,

“আপনিই যে আমাদের একমাত্র রক্ষক। সুতরাং, আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর করুনা করুন। নিশ্চয় আপনিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী।” (আল কুরআন-৭:১৫৫)

এই সূরার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবন গঠনের তৌফিক আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন। আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।