Home ইসলাম ইসলাম শান্তির ধর্ম: কেন ও কিভাবে?

ইসলাম শান্তির ধর্ম: কেন ও কিভাবে?

‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এ কথাটি অতি সত্য ও বাস্তব একটি কথা এবং প্রত্যেকটি মুসলিমেরই মনের কথা। তবে এ কথারটির মর্ম ও বিস্তৃতি আমাদের সঠিকভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ, কথা সঠিক হলেও তার মর্ম অনুধাবনে ভুল হতে পারে বা অসম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণের সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে।

ইসলাম শান্তির পথ দেখায়

পবিত্র কুরআনে ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “…তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও এক স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় তিনি এর মাধ্যমে তাদেরকে শান্তির পথসমূহে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন তাঁর নিজ ইচ্ছায়। আর তাদেরকে দেখান সরল পথ।” (৫:১৫-১৬)

এ আয়াতে ‘সালাম’ শব্দটি এসেছে। সাধারণত ‘সালাম’ শব্দের অর্থ করা হয় ‘শান্তি’। এ অর্থটিও ভুল নয়, তবে এর সূক্ষ্ম অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তি’। বিপদ ও অশান্তি থেকে মুক্তিই তো হল শান্তির বড় উপায়। ইসলাম মানুষকে অশান্তি ও বিপদ থেকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করে। তাই ইসলাম শান্তির ধর্ম।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলাম আখিরাতে নাজাতের পথ দেখায়

ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন মানুষকে নাজাতের পথ দেখায়। এ নাজাত প্রথমত, আখিরাতের মহা বিপদ থেকে। ইসলামী আকিদার বুনিয়াদী বিষয় হল আখিরাতের প্রতি ঈমান। এবং ইসলামী শিক্ষার গোটা ব্যবস্থাটিই হল তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ও আখিরাতের উপর ঈমানের উপর ভিত্তিশীল।

বিশ্ব মানবতার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল আখিরাত. ইসলামের আকীদা প্রসঙ্গ হোক বা ইবাদত, লেনদনের ক্ষেত্রে হোক বা সামাজিকতা, স্বভাব-চরিত্র হোক বা আচার-আচরণ, সৎকাজের আদেশ হোক বা অসৎকাজের নিষেধ এককথায় মানবজীবনের সকল বিষয়ে ইসলামের যে বিধান রয়েছে তা গ্রহণ ও অনুসরণের মূল প্রেরণা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের নাজাত।

সুতরাং ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এ কথাটির প্রধান ও প্রথম মর্মবাণী হল আখিরাতের নাজাত ও শান্তি। অর্থাৎ ইসলামই হল একমাত্র ঐ দ্বীন বা ধর্ম যা আখিরাতের নাজাত ও শান্তির পথ প্রদর্শন করে।

আল্লাহ বলেন, “কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন কবুল করতে চায়, তবে তার নিকট থেকে কখনও তা গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” (৩:৮৫)

ইসলাম পার্থিব শান্তি ও কল্যাণের পথ দেখায়

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে যে, ইসলাম কি শুধুমাত্র আখিরাতের মুক্তির পথই প্রদর্শন করে? পার্থিব শান্তির উপায় কি প্রদর্শন করে না? এর উত্তর হল- ইসলাম পার্থিব শান্তি ও কল্যাণের পথও নির্দেশ করে। আর এ হচ্ছে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটির বিস্তৃত মর্মের দ্বিতীয় অর্থ। শুরুতে সূরা মায়েদার যে আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে তাতে “মুক্তির পথসমূহ” শব্দবন্ধে পার্থিব মুক্তিও শামিল রয়েছে। এক্ষেত্রেও ইসলাম ঐ অদ্বিতীয় ধর্ম যাতে মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রের এবং মানবজাতির সকল শ্রেণির জন্য যথার্থ শান্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশ রয়েছে। এটি বোঝার জন্য ইসলামের এক একটি শিক্ষা ও বিধানের যথার্থতা নিয়ে নির্মোহ চিন্তা-ভাবনা করাই যথেষ্ট। তাহলে দেখা যাবে ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের পরিপূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও প্রশান্তির নিশ্চয়তা।

ইসলাম শান্তির জন্য শাস্তির বিধান আরোপ করে

শান্তির জন্য শুধু শিষ্টের লালনই যথেষ্ট নয়, বরং দুষ্টের দমনও অপরিহার্য। তাই শান্তির ধর্ম ইসলামে রয়েছে হদ, কিসাস, তাযীরের মত নানা বিধান। রয়েছে মন্দ কাজে বাধা প্রদান ও জিহাদের বিধান। এগুলো ইসলামের স্বতন্ত্র ও বিস্তৃত অধ্যায়।

রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীলদের দায়িত্ব এসব বিধানের জ্ঞান যথাযথভাবে অর্জন করে সেগুলো রাষ্ট্র ও সমাজে বাস্তবায়ন করা। এই অধ্যায়ের নীতি ও বিধানের সঠিক উপলব্ধি ও যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমেই সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

সুতরাং ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’- এই বিশ্বাস ও উচ্চারণের আরেকটি দাবি হল- ইসলামের মন্দ কাজে বাধা প্রদানের নীতি ও বিধানের যথার্থতা উপলব্ধি করা এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধানের চর্চা ও অনুশীলন করা।

এক কথায় ইসলাম বাস্তব অর্থে শান্তির ধর্ম। কেউ যদি অন্য কোনো কিছুকে শান্তি মনে করে ইসলামকে ঐ অর্থে শান্তির ধর্ম মনে করে তবে তা ভুল। অন্যায়-অনাচার, অশ্লীলতা, জুলুম-অবিচার, হিংস্রতা ইত্যাদিকে কেউ যদি ‘শান্তি’ মনে করে, তাহলে ইসলাম ঐ অর্থে শান্তির ধর্ম নয়। কারণ এগুলো কখনই ‘শান্তি’ নয়; বরং নির্বিচারে ইচ্ছা পূরণ করা মাত্র, যা দুনিয়া আখিরাতের চূড়ান্ত অশান্তির কারণ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।