Home ফিকহ ও মাসায়েল রোযার ফযীলত ও উপকারিতা

রোযার ফযীলত ও উপকারিতা

- আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান। ছবি- উম্মাহ।

।। আল্লামা নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

রোযা মানুষের দেহ ও আত্মার নানাবিধ উপকার সাধন করে। রোযা দ্বারা মানুষের আত্মার পবিত্রতা ও চিন্তা-শক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আবহমানকাল হতেই মুনি-ঋষিগণকে উপবাস করতে এবং সুফী সাধকদেরকে রোযা রাখতে দেখা যায়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানেও এর বিশেষ উপকারিতা স্বীকৃত হয়েছে। ডা. সলোমন তার স্বাস্থ্যবিধিতে মানবদেহকে ইঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ইঞ্জিন রক্ষাকল্পে মাঝে মাঝে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে চুল্লি হতে ছাই ও আঙ্গার সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন করা যেমনটা আবশ্যক, উপবাস দ্বারা মাঝে মাঝে ‘পাকস্থলী’ হতে অজীর্ণ খাদ্য নিষ্কাশন করাও তেমনটা দরকার।

রোযার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর কয়েকটি নিচে পেশ করা হলো-

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমযানের রোযা রাখে, তার পূর্বের (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ করা হয়। (সহীহ বুখারী, বাবুন, সাওমু রমযানা ইহতিসাবান মিনাল ঈমান)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন- মানব সন্তানের প্রতিটি আমল তার জন্যে, রোযা ব্যতীত। কেননা রোযা আমারই জন্যে এবং আমিই তার প্রতিফল দান করবো (যত ইচ্ছা তত)। রোযা হচ্ছে মানুষের জন্যে (দোযখের আগুন হতে রক্ষার) ঢাল স্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোযার দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে, আমি একজন রোযাদার। কসম সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মেশকের খুশবু থেকেও অধিক সুগন্ধময়। রোযাদারের জন্যে দু’টি আনন্দ রয়েছে। একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি বেহেশতে আপন পরওয়ারদিগারের সাক্ষাৎ লাভের সময়। (সহীহ বুখারী, বাবু হাল ইয়াকূলু ইন্নী সাঈমুন; সহীহ মুসলিম, বাবু ফযলিস সাওম)।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাহ.) থেকে বর্ণিত, হযরত সালমান ফারসী (রাযি.) বলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীগণকে সম্বোধন করে শা’বান মাসের শেষ দিন ভাষণ দিলেন যে, হে লোক সকল! মহা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ একটি মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করছে। এ মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে, যা বরকত ও ফযীলত, মাহাত্ম্য ও মর্যাদা হিসেবে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ মাসে দিনের বেলায় রোযা রাখাকে আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন এবং রাতের বেলায় দাঁড়ানোকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় একটি সুন্নাত বা নফল আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে অন্যান্য সময়ের ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের সত্তরটি ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব পাবে। এ মাস সবর, ধৈর্য ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাস। আল্লাহ তাআলা সবরের প্রতিদানে জান্নাত দান করবেন। রমযান মাস পরস্পর হৃদ্যতা ও সৌজন্য প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মু’মিনের রিযিক প্রশস্ত করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাআলা তার সকল পাপ মাফ করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দান করবেন। আর তাকে রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দিবেন। কিন্তু রোযাদারের সাওয়াব থেকে সামান্য পরিমাণও হ্রাস করা হবে না।

হযরত সালমান ফারসী (রাযি.) বলেন, আমরা আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মাঝে অনেকেই দরিদ্র, রোযাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তারা এ সাওয়াব কীভাবে অর্জন করবেন? রাসূলুল্লাহ(সা.) বললেন, যে ব্যক্তি রোযাদারকে একটা খেজুর, সামান্য দুধ কিংবা এক চুমুক সাদা পানি দ্বারাও ইফতার করাবে, তাকেও আল্লাহ তাআলা এ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে তৃপ্তিসহ ইফতার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার ‘হাউজে কাওসার’ হতে এমন পানীয় পান করাবেন, ফলে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সে আর পিপাসার্থ হবেন না। রমযান এমন একটি মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মার্জনা এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের জন্যে। যে ব্যক্তি রমযান মাসে নিজের অধীনস্ত লোকদের শ্রম-মেহনত হাল্কা করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ এর রেওয়ায়াতে এও রয়েছে যে, (রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন) চার কাজ রমযান মাসে বেশি বেশি করো। দু’টি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যে এবং দু’টি যা না করে তোমাদের উপায় নেই। আর তা হল-

ক. কালিমায়ে তাইয়্যিবা বেশি বেশি পাঠ করা। খ. ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে পড়া। গ. আল্লাহ তাআলার কাছে জান্নাতের দোয়া করা। ঘ. জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্যে প্রার্থনা করা। (আসসহীহ লি আবী বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযায়মা আন নিশাপুরী, মৃত্যু- ৩১১ হি., পৃষ্ঠা নং- ৩/১৯১, আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, বৈরুত, লেবানন)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পবিত্র রমযান উপলক্ষে আমার উম্মতকে পাঁচটি বস্তু (বিশেষভাবে) দেয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী উম্মতকে দেয়া হয়নি। যথা- ক. রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মৃগনাভী হতেও বেশি পছন্দনীয়। খ. সমুদ্রের মাছও রোযাদার ব্যক্তির জন্যে ইফতার পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। গ. প্রতিদিন রোযাদারের জন্যে জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয় এবং আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দাগণ দুনিয়ার কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্ত হয়ে অচিরেই তোমাদের কাছে আসবে। ঘ. রমযানে মারদুদ শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, যার কারণে সে ওই সব পাপকাজ করাতে সক্ষম হয় না, যা অন্য সময় করাতে পারে। ঙ. রমযান মাসের শেষরাতে রোযাদারগণের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। সাহাবাগণ আরজ করেন, এ ক্ষমা কি শবে-ক্বদরে হয়ে থাকে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, না; বরং নিয়ম হলো, শ্রমিকের কাজ শেষ হলে সে প্রতিদান পায়। (মুসনাদে আহমদ; বায়হাকী)।

যাদের ওপর রোযা ফরয

কোনো ব্যক্তির ওপর রোযা ফরয হওয়ার জন্যে নিচের শর্তগুলি থাকা প্রয়োজন। ক. মুসলমান হওয়া। খ. আক্বেল (বোধসম্পন্ন) হওয়া। গ. বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হওয়া। ঘ. সুস্থ হওয়া। ঙ. মুকীম হওয়া। চ. নারী হলে হায়েয ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। (ফাতাওয়া আলমগীরী- ১/২৫৭)।

– আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী, ফাযেলে- দারুল উলূম দেওবন্দ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া-উত্তরা, ঢাকা ও রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা-উত্তরা, ঢাকা, খতীব- মসজিদে নূর, উত্তরা এবং উপদেষ্টা – উম্মাহ ২৪ ডট কম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।