Home ইসলাম কলবকে প্রশান্ত করার কয়েকটি সহজ যিকির

কলবকে প্রশান্ত করার কয়েকটি সহজ যিকির

কলব (অন্তর) অর্থ দিক পরিবর্তন করা, স্থান ত্যাগ করা, উল্টানো, ফেরানো ইত্যাদি। মানুষের অন্তর খুব দ্রুত পরিবর্তন হয় বলে একে ‘কলব’ নামকরণ করা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি তার অন্তরকে যেদিকে পরিচালিত করে, তা সেদিকে পরিচালিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কলব বা অন্তর হলো পালকের মতো, যাকে সামান্য বাতাস দূরে নিয়ে যায়।”

কলবকে প্রশান্ত করার উপায় সহজ যিকির 

অন্তর বা কলবকে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর পরিচ্ছন্ন অন্তরই সদা-সর্বদা প্রশান্ত থাকে। কলবকে প্রশান্ত করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল- আল্লাহর যিকির; তথা আল্লাহ তা’আলাকে সর্বদা স্মরণ করা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, “যারা ঈমান আনয়ন করে তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণের দ্বারাই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (আল কুরআন-১৩: ২৮)

আরও পড়তে পারেন-

কলবকে প্রশান্ত করার জন্য কার্যকরী কয়েকটি সহজ যিকির নিম্নে উল্লেখিত হলঃ

১) সকাল-সন্ধ্যায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যিকির করা

সকাল-সন্ধ্যায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যিকির করার অনেক ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করবে, তার আমলনামার পাল্লা সাত আসমান ও সাত জমিনের চেয়েও অধিক ভারি হবে। তার জন্য জান্নাত হবে অবধারিত।

হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যদি সাত আসমান ও সাত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়; তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লায় অধিক ভারি হবে। যদি সাত আসমান ও সাত জমিন একটি অবিচ্ছদ্য গোলাকার বৃত্ত পরিণত হয়, তাহলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ এর যিকির এই সবকিছুকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে ফেলবে। ইহা প্রতিটি সৃষ্টিকুলের দু’আ এবং এর মাধ্যমেই সৃষ্টিকুল রিযিক পেয়ে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি)

এছাড়া অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টির মধ্য থেকে আপনার উম্মতের এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যারা একদিন হলেও ইখলাসের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্য দিয়েছে এবং এর উপর মৃত্যুবরণ করেছে।” (মুসনাদে আহমাদ)

২) সব সময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা

সুখ, দুঃখ, আনন্দ কিংবা বিপদ; যে কোনো সংবাদই আসুক না কেন সব সময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ তথা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য এ কথা বলা। আর এতে বান্দার আমলনামার পাল্লা সাত আসমান ও সাত জমিন থেকেও অধিক ভারি হবে। আর তা হবে জান্নাত লাভের মাধ্যম।

হাদিসে এসেছে- জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং সর্বোত্তম দু’আ হল ‘আলহামদুলিল্লাহ’।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক বেদুইন এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে কোনো একটি ভালো কাজ শিখিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার হাত ধরে এ শব্দগুলো শিখিয়ে দিলেন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এরপর লোকটির হাত ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ শব্দগুলো বেশি বেশি পড়বে।” (বায়হাকি)

৩) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম’ যিকির করা

হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ সহীহ বুখারীর শেষ হাদিসে এ যিকির সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এ যিকিরের বর্ণনা হাদিসে পাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-

হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুটি কলেমা এমন রয়েছে, যেগুলো পরম দয়াময় আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়, উচ্চারণে খুবই সহজ আর (আমলের) পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। কালিমা দু’টি হচ্ছে- সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম।

অর্থঃ আমরা আল্লাহ তা’আলার প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতি পবিত্র।” (বুখারি)

৪) অন্যের জন্য কল্যাণের দু’আ করা

নিজের জন্য দু’আ করার পাশাপাশি প্রকৃত কল্যাণকামী মুসলমান তার অপর মুমিন মুসলমান ভাই-বোনদের জন্য এভাবে দু’আ করে- ‘আল্লাহুম্মাগফির লিল মু’মিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত’

অর্থঃ হে আল্লাহ! সকল মুমিন ও মুসমমান নারী ও পুরুষকে আপনি মাফ করে দেন।

কুরআনুল কারিমেও আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকেও মুমিন মুসলমানের জন্য দু’আ করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন- “(হে রাসুল! আপনি) ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার নিজের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য।” (আল কুরআন-৪৭: ১৯)

এভাবে অপরের জন্য কল্যানকামী ব্যক্তির জন্যও আল্লাহ তা’আলাও কল্যাণের ফয়সালা করেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।