Home ইসলাম অতিথিদের আপ্যায়নে জেরুজালেমে সাত শ বছরের ঐতিহ্য

অতিথিদের আপ্যায়নে জেরুজালেমে সাত শ বছরের ঐতিহ্য

অতিথিদের সম্মানে হেবরন শহরের ঐতিহ্য: একাধিক নবী-রাসুল ও তিন ধর্মের স্মৃতিবিজড়িত শহর ফিলিস্তিনের আল খলিল বা হেবরন শহর। অনাহারীদের মধ্যে অন্নদানের প্রাচীন ঐতিহ্য এ নগরকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। এ শহরের একটি দাতব্য সংগঠন থেকে সাত শতাব্দিকাল যাবত অভুক্তদের খাবার দেওয়া হয়। বিশেষত রমজান মাসের ঐতিহাসিক তাকিয়া আল ইবরাহিমিয়ার প্রদত্ত খাবারে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। কথিত আছে, হেবরন শহর ক্ষুধা সম্পর্কে কিছুই জানে না।

সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাপনা: যে কেউ ইবরাহিমি তাকিয়ায় আসলে খাবার খেতে পারে। যেকোনো ধর্ম বা বর্ণের যে কেউ এখানে খেতে পারে। বিশেষত রমজান মাসে আগত অতিথিরা খাবার বাড়িতে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে খাওয়ার সুযোগ পান। তাছাড়া ধনী ও দরিদ্র সবাই এখানে এক কাতারে এসে বসে। কারো মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।

সাত শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য: ১২৭৯ সালে সুলতান সালাহুদ্দিনের শাসনামলে ইবরাহিমি মসজিদের পাশ্ববর্তী স্থানে সুলতান কালুন সালেহি অভুক্তদের জন্য তাকিয়া ইবরাহিমিয়া প্রতিষ্ঠান করেন। প্রতিষ্ঠার সময় স্থানীয়দের কাছে তা ‘তাবলানিয়া’ নামে পরিচিতি পায়। কারণ তাকিয়ার কর্মচারীরা ঢোল পিটিয়ে সকাল-বিকাল খাবার শুরু হওয়ার খবর জানাত।

kalerkantho
ইবরাহিমি তাকিয়ার প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী খাবার সংগ্রহে অতিথিদের ভিড়। 

খাবার ব্যবস্থাপনায় সুলতান সালাহুদ্দিন আইউবির বরাদ্দ: ইবরাহিম (আ.)-এর রীতি অনুসরণে আগন্তুক ও অপরিচিত অতিথিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ও অতিথিপরায়নতার ঐতিহ্য চালু থাকলেও সালাহুদ্দিন আইউবির সময়ে এ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী হয়। সুলতান সালাহুদ্দিন ইবরাহিমি মসজিদ ও ইবরাহিমি তাকিয়ার খাবার ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল সম্পদ ওয়াকফ করেন। মূলত ওয়াকফকৃত সম্পত্তির অর্থ থেকেই অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন আনুমানিক ১৪ বা ১৫ হাজার রুটি তৈরি করা হয়। 

আরও পড়তে পারেন-

বিশ্ববিখ্যাত পর্যটকরা হেবরন শহর ভ্রমণকালে ইবরাহিমি তাকিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্যের বর্ণনাও দিয়েছেন। ক্রুসেডযুদ্ধের আগে পার্সিয়ান পর্যটক নাসির খসরু ঐতিহাসিক নগরী ভ্রমণ করে ‘ইবারাহিমি তাকিয়া’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এছাড়া ৭৪৫ হিজরিতে ইবনুল ফজল আল আমারি এবং ৭২৫ হিজরিতে ইবনে বতুতা হেবরন শহর ভ্রমণ করেন। 

ইবরাহিম (আ.)-এর অতিথেয়তার রীতি অনুসরণ: স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তাকিয়ার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। কারণ আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) আবু আজ জাইফান তথা অতিথিপরায়ন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অতিথি ছাড়া তিনি খাবার খেতেন না। তাছাড়া আগন্তুক ও পর্যটকদের জন্যও তিনি খাবার বিতরণ করতেন। মূলত ওই স্থানেই সাত শ বছর যাবত খাবার বিতরণের ঐতিহ্য চলে আসছে। 

kalerkantho
ইবরাহিমি তাকিয়া থেকে ঐতিহ্যবাহী খাবার সংগ্রহ করে শিশুদের আনন্দ উৎসব। 

১৯৬৪ সালে ইবরাহিমি মসজিদ সংস্কার প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময় ‘ইবরাহিমি তাকিয়ার প্রাচীন স্থান ভেঙ্গে ফেলা হয়। ১৯৮৩ সালে জেরুজালেমের ইসলামী ওয়াকফ বিভাগ ইবরাহিমি মসজিদের উত্তর দিকে নতুনকরে স্থায়ী ভবন করে। অতিথিদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

রমজান ছাড়াও পুরো বছর খাবারের ব্যবস্থা: ইবরাহিমি তাকিয়ার পরিচালক লুওয়া আল খতিব বলে, ‘রমজান মাস ছাড়াও বছরের প্রতিদিন তিন বার খাবার দেওয়া হয়। এখানে রাতযাপনে ২০টি কক্ষ, ১৫ হাজার ঘোড়ার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অশ্বালয় ও সুবিশাল চুল্লি আছে। 

খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ইবরাহিমি তাকিয়ার প্রধান পাচক আতিয়া আল জাবরিনি বলেন, পবিত্র রমজানে আমরা ফজর নামাজের পর থেকেই কাজ শুরু করি। কারণ বিপুল পরিমাণ খাবার আমাদেরকে প্রস্তুত করতে হয়। তাছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা খাবার বিতরণ করি। 

করোনাকালেও খাবার সরবরাহ অব্যাহত: তিনি আরো বলেন, ‘হেবর শহর ও বিভিন্ন শহরের বিত্তবানদের অনুদান দিয়ে আমরা রমজানের প্রতিদিন নানা পদের খাবার প্রস্তুত করি। করোনা মহামারির কারণে সংকটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার প্রস্তুত করি। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার বা ১২ শ কেজির মুরগি রান্না করা হয়। এতে প্রায় ছয় শ থেকে সাড়ে সাত শ কেজি ওজনের মাংস রান্না করা যায়। 

সূত্র: আল জাজিরা ও উইকিপিডিয়া।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।