Home ইসলাম ভূমিকম্প আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা

ভূমিকম্প আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা

।। মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ।।

পৃথিবীতে যখন ব্যাপক হারে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অন্যায়-অবিচার ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে তখন এ জাতি ভূমিকম্পের মুখোমুখি হবে। সুতরাং ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যে এক সতর্কবার্তা, এতে কোন সন্দেহ নেই। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে। (তিরমিযী, হাদিস- ২২১২)।

ভূমিকম্পের বিভীষিকা কত মারাত্মক হবে কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তা তুলে ধরে ইরশাদ করেছেন- ‘হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে একটা মারাত্মক ব্যাপার। যে দিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যদায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা হজ, আয়াত- ১-২)।

পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে বলা হয়েছে, জলে-স্থলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তা মানুষেরই কৃতকর্মের ফল। আল্লাহপাক মানুষের অবাধ্যতার অনেক কিছুই মাফ করে দেন। তারপরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বেকার অবাধ্য জাতিসমূহকে আল্লাহ পাক গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। সে সবের অধিকাংশ গজবই ছিল ভূমিকম্প। ভূমিকম্প এমনই একটা দুর্যোগ, যা নিবারণ করার মতো কোন প্রযুক্তি মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। এর পূর্বাভাস পাওয়ার মতো কোন প্রযুক্তিও মানুষ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি।

হাদীস শরীফে একাধিকবার বলা হয়েছে, মানুষের দুষ্কর্মের জন্যই ভূমিকম্পের মতো মহাদুর্যোগ নেমে আসে। কুরআন এবং হাদীসে আদ, সামুদ, ক্বওমে লুত এবং আইকার অধিবাসীদের ভূমিকম্পের দ্বারা ধ্বংস করার কাহিনী বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণনা করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত সালেহ ও শোয়াইব (আ.)এর সম্প্রদায় তাদের নবীদের অবাধ্য ছিল। ভূমিকম্পের আজাব দিয়ে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিল। তা ছাড়া এটি কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত।কিয়ামত যতই নিকটবর্তী হবে ভূমিকম্পের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে, খুন-খারাবি বৃদ্ধি পাবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে তা উপচে পড়বে। (বুখারি, হাদিস- ১০৩৬)।

আরেক বর্ণনায় এসেছে, ইবনু হাওয়ালা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বলেন, হে ইবনে হাওয়ালা, যখন তুমি দেখবে যে বাইতুল মাকদিসে (সিরিয়ার) ভূমিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহা দুর্ঘটনা ও পেরেশানি সন্নিকটে। কিয়ামত তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যত কাছে আছে। (আবু দাউদ, হাদিস- ২৫৩৫)।

হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে (অর্থাৎ- যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), যাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে, কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে, মসজিদে উচ্চঃস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দিবে, এমন সময় আসবে, যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, তখন একটি ভূমিকম্প সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে (ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে)। (তিরমিযী, হাদীস নং- ১৪৪৭)।

যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয়, অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দু’আ করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণ দেখলে বলতেন, যদি তুমি এরকম কিছু দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” (সহীহ বুখারী- ২/৩০ এবং সহীহ মুসলিম- ২/৬২৮)।

ভূমিকম্প, বজ্রপাত, প্লাবন, ঘূর্ণিঝড়, প্রস্তরসহ বায়ু, জীবাণুযুক্ত বায়ু, মহামারি রোগ, দুর্ভিক্ষসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে চাইলে প্রথমতঃ সকল প্রকার গোনাহের কাজ থেকে সকল মানুষকে বিরত থাকতে হবে। গণীমতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা যাবে না, আমানতের খিয়ানত করা যাবে না, যাকাত আদায়কে আল্লাহর হুকুম মনে করতে হবে, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া যাবে না, মাসজিদকে ইবাদতের স্থান বানাতে হবে, মদ্যপান ও ব্যভিচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সৎ কাজের আদেশ করতে হবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে। আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃত গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং ফিরে আসতে হবে আল্লাহর পথে। তবেই হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে ভূমিকম্পসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবেন।

লেখক: শায়খুল হাদিস- তিলপাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, খিলগাঁও, ঢাকা ও মিফতাহুল উলূম মাদ্রাসা, বাড্ডা, ঢাকা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- সানমুন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, নয়াপল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।