Home ইসলাম ফিলিস্তিন বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন যে অটোমান সুলতান

ফিলিস্তিন বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন যে অটোমান সুলতান

মুসলমানদের ধর্মীয় তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ । -ফাইল ছবি।

ব্রিটিশরা ইহুদিদের ফিলিস্তিনে বসবাসের অনুমোদন দেওয়ার বহু আগে আধুনিক ইহুদি রাজনীতি ও ইসরায়েলের জনক থিওডোর হের্জল জেরুজালেমের ক্রয়ের চেষ্টা শুরু করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নির্দেশে ফিলিস্তিনের উপনিবেশ স্থাপনে শতাব্দির বিতর্কিত বেলফর চুক্তি ঘোষণার বহু আগে ইহুদিবাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জল একটি ইহুদি দেশের জন্য অটোমান সম্রাজ্যের সুলতানের কাছে আবেদন করেছিলেন।

ফিলিস্তিনি ও এর জনগনের সঙ্গে ইস্তাম্বুলের সাব্লাইম বন্দরযোগে অটোমান ভূমির সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তাছাড়া উসমানি খেলাফত মক্কা ও মদিনার পাশাপাশি ইসলামের তৃতীয় পবিত্রত স্থান জেরুজালেম শহরসহ মুসলিম বিশ্বের বেশির অংশ নিয়ন্ত্রণ করত। 

১৮৯৬ সালে ইহুদি নেতা হার্জল একটি ভূমি চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুল আসেন। তাঁর ধারণা ছিল, অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ এ প্রস্তাবনা ফেলতে পারবেন না। কারণ তখন উসমানি সম্রাজ্যের ওপর বিশাল ঋণের বোঝা। বর্তমান হিসেবে যার মূল্য দাঁড়ায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার।

kalerkantho
মসজিদুল আকসার প্রহরায় এক অটোমান সৈনিক।

বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝার মাধ্যমে অটোমান প্রশানসনকে নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। ব্রিটিশ, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি ও ডাচ তথা ইউরোপীয় পরাশক্তি দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে  অটোমান সরকারি ঋণ প্রশানস নাম দিয়ে আলাদা বিভাগ করা হয়। ফলে অটোমান সম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদি শক্তির অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। 

আরও পড়তে পারেন-

ইতিহাসের বর্ণনা মতে, বিখ্যাত ইহুদি নেতা থিওডোর হের্জল (Herzl Tivadar) উসমানি সুলতানের কাছে ফিলিস্তেনে ইহুদিদের বসবাসের জন্য একটি চুক্তিপত্র অনুমোদনের প্রস্তাব করেছেন। এর বিনিময়ে সুলতানকে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২.২ মিলিয়ন ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। 

বিপুল পরিমাণ এ অর্থ নেওয়া হলে অটোমান সম্রাজ্যের বিশাল ঋণের ২০ ভাগ বোঝা কমিয়ে দিতে পারত। তাছাড়া একথা জানা যায়, হের্জল জানিছিলেন ইহুদিদের সহায়তা করা ছাড়া তুর্কি অর্থনীতি মোটেও আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। 

হার্জলের পক্ষ থেকে তৎকালীন অটোমান সুলতানের সঙ্গে আলাপকারী ফিলিপ ডি নিউলিনস্কি ও আর্মিনিয়াস ভ্যামবেরি সন্দেহ করেন যে, জেরুজালেম নগরী ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হলেও তা সহজেই বিক্রি করা হবে। এতেই উসমানি সম্রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি যেমনই হোক না কেন। 

তাঁদের বিবেচনা সত্য হয়নি। ১৮৯৬ সালে জেরুজালেম বিক্রয়ের এ প্রস্তাবনা উসমানি সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি উত্তরে বলেন, ‌‌‌‘হার্জল যদি তোমার বন্ধু হয় তাঁকে এই বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ না নিতে বলে দেবে। আমি তা বিক্রি করতে পারব না। এমনকি এক মুষ্ঠি পরিমাণও নয়। কারণ তা আমার নয়, আমার জনগনের। আমার জনগণ নিজেদের রক্ত দিয়ে লড়াই করে এই সাম্রাজ্য জয় করেছে। তাদের রক্ত এর মাটিতে মিশে আছে। আমাদের থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার অনুমোদনের আগে আমরা পুনরায় নিজেদের রক্ত দিয়ে তা সিক্ত করব।’ 

উসমানি সুলতানের কথাটি এক প্রকার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে অনেক সময় হাজার বছরের পুরোনো সংঘাত বলে চিহ্নিত করা হলেও ১৯ শতাব্দিতে এ বিবাদ দৃশ্যমান হয়। ইউরোপ থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিন ভূমিতে স্থানান্তর করার ভাবনা থেকে জায়োনিজম বা ইহুদিবাদ ধারণাটি তৈরি হয়। যা ইউরোপীয়দের কাছে ‘ইহুদি সমস্যা’ বলে অভিহিত। 

অনেক অ-ইহুদী এমনকি ইহুদি বিদ্বেষী এন্টি সেমাইট ইউরোপীয়দের মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি  স্থানান্তরের ধারণাকে সমর্থন করেছিল। এ পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে গিয়ে ফিলিস্তিনের স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয় ও নিজ ভূমি ত্যাগে বাধ্য করা হয়। সব ইহুদি নয়, বরং হার্জলের মতো কিছু ইহুদি নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তাটি ক্রয় করে। মূলত উপনিবেশ প্রকল্প থেকে ইহুদিবাদ ভাবনা তৈরি হয়।

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।