Home শীর্ষ সংবাদ দূর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাক্বওয়াবান নেতৃত্ব জরুরী: আল্লামা নূর...

দূর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাক্বওয়াবান নেতৃত্ব জরুরী: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

ছাত্র জমিয়তের তারবিয়াতী সভায় বক্তব্য রাখছেন জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, রাস্তায় গাড়ির লাইসেন্স চেক করে স্কুলের কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, শুধু গাড়ির লাইসেন্স নয়, যারা দেশ চালায় তাদেরও বৈধ কোন লাইসেন্স নেই। দূর্নীতিতে সারা দেশ ছেয়ে গেছে। যে দিকেই তাকাবেন, সবখানেই দূর্নীতি। অন্যায় ও অবিচারের করাল গ্রাসে গোটা সমাজটাই অস্থির হয়ে পড়েছে। দুঃশাসন আজ আমাদের দেশ ও সমাজকে এতটা গলা চেপে ধরেছে যে, সুশাসন, ইনসাফ ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ও দেশ গড়ার কথা বলাটাও আজ সহ্য করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, একদিকে গণতান্ত্রিক শাসনে দেশ পরিচালনার দাবী করা হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার ও সরকারী দলের যৌক্তিক সমালোচনা করলেও সেটাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অপরাধ বিবেচনা করা হচ্ছে। মানুষ যে ভাল নেই, এই কথা বলারও আজ অধিকার নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলে সেটাকেও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বিবেচনায় নিয়ে টুঁটি চেপে ধরছে। রাষ্ট্রের উপর স্বৈরাচারিতা কতটা ভয়ানকভাবে চেপে বসলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, ভাবাই যায় না।

তিনি বলে, এভাবে একটা দেশ, একটা সমাজ চলতে পারে না। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশের জনগণ ইনসাফপূর্ণ একটি সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণ করতে ফরিয়াদ করছে। জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছটফট করছে। কিন্তু রাজনীতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি এতটা ঝেঁকে বসেছে যে, মানুষ কোথাও আস্থা খুঁজে পাচ্ছে না।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, জনগণকে আস্থায় নিতে হলে এবং দূর্নীতি মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাক্বওয়াবান নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরী। সুতরাং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ইনসাফ কায়েম করতে হলে, দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে শত্রুর হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে আগামীর নেতৃত্বের হাল ধরতে ছাত্র জমিয়ত কর্মীদেরকে আদর্শ, ত্বাকওয়াবান হয়ে মেধা ও দক্ষতার সাথে আগামীর সৎ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা ক্যম্পাস শাখার উদ্যোগে দিনব্যাপী তরবিয়াতী (প্রশিক্ষণ) ইজতেমায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা ক্যম্পাস শাখার সভাপতি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তারবিয়তী ইজতেমায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি ও অন্যতম নীতি নির্ধারক শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

বিশেষ আলোচক হিসাবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা পেশ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, ঢাকা মহানগর জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান চাটগামী, ছাত্র জমিয়তের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জমিয়তের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নাছির উদ্দিন খান।

প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা সাইফুর রহমান।

কম্প্যাস শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা বাদরুল হাসান মাশকুর, সহসভাপতি মাওলানা যাকারিয়া আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসরুর মোহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জোনায়েদ শফি এবং প্রশিক্ষণ সম্পাদক আতাউর রহমান মারুফ এর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত তারবিয়াতী ইজতেমায় বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, কেন্দ্রীয় জমিয়তের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা জিয়াউল হক কাসেমী, ছাত্র জমিয়তের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা শরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় জমিয়তের সদস্য মাওলানা গোলাম মাওলা, যুব জমিয়তের সহসভাপতি মাওলানা জাবের কাসেমী, যুগ্ম সম্পাদক মুফতি আল-আমীন কাসেমী, সহ সম্পাদক মাওলানা ইসহাক কামাল, প্রচার সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন নগরী, সাবেক ছাত্র নেতা জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা তরুণ শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, ছাত্র জমিয়তের সহ সভাপতি চৌধুরী নাছির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমাদুল হক উমামা, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবুল হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেজওয়ান মাজহারী, মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক শিব্বির আহমদ, দপ্তর সম্পাদক কাওছার আহমদ, কেন্দ্রীয় সদস্য রাকিবুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, বশির আহমদ, ছাত্র নেতা নূর হোসাইন সবুজ প্রমুখ।

তরবিয়য়াতী ইজতেমায় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, আকাবির, খলফ ও সলফের সিলসিলায় জমিয়তের সম্পর্ক সয়ং রাসূল (সা.)এর সাথে। সুতরাং সকল ছাত্রদেরকে ছাত্র জমিয়তের পতাকাতলে আবদ্ধ হয়ে দ্বীনের প্রতিটি শাখায় দূর্বার গতিতে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। পাঠ্যভুক্ত সিলেবাস ও নিয়মতান্ত্রিক অধ্যায়নের পাশাপাশি ইলমে-দ্বীনের প্রচার-প্রসার, দাওয়াত ও তাবলীগ, মানব সেবা, সমাজ সেবার পাশাপাশি দেশে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং দেশ রক্ষার সংগ্রামে আত্মত্যাগ ও দক্ষতার সাথে কাজ করার লক্ষ্যে দক্ষ রাজনৈতিক পাঠও শিখতে হবে।

তিনি বলেন, এর সবই দ্বীনের ভেতরে। কোন একটাকে বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যাবে না।

তরবিয়য়াতী ইজতেমা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে জুমা ও দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকেল ৫টায় শেষ হয়।