Home রাজনীতি ছাত্ররাই ইনসাফ, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিবে:...

ছাত্ররাই ইনসাফ, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিবে: মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী

তরবিয়াতী ইজতেমায় বক্তব্য রাখছেন মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

শতাব্দীর প্রাচীনতম ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন, আকাবির ও আসলাফের রেখে যাওয়া আমানত, সৎ রাজনীতি ও আকাবীরে দেওবন্দের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা ক্যাম্পাস শাখার উদ্যোগে এক তরবিয়াতী (প্রশিক্ষণ) ইজতেমায় গতকাল (১০ আগস্ট) শুক্রবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হয়।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার আল-কাসেম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত তরবিয়াতী ইজতেমায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি ও অন্যতম নীতি নির্ধারক শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। সভাপতিত্ব করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক এবং ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী।

তরবিয়াতী ইজতেমায় সভাপতির বক্তব্যে মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী ছাত্র জমিয়তের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি ও উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট মন্ডিত জীবন গঠন, যথাযথভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিকালীন সময়ে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশ, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, সেবামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরীক হওয়া, নিয়ম মেনে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়নের রূপরেখা বিষয়ে উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী ছাত্র জমিয়তের নেতা-কর্মীদেরকে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যোগ্য আলেম হয়ে গড়ে ওঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ছাত্ররাই সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে ইনসাফ, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিবে। পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত ও ঈমানহারা করার মিশনে নিয়োজিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকার মোকাবেলা করতে হবে আপনাদেরকে। বিশেষ করে এনজিও ও খ্রীস্টান মিশনারী কর্তৃক মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার সুগভীর চক্রান্তের জাল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে ছাত্র জমিয়তকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়া এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লুটপাট, দমন-পীড়ন ও অর্থপাচার বন্ধ করে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে আপনাদেরকে। এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার কাজে দুর্বল ইলম ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও আপনারা সুশৃঙ্খল ও আদব বজায় রেখে চলাফেরা ও কথাবর্তা বলবেন। পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করবেন। এমনভাবে জীবন গড়বেন, যেন আপনাদেরকে দেখে সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি এবং জমিয়তের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মনে রাখবেন, জমিয়ত ক্ষমতার জন্য বা পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতি করে না। জমিয়তের রাজনীতি হলো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে ও সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, জনদাবী আদায়ে আদর্শবান ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অনস্বীর্কায। অন্য কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষ ততটা সংগঠিত হতে পারে না যতটা হতে পারে ছাত্ররা। তারুণ্য নির্ভর তেজোদীপ্ত সংগঠিত ছাত্রদের দৃঢ় আন্দোলনের মুখে অনেক জালিম শাহীর পতন হয়েছে। নিকট অতীতে ৯০-এর দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়েছে ছাত্র রাজনীতির ফলেই। ছাত্ররা সমাজের সবচেয়ে বড় সচেতন গোষ্ঠী। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিপথগামী হতে শুরু করলে ছাত্ররাই প্রথমে ফুঁসে উঠে তার প্রতিবাদ জানায়। এজন্যই সুশৃংখল এবং সুসংগঠিত ছাত্র রাজনীতি যেকোনো দেশের সার্বিক ইতিবাচক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বর্তমানে দেশের সব সেক্টর দুর্নীতি, লুটপাট, আইন ও ইনসাফের শাসনের অভাব, সর্বত্র মানবতার হাহাকার এবং নগরিকদের মৌলিক অধিহার হরণের চিত্র তুলে ধরে মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই৷ তরুণ ছাত্রদেরকে আগামীর নেতা ও দেশ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন থেকেই ন্যয়-নীতি ও ইনসাফপূর্ণ দেশ ও সমাজ গঠনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

তরবিয়য়াতী ইজতেমা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে জুমা ও দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকেল ৫টায় আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। মুনাজাত পরিচালনা করেন জমিয়ত মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।