Home ফিকহ ও মাসায়েল মেহমান ও বন্ধুবান্ধবের হক

মেহমান ও বন্ধুবান্ধবের হক

।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।

ইসলামের মেহমানের হক হলো- (১) মেহমানের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা। হাস্যোজ্জ্বল মুখে অভ্যর্থনা জানানো। বিদায়ের সময় অন্তত বাড়ীর গেট পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো।

(২) মেহমানের আরাম আয়েশের জন্য তার অভ্যাস ও রুচি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(৩) তার যথোচিত সম্মান করা। নম্রতা ও বিনয়ের সাথে আচরণ করা। বরং স্বহস্তে তার খেদমত করা।

(৪) অন্ততঃ একদিন পর্যন্ত তার জন্য ভাল খানার ব্যবস্থা করা। কিন্তু এতটুকুই করতে হবে যদ্বারা বিপাকে পড়তে না হয় এবং মেহমানের কাছে লজ্জাও পেতে না হয়। আর অন্ততঃ তিনদিন তার মেহমানদারী করা। এ হল মেহমানের প্রাপ্য জরুরী হক্। এরপর থেকে যতদিন অবস্থান করবে সেটা হবে মেজবানের পক্ষ থেকে ইহ্সান বা দয়া। কিন্তু মেহমানের উচিৎ নয় তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ফেলা। বেশীদিন অবস্থান গ্রহণ করেও নয়, অহেতুক ফরমায়েশ করেও নয় এবং তার খাবার-দাবারের ব্যবস্থাপনা, পরিবেশন ও খেদমত ইত্যাদিতে দখল নিয়েও নয়।

বন্ধু-বান্ধবের হক

যার সাথে বিশেষভাবে বন্ধুত্ব রয়েছে পবিত্র কুরআনে তাকে আত্মীয়-স্বজনের অন্তর্ভুক্ত করে উল্লেখ করা হয়েছে। তার হক হলো-

(১) যার সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছুক প্রথমে তার আক্বীদা-বিশ্বাস, চাল-চলন, আচার-আচরণ, চরিত্র ভাল করে পরখ করে নেওয়া। সবদিক দিয়ে ভাল মনে করলে তার সাথে বন্ধুত্ব করা যেতে পারে। নতুবা কেটে পড়া উচিত। অসৎসঙ্গ পরিত্যাগ করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বাস্তবেও তার অশুভ পরিণতি অহরহ দেখতে পাই। একই মন-মানসকিতা, ধ্যান-ধারণা সম্পন্ন এমন সতীর্থ বা সহপাঠী পাওয়া গেলে বন্ধুত্ব করতে বাধা নেই। বরং পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় প্রশান্তি হল সৎবন্ধুত্ব।

(২) জান ও মালের ব্যাপারে তার সাথে কার্পণ্য না করা।

(৩) কোন কাজ মনের বিরুদ্ধে হয়ে গেলে তা এড়িয়ে যাওয়া। কোন সময় মনোমালিন্য দেখা দিলে তাড়াতাড়ি তা মীমাংসা করে নেওয়া। স্থায়ী না হতে দেওয়া। বন্ধুর দোষ ধরে দেওয়া শিষ্টতা বহির্ভত নয়। তাই বলে সর্বদা এর পিছনে লেগে থাকাও উচিত নয়।

(৪) বন্ধুর হীত কামনায় শিথীলতা প্রদর্শন না করা। সৎ পরামর্শ দানে কুণ্ঠাবোধ না করা। তার পরামর্শও নেক নিয়্যাতে শ্রবণ করতঃ বাস্তবায়নযোগ্য হলে বাস্তবায়ন বা কবুল করবে। স্মরণ রাখতে হবে, আমাদের দেশে যেমন পালক পুত্রের প্রথা চালু আছে এবং সর্ববিষয়ে পালক পুত্রকে সম্পূর্ণ নিজ সন্তানের মত মনে করা হয়; ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এর কোন ভিত্তি নেই। পালক পুত্রের প্রতিক্রিয়া বন্ধুত্বের প্রতিক্রিয়া থেকে বেশী নয়। তার সাথে যেহেতু ইচ্ছাকৃতভাবে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, সেহেতু তাকে বন্ধুর আওতায় আনা যেতে পারে। কিন্তু মীরাছ বা উত্তরাধিকারী হিসেবে তার সম্পদ সে পেতে পারে না। কেননা, মীরাছ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাধ্যতামলক বিষয়। স্বেচ্ছাধীন নয়। যাকে খুশী তাকেই মীরাছ দেওয়া যাবে না বা যাকে খুশী তাকে বঞ্চিত করা যাবে না।

এ থেকে বোঝা গেল যে, সম্পত্তি বঞ্চিতকরণের যে প্রথা কোথাও কোথাও দেখা যায়, অর্থাৎ কোন কোন সন্তানের প্রতি একথা বলা যে, তাকে মীরাছ না দেওয়া হোক। তা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে বাতিল। উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম যে, মীরাছ এটি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত বাধ্যতামূলক বিষয়, নিজের ইচ্ছাধীন নয়।

লেখক: মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।