Home ইসলাম রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষা যেভাবে ব্যর্থতাকে সফলতায় পর্যবসিত করেছে

রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষা যেভাবে ব্যর্থতাকে সফলতায় পর্যবসিত করেছে

একবিংশ শতাব্দীর এই ব্যস্তময় বিশ্বে আমরা প্রায়শই অনুধাবন করি যে, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এক্ষেত্রে আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, জীবন সামান্য কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র। তবে দুনিয়ার জীবনের এই ক্ষণিক মুহুর্তেও এমন কে নেই যে সফলতাকে কামনা করে না?

তবে সফলতার প্রকৃত অর্থ কি? আমাদের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি যখন তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায় তাকেই আমরা সফল হিসেবে জানি। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনের অভিষ্ট্য লক্ষ্য কি তা কি আমরা কখনও চিন্তা করে দেখেছি?

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মানবজীবনের সফলতার মানদণ্ড ঘোষণা করে বলেছেন,

“তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। (আল কুরআন-৬৭:২)

আরও পড়তে পারেন-

সফলকাম কে?

মানুষের জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি সৎ আমল করে সেই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সেই প্রকৃতপক্ষে সফলকাম।

সফলতার পরিচয় তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেই ব্যক্তি মূলত সফল, “যে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক হারামকৃত বিষয়াদি থেকে সর্বাধিক বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার জন্য সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকে।”

অথচ আমাদের কারো কাছে প্রচুর পরিমাণে সম্পদ অর্জনের নাম সফলতা। আবার অনেকের কাছে বিপুল সুনাম অর্জনের নামই সফলতা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সফলতা কি, তা আমরা ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই জেনে থাকি।

মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন একই সূত্রে গাথা। তাই এই গুলোর একটিও মুমিনের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না।

আল্লাহ ভীতি

আল্লাহ বলেন,

“অবশ্যই সেসকল মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ছাড়া, এতে তারা নিন্দিত হবে না। যারা এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজদের আমানত ও অঙ্গীকারের ব্যাপারে যত্নবান। আর যারা নিজদের নামাজের হিফাযত করে। তারাই জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে এবং সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে।” (আল কুরআন-২৩:১-১১)

আল্লাহর ভয় অর্জন করা হচ্ছে জীবনে সফলতা অর্জনের অপর একটি মানদণ্ড। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে তিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই সম্মানিত হন। সকলেই তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে।

সুতরাং, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যই হচ্ছে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চূড়ান্ত পথ। আল্লাহ বলেন,

“আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই মূলত সফলকাম।” (আল কুরআন-২৪:৫২)

কঠিন পথ

তবে এই সফলতা অর্জন করাটা সহজ বিষয় নয়। মানুষ যেন প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে না পারে সেজন্য শয়তান সর্বদা চেষ্টা করতে থাকে। মানুষের সামনে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে চিন্তিত করে, তাকে পেরেশানিতে ফেলে দেয়। তবে একজন মুমিন এমন অবস্থাতেও হতাশ না হয়ে আল্লাহর হুকুমের দিকেই ফিরে আসে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের বিষয়টি সত্যই খুব আশ্চর্যজনক। সে যখন কোনো নি’আমত প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, তখনকার অবস্থাটাও তাঁর জন্য কল্যাণজনক। অর্থাৎ, এতেও সে সওয়াব পায়। আর সে যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়,তখন সবর করে। এই অবস্থাটাও তাঁর জন্য কল্যাণজনক। অর্থাৎ, এতেও সে সওয়াব পায়। আর এই বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র মুমিনের জন্যই।” (বুখারি)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও নানামুখী বিপর্যয় নেমে এসেছে। কিন্তু তিনি কখনও এসব বিপর্যয়ের মুখে ভেঙ্গে পড়েননি। কখনও কোনো কাজে তিনি বা তাঁর সাহাবীরা সাময়িক ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও তিনি সেটিকে আবার সফলতায় পর্যবসিত করে দেখিয়েছেন।

প্রকৃত শিক্ষা

উহুদের যুদ্ধে সাময়িক পরাজয়, খন্দকের যুদ্ধে ইহুদিদের ধোকাবাজির কারণে সামান্য পেরেশানি ইত্যাদির মত আরও অনেক বিষয় মুসলমানদেরকে সফলতা থেকে দূরে সরাতে পারেনি। সফল হওয়ার জন্য যে সকল গুণের প্রয়োজন সেসকল গুণে পরিপূর্ণরূপে গুণান্বিত ছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম। সফলতার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করে প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে হলে তাই রাসূলের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

দুনিয়া অর্জনের সামান্য আকাঙ্ক্ষায় আমরা যেন আখিরাতের জীবনের জন্য নেক আমল অর্জন থেকে গাফেল না হই। চিরসুখের জান্নাত লাভে আমরা যখন সক্ষম হব তখনই বুঝে আসবে প্রকৃত সফলতা কি জিনিস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।