Home লাইফ স্টাইল আয়ুর্বেদ মিথ: খাবার কেমন হবে, কী হবে

আয়ুর্বেদ মিথ: খাবার কেমন হবে, কী হবে

খাবার যদি হজম না হয়, তাহলে মানবদেহে সেই খাবারের পুষ্টিগুণও কোনো কাজে আসে না।

সংস্কৃতিতে হজম নির্দেশক শব্দ হলো ‘পাচক’, যার আরেকটি অর্থ হতে পারে রাঁধুনি। এছাড়া হজমি শক্তিকেও বলা হয় ‘অগ্নি’, যার আরেক অর্থ আগুন। খাবার যেমন আগুনের আঁচে রান্না হয়, তেমনই হজমি শক্তির সাহায্যে সেটি হজম হয়। 

একবার হজম হয়ে যাওয়ার পর, পাকস্থলিতে সেই খাবার অবস্থান করে এক ধরনের শাঁসাল পদার্থ হিসেবে। এরপর শরীরস্থ উত্তাপে তা রূপান্তরিত হয় রক্ত, মাংস, চর্বি, অস্থিমজ্জা, এবং সর্বশেষ, বীর্যে। শেষোক্তটিই বিবেচিত হয় শরীরের অভ্যন্তরীণ সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান হিসেবে। তাই কোনো খাদ্যের বীর্য-উৎপাদনকারী গুণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (অবশ্য নারীদেহে এর সমতুল্য কিছু উৎপাদনের উল্লেখ নেই)। 

অন্যদিকে হজম না হওয়া খাবার, যাকে বলা হয় ‘আমা’, তা অনিবার্যভাবে রোগের জন্ম দেয়। এই আমা দূরীকরণে ভারতবর্ষে এক বিশেষ ধরনের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার অস্তিত্ব দেখা যায়, যা শুরুই হয় উপবাসের মাধ্যমে। কেননা উপবাসকেই ভাবা হয়ে থাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলোর একটি। 

শরীরের শক্তির উৎস হলো ‘অজা’, যেটি একই সঙ্গে ভালো হজমের কারণ ও ফলাফল। খাবারকে দুইটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যা সহজে হজম হয়, তা হলো হালকা খাবার, আর যা সহজে হজম হয় না, তা হলো ভারি খাবার। 

ছয় ধরনের মৌলিক স্বাদ (রস) রয়েছে : মিষ্টি, টক, নোনতা, তেতো, ঝাল ও কষাটে। ভারসাম্য রক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একজন ব্যক্তির খাদ্যতালিকায় এই ছয় ধরনের স্বাদের উপস্থিতিই আবশ্যক। 

বর্তমান সময়ের যেকোনো ভারতীয় খাবারে এসব স্বাদের অন্তত কয়েকটি বিদ্যমান থাকে। কিন্তু কষাটে স্বাদটির প্রায় বিলুপ্তিই ঘটেছে বলা চলে। কেবল আসামে ‘ক্ষার’ বলে পরিচিত খাদ্যে এ স্বাদ পাওয়া যায়। 

স্বাদের গুরুত্ব অপরিসীম, কেননা এটিই ব্যক্তিবিশেষের খাদ্যের রুচিকে নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সাহায্য করে, এবং নানাভাবে প্রভাবিত করে তার দশাকেও (‘দশা’ একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ ত্রুটি বা সমস্যা)। যেমন : তেতো খাবার পিত্ত ও কফ কমায়, কিন্তু বাত বৃদ্ধি করে; মিষ্টি খাবার কফ বৃদ্ধি করে, কিন্তু পিত্ত ও বাত কমায়। 

আয়ুর্বেদিক বইগুলোতে ছয় ধরনের স্বাদ, দশজোড়া গুণ এবং আরো নানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে খাদ্যের স্বাস্থ্যগত বৈশিষ্ট্যকে বিবৃত করতে কয়েক ডজন বিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে। 

আরেক ধরনের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে গাছপালা, প্রাণি ও মানুষের প্রাকৃতিক বাসস্থানের উপর ভিত্তি করে। প্রথম বর্গটি হলো ‘জঙ্গল’, এমন এক শুষ্ক অঞ্চল যেখানে পানি কম, গাছপালা কম, এবং বাতাস ও সূর্যকিরণ প্রচুর। এই অঞ্চলের মধ্যে পড়ে ইন্দু-গঙ্গা অববাহিকা; স্তেপ; পাঞ্জাব, রাজাস্থান ও গুজরাটের আধা-মরুভূমি ও মরুভূমি; এবং উত্তর প্রদেশ হতে তামিল নাড়ু পর্যন্ত চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি। এর বিপরীত বর্গের নাম ‘অনূপ’, সিক্ত ও বনভূমি আচ্ছাদিত অঞ্চল, যেমন জলাভূমি, রেইন ফরেস্ট, ম্যানগ্রোভ জলাবন ও পাহাড়। এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হলো ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের মনসুন ফরেস্ট এবং বাংলাদেশ, আসাম ও কেরালার রেইন ফরেস্ট। 

আরও পড়তে পারেন-

বলা হয়ে থাকে, জঙ্গল অঞ্চলে নাকি রোগবালাই কম হয়। সেখানকার মানুষের শরীর থাকে শুষ্ক ও শক্তপোক্ত। কিন্তু অনূপ অঞ্চলগুলো দশায় পরিপূর্ণ, এবং সেখানকার বাসিন্দাদের শরীর কোমল ও স্পর্শকাতর।  

মাংস দিয়ে তৈরি খাবার হজম করা কঠিন, তারপরও এর ফলে রুচি ও বুদ্ধিবৃত্তির উন্নতি ঘটে, শরীরে সতেজ টিস্যু তৈরি হয়, এবং বীর্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

একটি পাতলা মাংসের ঝোল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে হাঁপানি, কাশি ও যক্ষ্মা; দুর্বল স্মৃতিশক্তি, রুচিহীনতা ও জ্বর থেকে ওঠার ফলে সৃষ্ট দুর্বলতা; এন্ডোকার্ডাইটিস প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায়। 

মাংস খাওয়ার পরামর্শ দানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। যেমন: প্রাণির বাসস্থান, স্বভাব, প্রাণিদেহের কোন অংশের মাংস খেতে হবে, রান্নার প্রণালি কেমন হবে, কতটুকু খেতে হবে। শেষোক্ত বিষয়টি নির্ভর করে রোগীর হজম শক্তির উপর।

– ১২ ও ১৩ শতকের সুশ্রুতের দৃষ্টিতে, সংহিতার অংশবিশেষ ।

চরক সাবধান করে দিয়েছেন যে খুব বেশি শুকনো ভাত, শুকনো মাংস, শুকনো শাকসবজি, পদ্মের শেকড়, জায়ফল প্রভৃতি খাওয়া যাবে না, কেননা সেগুলো অত্যন্ত ভারি খাবার। তবে পান্তা ভাত, লবণ, হরিতকী, বার্লি, বৃষ্টির পানি, দুধ, ঘি, বনে বসবাসকারী প্রাণির মাংস, মধু, ছোলা ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া যাবে।

ভাত জাতীয় খাবারও রোগীর পথ্য হিসেবে খুবই গুণসম্পন্ন। বিশুদ্ধ মাখন, মাংস, টক ফল কিংবা যেকোনো ধরনের ডাল দিয়ে রান্না করা ভাত নতুন টিস্যু তৈরি ও শরীরের বলবৃদ্ধিতে সহায়ক। ভাজা ভাত বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পিপাসা ও ত্বকের জ্বালাপোড়া উপশম করে। নতুন ভানা ধানের চাল থেকে রান্না করা ভাত টিস্যু তৈরি করে। এদিকে পুরনো চালের ভাত ভাঙা হাড় পুনর্গঠনে সাহায্য করে। নতুন চালের চেয়ে পুরনো চালের ভাত হজম করাই বেশি সহজ। তবে কাঁচা চাল হজম করা সবচেয়ে শক্ত। 

আয়ুর্বেদিক নিয়ম মেনে ভাত রান্না করার সবচেয়ে প্রচলিত প্রণালিগুলোর একটি হলো : এটিকে সিদ্ধ করতে করতে জাউ বানিয়ে ফেলা। দুর্বল ব্যক্তি কিংবা যারা শুদ্ধাচার রীতি পালন করছে, তাদের জন্য ভাতের জাউ খুবই উপকারী। কাঞ্জিকা হলো এক ধরনের জাউ, যেটিকে সারারাত সিদ্ধ করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি সামান্য ফেনিয়ে ওঠে। এরপর ওই জাউকে গরম বা ঠান্ডা অবস্থায় পান করা হয়।  

মণ্ডা (বর্তমানে এক ধরনের মিষ্টান্নের নাম) হলো আরেক ধরনের খাবার, যেটি তৈরি হতো লম্বা মরিচ ও আদা বাটা দিয়ে ভাতকে ভাজি করে, তারপর সেটিকে পানিতে সিদ্ধ করে। যবাগু হলো জাউয়ের মতো আরেকটি খাবার, যেটি যব, মাংস, ফল ও সবজি দিয়ে রান্না করা হয়। এই খাবারটি খুবই কর্কশ, ফলে হজম করতে কষ্ট হয়। কিন্তু এটি শক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। এছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হলো পায়েস, যেটি সিদ্ধ ভাত, দুধ ও চিনি দিয়ে রান্না করা হয়। 

প্রাচীন আয়ুর্বেদিক বইগুলোতে বলা হয়েছে, মুগ ডালের নাকি প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। আঙ্গুর ও ডালিমের রস সহযোগে এটি রান্না করা হলে তা বিভিন্ন দশা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া চিচিঙ্গা বা নিম দিয়ে রান্না করলে চর্মরোগ; এবং সজনে দিয়ে সিদ্ধ করলে এটি কাশি, শ্লেষ্মা, জ্বর ও গলার নানাবিধ রোগ দূর করে। ছোলার ডাল অ্যাজমা, শ্লেষ্মা, এবং মূত্রাশয় ও উদরের নানা রোগ দূর করে। ডালিম বা আমলার রস দিয়ে রান্না করা ডাল মেজাজ ঠান্ডা করে এবং মৃগীরোগ ও স্থূলতা রোধ করে। সিদ্ধ ডালের সঙ্গে আর যেসব উপকরণ যোগ করা যেতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে দুধের তৈরি খাবার, ভাতের জাউ, জিরা, কালো গোল মরিচ এবং বিভিন্ন ফল। খোসা না ছাড়ানো মসুর ডাল দিয়ে তৈরি একটি স্যুপ খুবই হালকা ও স্বাস্থ্যকর। 

শাকসবজি মাঝেমধ্যে চিকিৎসার সময় পরিহার করা উচিত, কেননা সেগুলো সংকোচক হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বিভিন্ন নালীকে বন্ধ করে দিতে পারে। সুশ্রুত (আরেক প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসক) শাকসবজির ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলেননি। শুধু এটুকুই বলেছেন যে সবুজ পাতাযুক্ত শাক ভালোভাবে পরিষ্কার ও সিদ্ধ করে, তেল দিয়ে রান্না করলে সেটি খুব স্বাস্থ্যকর হয়; কিন্তু অন্য কোনোভাবে শাক রান্না করলে তা স্বাস্থ্যকর নয়।

আয়ুর্বেদে ঘিকে একটি সর্বরোগনিরামক খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাটির পাত্রে বা কাঠকয়লার উনুনে ঘিয়ে ভাজা মিষ্টি হয় খুবই হালকা। এতে গায়ের রঙ উন্নত হয়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু খুব বেশি করে ভাজা মিষ্টি খুবই ভারি, কটুস্বাদের, এবং তাতে ত্বকের ক্ষতি হয়। ‘সুশ্রুত সংহিতা’-য় ঘিয়ে ভাজা মিষ্টির লম্বা তালিকা প্রণীত হয়েছে, যদিও সেগুলো তৈরির পদ্ধতি খুব একটা বিবৃত হয়নি।

সুশ্রুতের দৃষ্টিতে, সর্বোৎকৃষ্ট বলবর্ধক হলো পানির সঙ্গে মিছরি, অপরিশোধিত চিনি ও টক ফল দিয়ে তৈরি, কর্পূরের গন্ধবিশিষ্ট শরবত। আনারের রস দিয়ে তৈরি পানীয়ও খুবই শক্তিবর্ধক। খুব ভারি খাবার কিংবা এমন কোনো খাবার যার ফলে দশা সৃষ্টি হতে পারে তা খাবার পর হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যও বিভিন্ন পানীয় বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে ঠান্ডা ও গরম পানি ছাড়াও, মুগ ডালের তৈরি পানীয়, কিংবা টক ফলের রস, টক ভাতের জাউ, দুধ। 

আয়ুর্বেদে রসুনও বিবেচিত হয় সর্বরোগনিরামক খাদ্য উপাদান হিসেবে। এতে চর্মরোগ, রুচিহীনতা, উদরাময়, কাশি, শীর্ণতা, কুষ্ঠরোগ, হজমের দুর্বলতা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, যক্ষ্মা, বাতের ব্যথা, পক্ষাঘাতগ্রস্ততা, মূত্ররোগ, কৃমিরোগ, মৃগিরোগ ইত্যাদি সবকিছুই দূর হয়। 

রসুন মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে রোস্ট করা যেতে পারে। এছাড়া ঠান্ডা আচারমিশ্রিত, মসলাযুক্ত মাংসের সঙ্গে; ঘি ও বার্লির সঙ্গে; ভাতের মাড়ের পানি ও ভিনেগারের সঙ্গে; ময়দা মাখানো মাংসের স্যুপের সঙ্গে; কিংবা মুগ ডাল, সবুজ ভেষজ, সুগন্ধী মসলা ও লবণ ইত্যাদির সঙ্গে মেশানো যেতে পারে।

শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই হয় না, খাওয়ার কিছু নিয়মও মেনে চলা আবশ্যক। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য চরক কিছু নিয়মের কথা জানিয়ে গেছেন। যেমন : একই সময় একই খাবার প্রচুর পরিমাণে, বা একই ধরনের একাধিক স্বাদের খাবার খাওয়া যাবে না। আবার একই সঙ্গে অনেক ধরনের স্বাদের খাবারও খাওয়া যাবে না। দিনে একবারই পূর্নাঙ্গ আহার করতে হবে। রুটি পরিহার করতে হবে, কেননা সেটি সহজপাচ্য নয়। কিন্তু যদি খেতেই হয়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি পান করতে হবে। ভারি খাবারের কেবল অর্ধেক অংশ খেতে হবে, তবে হালকা খাবার যত খুশি খাওয়া যাবে। এমন একাধিক খাবার খাওয়া যাবে না, যেগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়; যেমন মাছ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার। 

এছাড়া খাওয়ার অন্যান্য নিয়মের মধ্যে রয়েছে :

  • আগেরবার খাওয়া খাবার পুরোপুরি হজম হওয়ার পরই নতুন করে খেতে হবে, যেন নতুন খাওয়া খাবারগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পায়;
  • পছন্দের জায়গায় বসে খেতে হবে, অথবা সঙ্গী হিসেবে পছন্দের মানুষদের নিয়ে খেতে হবে, যেন খাওয়ার সময় মন বিষণ্ণ না থাকে
  • খুব দ্রুতগতিতে খাওয়া যাবে না, আবার অলসভাবেও খাওয়া যাবে না, খাবারের পরিমিত গতি নির্ভর করবে খাবারের স্বাদ ও মানের উপর
  • মনোযোগ দিয়ে খেতে হবে, খাওয়ার সময় হাসাহাসি করা বা কথা বলা যাবে না
  • যখন ক্ষুধা লাগেনি তখন খাওয়া যাবে না, আবার ক্ষুধা লাগলে না খেয়ে থাকা যাবে না
  • রাগান্বিত, বিষণ্ণ বা মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত, দুঃখিত অবস্থায় খাওয়া যাবে না
  • দুটি পূর্ণ আহারের মাঝে যথাসম্ভব লম্বা বিরতি দিতে হবে
  • সম্ভব হলে সবসময় পূর্বমুখী হয়ে বসে খেতে হবে
  • শুধু একার জন্য রান্না করা যাবে না, কেননা খাবার হলো এমন এক উপহার যা সকলের প্রাপ্য
  • পাঁচটি ইন্দ্রিয়কেই খাওয়ার সময় কাজে লাগাতে হবে : খাবারের দিকে তাকিয়ে এর চেহারা উপভোগ করতে হবে, খাবারের সুঘ্রাণ নিতে হবে, খাবারের শব্দ শুনতে হবে (বিশেষত রান্নার সময়), হাত দিয়ে খেতে হবে খাবারকে স্পর্শ করার জন্য, খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণভাবে নিতে যত বেশিবার সম্ভব একটি খাবারের টুকরোকে চিবাতে হবে
  • খাওয়া শেষে হজমকে সহজ করতে অন্তত একশো কদম হাঁটতে হবে
  • সূর্যাস্তের পর ভারি বা কফ-উৎপাদক খাবার যেমন দই, তিল প্রভৃতি খাওয়া যাবে না, এবং ঘুমানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে কিছুই খাওয়া যাবে না
  • কখনো খাবার নষ্ট করা যাবে না। 

খাবার যে খায় তার মাঝে প্রাণশক্তি সৃষ্টি করে, তাই খাবারকে নিজেকেও সবসময় ‘জীবন্ত’ রাখতে হবে। কাঁচা খাবার রান্না খাবারের চেয়ে বেশি জীবন্ত থাকে। তাই যেসব খাবার কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলো কাঁচাই খেতে হবে। আবার খুব বেশি বা কম রান্না করে ফেলা খাবার, পুড়ে যাওয়া খাবার, বাজে স্বাদের খাবার, বাসি হয়ে যাওয়া খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। অবশিষ্ট খাবার যত দ্রুত সম্ভব জ্বাল দিতে বা গরম করতে হবে।

ভারতীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, কোন ধরনের পাত্রে খাবার রান্না করা হচ্ছে তা খাবারের গুণগত মানকে প্রভাবিত করে। তাই রূপা বা সোনা-কাসারর পাত্র বিবেচিত হয় শ্রেষ্ঠ হিসেবে, কেননা এসব উপাদান অপ্রতিক্রিয়াশীল ও ‘বিশুদ্ধ’। এছাড়া সুশ্রুতের মতে, খাবার একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুযায়ী খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার সবার আগে খেতে হবে, এরপর টক বা নোনতা খাবার, এবং সবশেষে ঝাল বা কটুস্বাদের খাবার।

– আয়ুর্বেদে রসুনও বিবেচিত হয় সর্বরোগনিরামক খাদ্য উপাদান হিসেবে ।

এছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় বিশ্বাস এই যে, সকল খাবারেরই শরীরকে উত্তপ্ত বা শীতল করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে কোন খাবার গরম আর কোন খাবার ঠান্ডা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন : দক্ষিণ ভারতে গমকে গরম খাবার মনে করা হয়, অথচ উত্তরে মনে করা হয় কম গরম। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে অধিকাংশ ডালকেই ঠান্ডা মনে করা হয়, কিন্তু উত্তরে মনে করা হয় গরম। পেঁপেকে দক্ষিণ ভারতে অত্যধিক গরম মনে করা হলেও, উত্তরে তা মনে করা হয় না। প্রায় সকল জায়গাতেই বেশিরভাগ মসলাকে গরম মনে করা হয়, কিন্তু মৌরি বা জিরাকে মনে করা হয় ঠান্ডা। কিছু খাবারের সংমিশ্রণকে মনে করা হয় স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর, যেমন মাছ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার। আবার কিছু খাবারের সংমিশ্রণকে মনে করা হয় উপকারী, যেমন আম ও দুধ।

গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা খাবার এবং শীতকালে গরম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আবার নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অবস্থায়, যেমন ঠান্ডা লাগলে বা গর্ভাবস্থায়, খাবারের আলাদা নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়। তবে এই বিধিনিষেধও আবার অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। যেমন : কিছু জায়গায় গর্ভাবস্থায় ঠান্ডা খাবার খেতে মানা করা হয়, কারণ ঠান্ডা খাবার খেলে নাকি গর্ভের সন্তানও ঠান্ডা হয়ে যাবে (অর্থাৎ মারা যাবে)। আবার কোথাও কোথাও গর্ভাবস্থায় গরম খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ, কেননা তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে। সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।