Home সোশ্যাল মিডিয়া তিউনিসিয়া থেকেও আরব বসন্তের আমেজ ফুরিয়ে গেলো

তিউনিসিয়া থেকেও আরব বসন্তের আমেজ ফুরিয়ে গেলো

আরব বসন্তের প্রথম স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর পরের দশকে আজ সামাজিক মাধ্যম হয়ে উঠেছে নানাবিধ অধিকার ও মতচর্চার অঙ্গন। ছবি- টাইমস।

অপ্রত্যাশিত ছিল কি! তবে এই দুঃসংবাদে কেউ কেউ বেজায় খুশি। যেমন লিবিয়াতে হাফতারপন্থীরা, মিসরে সিসিপন্থীরা, সৌদি-ইমারাতে মাদখালিরা; এবং পুরো আরবে মোটামুটি সেক্যুলাররা।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ফেসবুকে সক্রিয় বাংলাদেশী সেক্যুলারদের এটা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নাই। তবে দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থীরাই খুশী। তাদের কথা হচ্ছে, ‘আগেই কইছিলাম, এত উদারতা দেখাইও না। এখন বুঝলা তো? হুঁম!”

আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, মুহাম্মাদ মুরসির মতো কিছুটা কট্টরপন্থা বা রশিদ ঘান্নুশির মতো উদারপন্থাই তাদের সরকার পতনের একমাত্র কারণ না। আর শুধু ইসলামপন্থীদেরই পতন হয় না। সরকার পতনের পেছনে অনেক, অনেক, অনেক কারণ থাকে!

মুয়াম্মর গাদ্দাফির মতো সেক্যুলার, কট্টর অ্যামেরিকা বিরোধী নেতারও পতন হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন যখন প্রো অ্যামেরিকান ছিল, তখনও তাঁর উপর বম্বিং হয়েছে, এরপর যখন অ্যামেরিকা বিরোধী হয়েছে, তখনও তাঁর পতন ঘটেছে।

হোসনি মোবারকের মতো ইসরায়েলপন্থী আর বেন-আলির মতো ফ্রান্সপন্থী সেক্যুলার শাসকদেরও পতন ঘটেছে। সুতরাং সাধারণীকরণের কোনো উপায় নেই যে, এই পন্থী হলে টিকে থাকা যাবে, আর ওই পন্থী হলে পতন ঘটবে।

আরব বসন্তের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মোটাদাগে দুইটা ব্লকের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। একদিকে আছে প্রো-রেভোল্যুশনারি, প্রো-ডেমোক্রেসি, মডারেট ইসলামিস্ট ফোর্সেস, সাপোর্টেড বাই টার্কি অ্যান্ড কাতার। আর অন্যদিকে আছে কাউন্টার রেভোল্যুশনারি, প্রো-মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ, সাপোর্টেড বাই ওল্ড গার্ডস, মাদখালি সালাফিজ অ্যান্ড সাউদি-ইমারাতি গভর্নমেন্ট।

মিসর, লিবিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া— প্রতিটা দেশেই একই সমীকরণ। এতে কে কট্টর, কে উদার, সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। নির্ভর করেছে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর; সেই দেশের গুরুত্ব কতটুকু, সেখানে ব্যাকারদের স্বার্থ কতটুকু, সেই দেশের মিলিটারি পাওয়ার স্ট্রাকচার কীরকম, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সাথে আরেকটি বিষয়টি আছে, সরকারের পক্ষে পাবলিক সাপোর্ট কীরকম।

দেখেন, মিসরে এবং তিউনিসিয়া উভয় দেশেই যা হয়েছে, তা পরিষ্কার ক্যু। তারপরেও এই ক্যু ঘটনার জন্য তাদের কিছু অজুহাত দরকার পড়েছে। মিসরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মুহাম্মাদ মুরসির বিরুদ্ধে মাঠে নামার পরেই আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সেই সুযোগ পেয়েছে। তিউনিসিয়ায় সরকার কোভিড নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পরেই প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ ক্যু’র সুযোগ নিয়েছে।

লক্ষণীয়, তিউনিসিয়ার ক্যু’র পরিকল্পনা আরও আগেই হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সেটা বাস্তবায়ন করেছে তখন, যখন কোভিড সিচুয়েশনের ভয়াবহ অবনতির পর জনরোষ তীব্র হয়ে উঠে।

আরও পড়তে পারেন-

সুতরাং রশিদ ঘান্নুশি যদি আরও উদার হতো বা আরও কট্টর হতো, তাহলেও আন নাহদা দলটি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারত— এরকম কোনো লক্ষণ নাই। বরং তারা যদি আরও দক্ষ এবং যোগ্য হোত, যদি আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকত, যদি দেশটার পাওয়ার স্ট্রাকচার ভিন্ন হতো, তাহলে হয়তো তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা ফুরিয়ে যেতো না। সেক্ষেত্রে হয়তো ক্যু’র ঘোষণার পরে তুরস্কের মতো জনগণ রাস্তায় নেমে এসে তা ব্যর্থ করে দিতো।

কাজেই টিকে থাকার জন্য আরও উদার হওয়া বা আরও কট্টর হওয়া না, বরং আমাদের সামনে সফল উদাহরণ এখন পর্যন্ত একটাই – সুলতান রজব তাইয়্যেব এরদোগানের মতো হাফ সেক্যুলার, হাফ ইসলামিস্ট, সতর্ক ও দক্ষ পলিটিশিয়ান হওয়া। পছন্দ করেন আর না করেন, রাজনীতিক হিসেবে এরদোগানের মতো যোগ্য নেতা যে শত বছরে একজন জন্মায়, এটা স্বীকার না করে আপনার উপায় নাই।

তবে এরদোগানও একদিনে তৈরি হয়নি। একাধিকবার কট্টর-সেক্যুলার সামরিক শাসনের পরই এরদোগানের আবির্ভাব ঘটেছে। মিসর বা তিউনিসিয়া এখনও সেই স্টেজ অতিক্রম করেনি। তাই আপাতত তাদের সরকারের পতন খুব একটা অপ্রত্যাশিতও না।

তবে সব পতন, বা সব বিপ্লবের ব্যর্থতা কিন্তু একরকম না। লিবিয়াতে বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে দেশটা কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে— রাষ্ট্রের প্রতিটা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে, সোশ্যাল ফ্যাব্রিক (সামাজিক বুনন বা গাঁথুনি) নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।

মিসরের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে সত্য, ব্রুটাল ডিক্টেটরশিপ (পাশবিক বা নিষ্ঠুর স্বৈরাচার) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ইনস্টিটিউশনগুলো এখনও টিকে আছে। ইকোনমি ধীরে ধীরে রিকভার করছে। অবস্থা লিবিয়ার মতো না, ১০ অথবা ১৫ বা ২০ বছর পরে মিসরে নাটকিয় ভাবে আবারও পরিবর্তন আসতে পারে!

তিউনিসিয়ার ক্যু’র চরিত্রটা যদিও এখনও স্পষ্ট রূপ নেয়নি, শেষ পর্যন্ত সেখানে যদি মিসরের মতো অবস্থাও হয়, তারপরেও সেটা এই তিন দেশের (লিবিয়া সহ) মধ্যে উত্তম এই কারণে যে, এখানে পরিবর্তনটা ঘটেছে বিনা রক্তপাতে। রশিদ ঘানুশীর উদারপন্থার যদি কোনো ভালো দিক থেকে থাকে, এটা তার একটা।

— মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা, জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।