Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কোভিড সংক্রমণ কমাতে নীল সার্জিক্যাল মাস্কের কার্যকারিতা মাত্র ১০ শতাংশ

কোভিড সংক্রমণ কমাতে নীল সার্জিক্যাল মাস্কের কার্যকারিতা মাত্র ১০ শতাংশ

করোনাভাইরাস মহামারির সময় ব্যবহৃত বেশিরভাগ নীলরঙা সার্জিক্যাল মাস্কই মানুষকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখেতে সাহায্য করে না বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু পরিচালিত গবেষণাটিতে দেখা গেছে, এন৯৫ ও কেএন৯৫ মাস্কগুলো অ্যারোসলের কণা ধারণ করতে বেশ সক্ষম। কিন্তু জনপ্রিয় নীলরঙা ও কাপড়ের মাস্কগুলো এক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ কার্যকর। এসব মাস্কে ঠিকভাবে ব্যবহারকারীর মুখ ঢেকে থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয়টির মেকানিক্যাল অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক সেরি ইয়ারুসেভিচ এক বিবৃতিতে জানান, ‘একটি কক্ষে থাকা অবস্থায় সুরক্ষার জন্য মুখ ঢেকে রাখার কোনো বিকল্প নেই। তবে অ্যারোসল কণা ছড়ানো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাস্কের কার্যকারিতার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে।’

ইয়ারুসেভিচ ও তার দল জানায়, অনেকেই এমনসব মাস্ক ব্যবহার করেন, যেগুলো তাদের মুখের আকৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। এর ফলে মাস্ক পরিধানকারির মুখ ও কাপড়ের মাস্কের মাঝের ফাঁকা জায়গা থেকে অ্যারোসল কণা সহজেই বেরিয়ে আসার ঝুঁকি থাকে। এতে জনবহুল স্থানে সংক্রমণ বাড়তে পারে।

তবে কার্যকর এন৯৫ মাস্কগুলো পরিধানকারির মুখে শক্তভাবে আটকে থাকে। এ জাতীয় মাস্ক প্রায় ৫০ শতাংশ অ্যারোসল কণা আটকে রাখতে সক্ষম, এবং বাকি অর্ধেক কণা ব্যবহারকারীর মাথার ওপরের দিকে উঠে যায়।

ইয়ারুসেভিচ বলেন, ‘এসব তথ্যের বেশিরভাগই সাধারণ জ্ঞানের মতো। এন৯৫ মাস্কগুলো বেশ ভালো কাজ করে বলে মেডিকেল অনুশীলনকারীরা এটি ব্যবহার করেন। তবে এ বিষয়ে পরিমিত সংখ্যা এবং যথোপযুক্ত বিশ্লেষণই আমাদের এ গবেষণার সার্থকতা।’

তার দল আরও উল্লেখ করে, উচ্চমানের মাস্ক যে হারে সুরক্ষা দেয়, তা পরিমিত পরিমাণে ভেন্টিলেশনে পাওয়া সুরক্ষার হারের প্রায় সমান।

এদিকে, মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রাক্তন কোভিড সংক্রান্ত উপদেষ্টা ও শীর্ষ মহামারি বিশেষজ্ঞরা মাস্কের ব্যাপারে আমেরিকানদেরকে সতর্ক করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, মানুষের ব্যবহৃত কাপড়ের তৈরি বেশিরভাগ মাস্কই তেমন কার্যকর নয়। সবার এখন এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন বলে সিএনএন’কে তারা জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিস রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মাইকেল ওস্টারহোম বলেন, ‘আমরা খুবই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে রয়েছি। আমরা সত্যিই দেশকে এমন এক বিভ্রান্তিকর অবস্থানে নিয়ে এসেছি, যে, এখন মূল বিষয়, অর্থাৎ ভ্যাকসিন থেকে সরে যাচ্ছি।’

‘মাস্কিং’ শব্দটি নিয়ে তার বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চাই যেন সবাই মাস্কিং শব্দটির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসে। এ শব্দ আপনাকে এমন ধারণা দেবে, যেন মুখে যা-ই ব্যবহার করুন, তাতেই কাজ হবে। অথচ এখন আমরা জানি, মানুষের ব্যবহৃত বেশিরভাগ মাস্কই তাদেরকে বাইরে থেকে বা মাস্কের ভেতর থেকে সুরক্ষা দিতে তেমন কার্যকর নয়।’

এদিকে মাস্ক গাইডলাইন বিষয়ে বিভ্রান্তকর বক্তব্য দেওয়ার কারণে সমালোচিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন- সিডিসি। তবে শহর ও রাজ্যগুলোর যথাযথ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নীতি সংশোধনের আগে তাদের তথ্য-প্রমাণ দেখা প্রয়োজন।

আরও পড়তে পারেন-

এ বিষয়ে ফেডেরাল অফিসিয়ালরা জানান, ভ্যাকসিন নেওয়া লোকেরা কোভিডে সংক্রমিত হলে তাদের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়াও সম্ভব বলে দেখা গেছে বেশ কিছু অপ্রকাশিত ডেটায়। ফলে উচ্চ সংক্রমণের অঞ্চলগুলোতে সবাইকে বাড়ির ভেতরেও মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এদিকে, এই পরিস্থিতিতেই ক্লাসরুমে মাস্কের প্রয়োজনীয়তা তুলে দেওয়ার আদেশ দেয় ফ্লোরিডা। অবশ্য গত শুক্রবার গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

বলে রাখা ভালো, গত মঙ্গলবার অ্যাবটের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবু এ অবস্থায়ও তিনি ফ্লোরিডার আরেক গভর্নর রন ডেসান্টিসের সঙ্গে একজোট হয়ে অ্যান্টি-মাস্ক চার্জের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে, এমন সময় টেক্সাসেও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা বোর্ড ও স্থানীয় সরকার কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় ভ্যাকসিনের জন্য কম বয়সীদের মাস্ক পরা উচিত বলে জানান তারা।

টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট হেলথ সার্ভিসেস জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত ১৯০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি প্রায় ১৯ হাজার নতুন কেস নিশ্চিত করেছে টেক্সাস। এদিকে, ফ্লোরিডায় এ সপ্তাহে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি; সেখানে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১৫০০ জন।

এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি টেক্সাসের মতো শহরগুলো নিয়ে ‘খুবই চিন্তিত’। ফ্লোরিডার স্কুলগুলোতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তার এ বক্তব্যে সেখানকার স্থানীয় কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতে আরও সতর্ক হয়েছেন।

ইতোমধ্যেই ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন রাজ্য এবং শহরগুলোর নেতারা ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, কেনটাকি এবং নিউ জার্সিসহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া অঞ্চলগুলোতে মাস্ক ও ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।

ওয়াশিংটনের স্কুলগুলোর বাসচালক ও দারোয়ানসহ সব কর্মকর্তার জন্য ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করেছেন সেখানকার গভর্নর জে ইন্সলি। এছাড়া, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় আমেরিকানদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গত বুধবার বুস্টার ডোজের ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তারা।

বাইডেন ইতোমধ্যেই ফেডারাল কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং নার্সসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করেছেন। এছাড়া যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের জন্য ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করেছে এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করছে, তাদের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

  • সূত্র: ডেইলি মেইল

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।