Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হওয়া বংশানুক্রমিক রোগ নয়!

বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হওয়া বংশানুক্রমিক রোগ নয়!

আমাদের চারপাশেই আমরা দেখেছি অনেক বাচ্চার বয়সের সাথে সাথে বুদ্ধির বিকাশ ঠিকঠাক হয় না। জনসংখ্যার ১-২ শতাংশের মধ্যে এই বৌদ্ধিক অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়। এই ধরণের বাচ্চারা বড় হতে থাকলেও নতুন কিছু শিখতে বা বুঝতে অক্ষম হয় বা খুব কম বোঝে নতুবা সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি সময় নেয়। কারো কারো ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য আজীবন অন্যের সাহায্যের দরকার পড়ে। এই বৌদ্ধিক অক্ষমতার বিভিন্ন কারণ আছে এবং এতদিন মনে করা হত এটা জিন বাহিতও হতে পারে। সম্প্রতি হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ফিনল্যান্ডের কিছু পরিবার এবং তাদের সদস্যদের উপর একটি গবেষণা করেন। এই গবেষণায় প্রকাশ পায় যে বৌদ্ধিক অক্ষমতা জিনবাহিত নয়। তাই কোনো বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশজনিত সমস্যা হলেও, তার পরবর্তী ভাই-বোনেরা স্বাভাবিক বাচ্চার মতই জন্মগ্রহণ করবে। গত সপ্তাহে তাদের এই গবেষণা Human Genetics জার্নালে প্রকাশিত হল।

বুদ্ধির বিকাশ সংক্রান্ত এই গবেষণার অনুপ্রেরণা কী?

ফিনল্যান্ডের মানুষের মধ্যে একটি জিনের কারণে অনেক উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দুরারোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। জিনের এই ত্রুটিটি ‘founder vriants’ নামে পরিচিত এবং এর জন্য প্রায় ৪০ রকমের রোগকে এখনও অব্দি শনাক্ত করা গেছে। জিন শনাক্তকরণ কোনো রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরী করার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ। তাই এই ধরণের গবেষণা সেখানকার মানুষজনদের জন্য ভীষণই জরুরি। ভ্রূণের বিকাশের সময়ে জিনগত ত্রুটির কারণে ফিনল্যান্ডের মানুষের মধ্যে বৌদ্ধিক অক্ষমতা দেখা যায় বলে ধারণা করা হত।

আরও পড়তে পারেন-

প্রায় ২৫০০ জিন মানুষের বুদ্ধির বিকাশের সাথে জড়িত, যার অর্ধেককে এখনও অব্দি নিশ্চিত ভাবে চিহ্নিত করা যায় নি। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে এখন জিনের পূর্ণ ক্রমবিন্যাস সম্ভব হওয়ায় বৌদ্ধিক অক্ষমতার নির্ণায়ক পরীক্ষা আরও নিখুঁত ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি তথাকথিত অনেক পরীক্ষাতে এড়িয়ে গেলেও জিনের ক্রম বিন্যাস পরীক্ষা করে তা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। এই গবেষণার সাথে যুক্ত ডোসেন্ট ইরমা জারভেলা এর কথায়, “সমসাময়িক উন্নত জিনগত পরীক্ষার মাধ্যমে ফিনল্যান্ডের মানুষের জিনবাহিত রোগ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। ফিনল্যান্ডে এই ধরণের গবেষণা চিকিৎসাবিজ্ঞানে খুব তাৎপর্যপূর্ণ।”

বৌদ্ধিক অক্ষমতা এবং তার সাথে জিনের সম্পর্কের ব্যাপারে কী জানা গেল এই গবেষণায়?

এই গবেষণার জন্য খুঁজে নেয়া হয়েছিল ফিনল্যান্ডের অনেকগুলি বৌদ্ধিক অক্ষমতা যুক্ত বাচ্চার পরিবার। এই গবেষণায় যতগুলি পরিবার অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের মধ্যে ৬৪% এর ক্ষেত্রে দেখা যায়, দায়ী জিনটিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। মোট ৭৫% ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রধানত ভ্রূণের গঠনের সময়ে জিনের ত্রুটি এই কারণে দায়ী এবং জিনগত এই ত্রুটি পিতা-মাতার মধ্যে অনুপস্থিত। আরও দেখা যায়, মাত্র এক চতুর্থাংশ পরিবারের ক্ষেত্রে জিনগত ত্রুটি বংশানুক্রমিক। বড়মাপের জিনগত ত্রুটি দেখা গেছে মাত্র ৮% ক্ষেত্রে। জারভেলা এর মতে, “আমাদের গবেষণায় প্রমাণ হয় কোনো পরিবারের পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে জিনগত ত্রুটির কারণে বৌদ্ধিক অক্ষমতার প্রকাশের সম্ভাবনা খুব কম।”

এই গবেষণায় আরও প্রকাশ যে জিনগত কারণে বাহিত হওয়া রোগ মাত্র ৫% পরিবারের ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায়, যা বাকি গড় ইউরোপিয়ান ক্ষেত্রের সমান। জিনের ক্রমবিন্যাস দ্বারা জিনের গঠনগত ত্রুটি নির্ণায়ক পরীক্ষা শুধু যে খুব দ্রুত হয়েছে তাইই নয়, তাড়াতাড়ি নির্ণয়ের ফলে পরিবার গুলির চিন্তা নিরসন হয়, আবার স্বাস্থ্য খাতেও খরচ কমে। গবেষণায় নয়টি নতুন জিন শনাক্ত করা গেছে যাদের ত্রুটির ফলে বৌদ্ধিক অক্ষমতা দেখা দিতে পারে, এগুলির মধ্যে কয়েকটি বেশ বিরল। এই জিন গুলি নিয়ে আরও গবেষণা চলছে এবং গবেষকদের ধারণা এগুলোর মধ্যে একটি একেবারেই নতুন। এই জিনটি ফিনল্যান্ডের মানুষদের মধ্যে বরাবর উপস্থিতও রয়েছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।