Home লাইফ স্টাইল চাকরি ছাড়ার আগে কী করবেন: হার্ভার্ডের ৭ পরামর্শ

চাকরি ছাড়ার আগে কী করবেন: হার্ভার্ডের ৭ পরামর্শ

গত কয়েক মাসে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনার এ সময়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই লোকজন চাকরি ছাড়ার পায়তারা করছেন। বৈশ্বিক এই মহামারি আমাদের অনেককেই নিজেদের ক্যারিয়ারের গতিবিধি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে এবং শক্তিশালী চাকরির বাজার আমাদেরকে চাকরি পরিবর্তন করার স্বাধীনতাও দিচ্ছে। 

চাকরি ছাড়বেন কি ছাড়বেন না, ছাড়লেও কীভাবে ছাড়বেন; এরকম দ্বিধায় থাকা লাখো জনতার একজন যদি আপনিও হয়ে থাকেন, তাহলে চাকরি ছাড়ার সবচেয়ে ভালো তরিকা কোনটি হতে পারে তা নিয়ে ভাবছেন নিশ্চয়ই। এই বিষয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করা হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ আপনাকে কিছু উপায় বাতলে দিচ্ছে। 

প্রথম ধাপটি অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আপনি কি সত্যিই চাকরি ছাড়ার জন্য প্রস্তুত?

কেন চাকরি ছাড়তে চাচ্ছেন, সে ব্যাপারে চিন্তা করুন একদফা। হয়তো বর্তমান চাকরিতে বিরক্তবোধ করছেন, কিংবা যার অধীনে কাজ করছেন তাকে পছন্দ না, কিংবা আপনি মনে করছেন কোনো ভিন্ন পদে বা ভূমিকায় চাকরি নেওয়া উচিত আপনার, কিংবা হয়তো সব ছেড়ে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আপনি।

কীভাবে নিশ্চিত হবেন এটি আসলেই চলে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় কি না- 

নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন-

আমি কি সঠিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি?

আমি কি সঠিক পদে কর্মরত আছি?

আমার যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তার জন্য কি এই চাকরি যথাযথ?

এই তিন প্রশ্নের যেকোনো একটির উত্তরও যদি ‘না’ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে পারেন। তবে এর আগে বর্তমান প্রতিষ্ঠানকে একবার পুনঃমূল্যায়ন করে দেখুন। 

হয়তো প্রতিষ্ঠানে আপনার পছন্দের কর্মচারীরা চলে যাচ্ছে, বা প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি অনুরূপ কোন চাকরির খোঁজ করতে পারেন, এরচেয়ে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে।  

কিংবা হয়তো আপনার বর্তমান কর্মস্থলে শেখার এবং নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ নেই, বা আপনি এমন একজন বসের অধীনে কাজ করেন যিনি আপনার ক্যারিয়ারে বাধা সৃষ্টি করছেন। এক্ষেত্রে, আপনি বর্তমান কোম্পানির অন্য কোনো অংশে নিজেকে স্থানান্তরিত করতে পারেন। অথবা অনুরূপ কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারেন।  

এবং সবশেষে ভেবে দেখুন, ক্যারিয়ারের পরবর্তী পদক্ষেপটির জন্য আপনি আসলেই প্রস্তুত কিনা। উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিগত দক্ষতা, নিজ সেক্টর সম্বন্ধে জ্ঞান ও নেটওয়ার্কিং বাড়াতে থাকুন। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপ নিতে চাইলে তখন যথেষ্ট প্রস্তুত থাকবেন আপনি। 

আর চাকরি ছাড়ার নোটিশ দেওয়ার আগে বর্তমান কর্মস্থলে আপনার যে যে সমস্যা সেগুলো সমাধানযোগ্য কি না তা ভেবে দেখুন। এক্ষেত্রে আপনার সমস্যার কথা সরাসরি আপনার ম্যানেজারকে জানান। 

হতে পারে আপনি আপনার বর্তমান বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট না। কিংবা অফিসের কোন সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত আছে আপনার। ম্যানেজারকে জানানোর পর কোন ইতিবাচক জবাব নাও পেতে পারেন। তবু বলে দেখুন। সামান্য আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই নিশ্চয়ই।

আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা করে তবেই ছাড়বেন বর্তমান কর্মস্থল?

কিছু বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, যতক্ষণ না আপনি নতুন কোন জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন ততক্ষণ আপনার বর্তমান চাকরিটি ছাড়া উচিত না। এটি একটি ভাল পরামর্শ হলেও সবসময় মানা সম্ভব হয়ে উঠে না, বিশেষ করে যদি আপনি আপনার ধৈর্যের শেষপ্রান্তে থেকে থাকেন। 

যদি আপনার আর্থিক অবস্থা আপনাকে কিছু সময়ের জন্য বেকার থাকার অনুমতি দেয় (এই সময়কাল কতদিন হতে পারে, সেটি ভেবে নিবেন), তাহলে আপনি এই পরামর্শের বিরুদ্ধে যেতে পারেন। 

তবে দুই ক্ষেত্রে আপনি ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। প্রথমত, যদি আপনি বিশ্বাস করেন কর্মক্ষেত্রে অবৈধ বা অনৈতিক কিছু চলছে এবং এটি আপনার উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। দ্বিতীয়ত, যদি আপনি মনে করেন আপনার বর্তমান চাকরি আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

কাকে জানাবেন প্রথমে?

চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত যদি নিয়েই ফেলেন, তাহলে প্রথমেই আপনার ম্যানেজারকে অবহিত করুন।

আপনি কিছু ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে থাকতে পারেন, কিন্তু পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না এমন কাউকে এই গোপন কথা বলতে যাবেন না।

আরও পড়তে পারেন-

আপনি কেন চাকরি ছাড়ছেন সেটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাওয়ার আগেই আপনার বস এ ব্যাপারে জেনে যাক, সেটা নিশ্চয়ই চান না। আপনার বর্তমান বস বা ম্যানেজারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভালো না থাকলেও তাকেই আগে বলুন। কেননা, আপনার ভবিষ্যৎ নিয়োগকর্তারা আপনারা ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে আপনার পূর্ববর্তী ম্যানেজারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

কী কারণ দেখাবেন?

সরাসরি সত্য কারণটি বলে দেওয়াই শ্রেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সত্য আংশিক গোপন করতে পারেন।

যদি আপনার চাকরি ছাড়ার কারণ আপনার বস নিজে হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সেটা না জানানোই হিতকর। চাকরি ছাড়ার আগে বস আপনার সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করুক, এটা নিশ্চয়ই চান না।

আর যদি আপনার মনে হয় সমস্যা আপনার মধ্যেই ছিল, তাহলে নিজের ব্যর্থতা নিয়ে কথা না বলে সামনে কী করতে চান তার আশেপাশে আপনার যুক্তি তৈরি করুন। বলতে পারেন ভিন্ন কোন ভূমিকায় বা নতুন কোন শিল্পে কাজ খুঁজতে যাচ্ছেন আপনি। 

কত দিন আগে নোটিশ দিবেন?

আমাদের দেশে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানেই চাকরি ছাড়ার এক মাস আগে নোটিশ দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। তবে আপনি চাইলে পালাবদলে সাহায্য করার জন্য আরেকটু আগেও নোটিস দিতে পারেন। এবং আপনার স্থানে সুযোগ পাওয়া নতুন নিয়োগকে কিছুদিন সাহায্য করে যেতে পারেন।

শেষ কয়েক সপ্তাহ কী করবেন? 

নোটিশ দিয়ে দেওয়ার পর আপনার প্রাথমিক কাজ দুটো, আপনার প্রকল্প এবং দায়িত্বে সুষ্ঠু পালাবদলে সহায়তা করা এবং যেসব সহকর্মীর সাথে যোগাযোগ রাখতে চান তাদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা।

চাকরি ছাড়ার আগে আপনার বদলি কর্মকর্তাকে নিজের হাতেই খুঁজে বের করতে হতে পারে আপনার। অথবা, বর্তমান সহকর্মীদের কারো হাতে কর্তব্য ছেড়ে যেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার বসের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করুন কোন প্রকল্প কার হাতে দিবেন।

আপনি অবশ্যই চাইবেন চলে যাওয়ার পর আপনার প্রাক্তন বস এবং সহকর্মীরা আপনাকে একজন চিন্তাশীল এবং পেশাদার হিসেবে মনে রাখুক।

যোগাযোগ রাখুন

নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর হয়তো নতুন চ্যালেঞ্জের দিকেই পূর্ণ মনোযোগ দিবেন আপনি। তবে আপনার প্রাক্তন সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ হারাবেন না।

বিশ্বস্ত বন্ধু, সহকর্মী এবং উপদেষ্টাদের সাথে যোগাযোগ সবসময় উষ্ণ রাখা উচিত আপনার। আপনি হয়তো ভাল কাজ করে, বাস্তব ও অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে, অথবা মূল্যবান দক্ষতা অর্জন করে আপনার ক্যারিয়ার সাজিয়েছেন। সুতরাং আপনার জীবনের পূর্ববর্তী বছরগুলোর কোন মূল্য নেই, এই ভান ধরে সে সমস্ত অভিজ্ঞতাকে ফেলে দেবেন না।

নাটকীয় কায়দায় ‘আই কুইট’ বলে চাকরি ছাড়ার অনেক ভিডিও হয়তো দেখে থাকবেন ইন্টারনেটে। এসব ভিডিও মজার হলেও তেমন স্মার্ট কিন্তু না। শেষপর্যন্ত নিজের জন্য যেটা ভালো সেটাই করতে চাইবেন আপনি। একটি ইতিবাচক আবহ রেখে এবং পালাবদলে সাহায্য করে চাকরি ছাড়াটা যেমন আপনার পেশাদারিত্বের পরিচয় দিবে, তেমনি ভবিষ্যতের নেটওয়ার্কিংয়েও সাহায্য করবে।

  • সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।